১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে প্রধান শিক্ষকের ধর্ষণের ঘটনায় এলাকায় বিক্ষোভ

- ছবি : নয়া দিগন্ত

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আইন উদ্দিনকে দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

শনিবার দুপুরে জেলা শহরের পৌর সড়কের সামনে “নিরাপদ স্কুল গড়ো, শিশু ধর্ষণ বন্ধ করো, ধর্ষক মুক্ত সমাজ গড়ো” স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানবন্ধন কর্মসূচি।

এতে শিশু ছায়া, ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স, জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, নারী প্রগতি সংঘ, মহিলা পরিষদ, আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা, জনউদ্যোগ ও উদীচীর ব্যানারে নির্যাতিত পরিবারের সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।

এতে বক্তব্য রাখেন, সাহিত্য সমাজের সভাপতি কামরুজ্জামান চৌধুরী, নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক আলী আমজাদ খান, জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলুয়ারা বেগম, সামাকি সংগঠনের নেতৃ আলপনা বেগম, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাহেজা বেগম, পল্লব চক্রবর্তী, সমাজকর্মী মৃনালকান্তি চক্রবর্তী, শিশুছায়ার সম্পাদক তোফায়েল খান, চিলড্রেন টাস্কফোর্সের সাধারন সম্পাদক তানজিম আশরাফ রাতুল, ইয়ুথ গ্রুপের তৃপ্তি আক্তার প্রমুখ।

বক্তারা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল ও হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্যের সহযোগীতার কারণে পুলিশ এখনো অভিযুক্ত ধর্ষক প্রধান শিক্ষক আইন উদ্দিনকে গ্রেফতারে টালবাহানা করছে।

তাকে দ্রুত গ্রেফতারের জোর দাবি জানিয়ে তারা বলেন, অন্যথায় অবিলম্বে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। একই সাথে আসামির পক্ষে আইনি সহায়তার নামে পক্ষ না নেয়ার জন্য সকল আইনজীবীদের প্রতি আহবান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, বারহাট্টা উপজেলার হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইন উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নানান প্রলোভন, বেশি নম্বর প্রদান, পরীক্ষায় উত্তীর্ণের আশ্বাস, ভয়ভীতি প্রদান জিম্মি করে কৌশলে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, ধর্ষণসহ নানান অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। স্কুলের মেধাবী সুন্দরী ছাত্রীদের নানান প্রলোভন দেখিয়ে নিজ কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন। কম্পিউটারে কাজ করানোর অজুহাতে ও দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে শরীর ম্যাসেজসহ একাধিক শিক্ষার্থীকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে দিনের পর দিন অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। লোকলজ্জার ভয়ে ছাত্রীরা লজ্জাজনক বিষয়টি চেপে গেলেও একাধিক ছাত্রী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি স্কুলের বাথরুমে এক ছাত্রীকে ধর্ষণরত অবস্থায় অষ্টম শ্রেণীর আরেক ছাত্রী দেখে ফেলায় ওই ছাত্রীকেও বাথরুমে নিয়ে নির্যাতন চালান ওই প্রধান শিক্ষক। ওই ছাত্রীকে হুমকি দিয়ে বলা হয় এই ঘটনা জানাজানি হলে তাকে হত্যা করা হবে।

অষ্টম শ্রেণীর ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি তার অভিভাবককে জানানোর পর গত ৩ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ পেশ করা হয়। নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের থানায় মামলা করার জন্য পরামর্শ দেয়ার পর নির্যাতিত শিক্ষার্থী নিজেই বারহাট্টা থানায় লিখিত অভিযোগ পেশ করার পর অজ্ঞাত কারণে ওসি বদরুল আলম খান মামলা রেকর্ড না করে ফাইল চাপা দিয়ে রাখেন। শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিনের নির্দেশে গত ১০ জুন ওসি মামলা রেকর্ড করতে বাধ্য হন।

কিন্তু অভিযুক্ত আসামি প্রধান শিক্ষক আইন উদ্দিনকে গ্রেফতার না করে তালবাহানা করতে থাকেন। বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, একটি প্রভাবশালী মহল বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্য প্রধান শিক্ষককে নানানভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে ঘটনা তদন্তে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম খানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ১৬ জুন থেকে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নির্যাতিতা ছাত্রী এক সাক্ষাৎকারে জানায়, ওই প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন সময় একাকি তার কক্ষে ডেকে নিয়ে কাছে বসিয়ে আদর করার অজুহাতে শরীরে হাত বুলিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে টর্চার করতেন। বাথরুমে তাকে অপর এক ছাত্রীর সাথে আপত্তিকজনক অবস্থায় দেখে ফেলায় আমাকে তিনি নির্যাতন করেন এই বলে মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জোর দাবি জানিয়ে বলে আমি তার ফাঁসি চাই, যাতে আর কোন ছাত্রী নির্যাতিত না হয়।

বারহাট্টা থানার ওসি বদরুল আলম খান এ বিষয়ে নয়া দিগন্তেকে বলেন, হাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইন উদ্দিন অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে নির্যাতনের চেষ্টা চালান। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, আসামি হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেয়ার কারণে গ্রেফতার করা যাচ্ছেনা।


আরো সংবাদ



premium cement