২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গণধর্ষণ শেষে নার্স তানিয়া হত্যা: দেশ ছাড়ার চেষ্টায় ধর্ষক বোরহান ও আল আমিন!

নার্স তানিয়া হত্যার দুই আসামি ধর্ষক বোরহান ও আল আমিন - সংগৃহীত

স্বর্ণলতা পরিবহনের চলন্ত বাসে কটিয়াদীর মেয়ে নার্স শাহিনূর আক্তার তানিয়াকে গণধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও ধরা পড়েনি ধর্ষক বোরহান। তাকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলেও এখনো অধরা রয়ে গেছে তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যাকালেণ্ডর অন্যতম এই আসামি। একইভাবে অধরা রয়ে গেছে বাসের সুপারভাইজার আল আমিন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র অবশ্য বলছে, তাদের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড বোরহান। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে অভিযানের পরও তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত বোরহান কোথায় আছে, তা পুলিশ বলতে পারছে না। তবে তাকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, বোরহানের বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বীর উজুলী গ্রামে। তার বাবার নাম মফিজ উদ্দিন ওরফে দুলাল মিয়া। তবে ওই গ্রামে তার পরিবার-পরিজন কেউ থাকে না। বোরহান বিবাহিত হলেও তার স্ত্রী গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি আরবে আছেন। এ কারণে বাসে বাসেই কাটতো বোরহানের জীবন। ফলে ছন্নছাড়া স্বভাবের বোরহানের সাথে স্বজনদেরও কোন যোগাযোগ হচ্ছে না।

অন্যদিকে সুপারভাইজার আল আমিন গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার ভেঙ্গুরদিয়া গ্রামের ওয়াহিদুজ্জামানের ছেলে। 

এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট অন্য একটি সূত্রের ধারণা, বোরহান হয়তো দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছে। তবে পুলিশ এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকায় বোরহান দেশ ছেড়ে পালাতে পারবে না বলেই তারা মনে করছেন।

এদিকে বোরহানের মতোই আল আমিনের খোঁজে তৎপর রয়েছে পুলিশ। ধূর্ত আল আমিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘটনার পর পরই আত্মগোপনে যায়। এরপর থেকে তার আর কোন খোঁজ মিলছে না। তবে পুলিশ বলছে, বোরহান ও আল আমিন যেখানেই থাকুক না কেন, তারা ধরা পড়বেই। তারা পুলিশের চোখ এড়িয়ে বেশিদিন থাকতে পারবে না।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো: মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) জানান, বোরহান দেশ থেকে পালাতে পারে এ চিন্তা থেকে দেশের বিমানবন্দরগুলোর ইমিগ্রেশনে আগে থেকেই রেড এলার্ট দেয়া আছে। ধর্ষক বোরহান সীমান্ত এলাকা দিয়ে যেন দেশের বাইরে পালাতে না পারে এ ব্যাপারেও সতর্কতা আছে।

খালেদ জানান, বোরহান ও আল আমিনকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে তারা সর্বসাধারণের সহযোগিতা কামনা করছেন। এই দুইজনকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কেউ সহযোগিতা করলে তাকে পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানান জেলার এই পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপারের বিশ্বাস, পুলিশ ও জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধর্ষক বোরহান ও সুপারভাইজার আল আমিন সহসাই ধরা পড়বে।

নিহত শাহিনুর আক্তার তানিয়া কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকার ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কল্যাণপুর শাখায় সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মস্থল ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার জন্য গত ৬ মে বিকালে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৪২৭৪) ওঠেছিলেন শাহিনুর আক্তার তানিয়া। বাড়ির নিকটতম এলাকা বাজিতপুর উপজেলার বিলপাড় জামতলীতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন। গণধর্ষণ শেষে তাকে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। পরে স্বর্ণলতা পরিবহনের কটিয়াদীর কাউন্টার মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম রফিক ও সুপারভাইজার আল আমিন নার্স তানিয়ার নিথর দেহ কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তাকে।

তানিয়া হত্যাকাণ্ডের পরদিন ৭ মে রাতে নিহত শাহিনুর আক্তার তানিয়ার পিতা মো. গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে বাসের চালক নূরুজ্জামান নূরু, হেলপার লালন মিয়া, হাসপাতালে তানিয়ার মরদেহ আনয়নকারী আল আমিন এবং পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন এই চারজনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করে বাজিতপুর থানায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার এজাহারভূক্ত চার আসামির মধ্যে বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু ও হেলপার মো. লালন মিয়া এই দু’জন ছাড়াও আসামি কটিয়াদীর কাউন্টার মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম রফিক, লাইনম্যান মো. খোকন মিয়া ও পিরিজপুর কাউন্টার মাস্টার মো. বকুল মিয়া ওরফে ল্যাংড়া বকুলকে ঘটনার রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ।

পরে গত ৮ই মে আদালত গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ আসামির প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮দিন করে রিমান্ড মঞ্জুরের পর ওইদিন তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু, বাসের হেলপার লালন মিয়া ও কটিয়াদীর কাউন্টার মাস্টার রফিকুল ইসলাম রফিক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু ও হেলপার লালন মিয়া জানায়, বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু, বাসের হেলপার লালন মিয়া এবং নূরুর খালাতো ভাই ও বাসটির অপর হেলপার বোরহান এই তিনজনে মিলে পালাক্রমে তানিয়াকে ধর্ষণ করে। তাদের মধ্যে প্রথম ধর্ষণকারী ছিলো বোরহান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সারোয়ার জাহান বলেন, বোরহান ও আল আমিনকে গ্রেপ্তারে চিরুনি অভিযান চলছে। কিন্তু তারা পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে অজ্ঞাতস্থানে আত্মগোপনে রয়েছে। তবে বোরহান ও আল আমিন পুলিশের জালে ধরা পড়বেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement