২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রেমের টানে চীনের তরুণী এখন নেত্রকোনায়

- ছবি : নয়া দিগন্ত

প্রেম মানে না কোন জাত, কূল, ধর্ম বা ভৌগলিক সীমারেখা। প্রেমের অদৃশ্য দুর্বার আকর্ষণে প্রেমিকের খোঁজে সকল বাঁধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে থাংহন নামের এক তরুণী প্রেমিকা সুদূর চীন থেকে বাংলাদেশের নেত্রকোনার সীমান্তবর্ত্তী কলমাকান্দা উপজেলায় ছুটে আসেন।

রোববার উপজেলার পোগলা ইউনয়নের গুতুরা গ্রামে খৃষ্টধর্মাবলম্বী চায়না কন্যা থাংহন ও মুসলিম বর জসীমের মধ্যে ইসলাম ধর্মানুযায়ী মহা ধুমধামের সাথে বিয়ে হয়ে গেল। উপজেলার গুতুরা গ্রামের ডাঃ সিরাজুল ইসলামের ছেলে জসীম (২৮)। তারা চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয় সন্তান। আর থাংহন (২৭) চীনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশের মোদানজিয়াং শহরের ওয়াং হুয়ানঝং ও পাং ইয়ুলিং দম্পতির একমাত্র সন্তান।

জসীমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জন্মসূত্রে চীনের নাগরিক থাংহন দুবাইয়ের একটি শপিংমলে তার খালার একটি ফার্মে চাকরি করতেন। একই ফার্মে জসীমেরও চাকরি হয়। আর সেখানে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রথমে ভাললাগা থেকে তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। মাঝে ছুটি কাটাতে প্রেমিক-প্রেমিকা উভয়ই নিজ নিজ দেশে চলে যান। ছুটি শেষে তারা আবারো দুবাইয়ের কর্মস্থলে ফিরে যান।

গত দুই বছরধরে তাদের মধ্যে প্রেম চলে আসছিল। প্রেমের এই সম্পর্ক থাংহনের খালা ও বাবা-মা জানার পর প্রথমে মেনে না নিলেও মেয়ের অনঢ় সিদ্ধান্ত ও সুখের কথা চিন্তা করে অপারগ হয়ে শেষে তারা মেনে নেন। বাঁধভাঙ্গা এই প্রেম সোনালি ফ্রেমে সুখের বন্ধনে স্থায়ী করে রাখতে থাংহন ও জসীম বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।

তারা বিয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দুবাই থেকে কেনাকাটা করে গত ঈদুল ফিতরের সপ্তাহখানেক আগে প্রেমিক-প্রেমিকা একসাথে দুবাইয়ের একটি ফ্লাইটে করে ঢাকায় অবতরণ করে গ্রামের বাড়ি কলমাকান্দায় চলে আসেন। তাদের আগমনের সংবাদ শোনে জসীমের বাবা-মা, ভাই, বোন, স্বজন ও এলাকাবাসী প্রেমিক-প্রেমিকাকে সাদরে বরণ করে নেন।

প্রেমের টানে চীনের মেয়ে বাংলাদেশের অজপাড়া গায়ে আসার সংবাদে আশপাশের গ্রামে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে থাংহনকে এক নজর দেখার জন্য ডাঃ সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে উৎসুক শিশু, নারী-পুরুষসহ নানা বয়সীর লোকজনের ভিড় জমাতে থাকেন।

রোববার উপজেলার গুতুরা গ্রামের বাড়িতে ইসলাম ধর্মানুযায়ী থাংহন ও জসীমের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এর আগে থাংহন খৃষ্টধর্ম ত্যাগ করে স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর তার নাম রাখা হয় ইবনাত ময়িরম ফাইজা। অত্যন্ত জাকজমকের সাথে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে কয়েকশ’ অতিথিকে দাওয়াত করা হলেও অসংখ্য লোক ভিড় জমান।

বিয়েতে আগত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন, সাবেক এমপি গোলাম রব্বানী, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাতি চন্দন বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন, কলমাকান্দা থানার ওসি মাজহারুল কবীরসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

প্রেমিক বর জসীম জানান, ‘নিজেকে এখন খুব সুখী মনে হচ্ছে। ফাইজা খুব ভাল মনের একজন মানুষ। সে বাব-মা, স্বজন ও দেশ ছেড়ে এই দেশে চলে আসবে তা আমি কখনও ভাবতে পারিনি। তার এই ত্যাগ অতুলনীয়। ফাইজার ইচ্ছানুযায়ী হানিমুনের জন্য আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে মাস খানেকের জন্য আমরা চীনে তার বাবা-মার’র বাড়িতে যাবো’।

ফাইজা বলেন, ‘হামার একন খুব্বই ভাল লাখচে। অ্যাই এম হ্যাপি’।

ডাঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ওদের সুখের কথা চিন্তা করে আমরা সবাই এই বিয়ে মেনে নিয়েছি। ওদের সুখই তো আমাদের সুখ। তাছাড়া ওই মেয়ে ত্যাগ স্বীকার করে সবকিছু ছেড়ে যেভাবে এই দেশে চলে আসলো তার মূল্যায়ন করা তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।


আরো সংবাদ



premium cement