২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘বেকার সময়ে প্রেম-বিয়ে, চাকরির পর সবই মিছে’

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও মহিদুল ইসলাম ওরফে নাদিম - নয়া দিগন্ত

তারা দুইজন চাকরি করেন পুলিশে। বেকার থাকতে প্রেম করে বিয়ে এবং সংসারও করেছেন। কিন্তু পুলিশে চাকরি হওয়ার পর ভুলে গেছেন সব। দুইজনই এখন তাদের স্ত্রীদেরকে আর চেনেন না। এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের শোলগাই ও ডৌহাখলা ইউনিয়নের পানাটি গ্রামে। ভূক্তভোগী দুই তরুণী স্ত্রীর মর্যাদা দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করে ও অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্যের বাড়িতে অনশন করেও কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ভূক্তভোগী ওই দুই তরুণীর বাড়ি গৌরীপুর উপজেলায়। দুইজনই স্থানীয় পৃথক দুইটি কলেজে পড়েন। এর মধ্যে একজনের নাম তানজিনা আক্তার বিউটি (২০)। তানজিনা ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার টিকুরী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

তানজিনা জানান, উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের শোলগাই গ্রামের মঞ্জুরুল হকের ছেলে পুলিশ সদস্য মহিদুল ইসলাম ওরফে নাদিমের সাথে চার বছর আগে তার পরিচয় হয়। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে মহিদুল প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করত। গত বছর নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখ মহিদুল তাদের বাড়িতে এসে তার সাথে রাত্রিযাপন করেন।

ঘটনাটি তার পরিবারের লোকজন জানার পর পরদিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যামান্য ব্যক্তিবর্গ ও মহিদুলের বাবার উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে পড়ানো হয়। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তাদের মিলনও হয়। এরপর তানজিনাকে স্ত্রী হিসেবে কিছুদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহিদুল চলে যান। এ বিয়ের প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ফুটেজ ও আদালতের এফিডেভিটের কপি রয়েছে তানজিনার কাছে।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি অভিযুক্ত মহিদুলের বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি হলে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। তার সঙ্গে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ অবস্থায় কূলকিনারা না পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চায় ওই তরুণীর পরিবার। পরে চেয়ারম্যান সালিসে মহিদুলকে হাজির করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে সর্বসম্মতিক্রমে রেজিস্ট্রার মূলে বিয়ে করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপর দীর্ঘদিন কেটে গেলেও তা করেননি মহিদুল।

পরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওই তরুণী নেত্রকোনা পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মহিদুল বর্তমানে নেত্রকোনা জেলার পুলিশ লাইনে কর্মরত আছেন।

এ বিষয়ে পুলিশ সদস্য মহিদুল ইসলাম নাদিম সাংবাদিকদের জানান, তিনি তানজিলা নামের ওই তরুণীকে চিনেন না। সে যেসব অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সে আমাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। নেত্রকোনা পুলিশ সুপার বরাবরে যে অভিযোগ করেছিল তানজিনা তা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

এছাড়া তার সাথে বিয়ের প্রমাণ হিসেবে নোটারী পাবলিকের যে এফিডেভিটের কপি দেখানো হচ্ছে তা ভূয়া বলে মন্তব্য করেন তিনি। নাদিম আরো বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এখন বিবাহিত।

ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জমান রিয়াদ জানান, কয়েকমাস আগে ওই তরুণীর (তানজিলা) বাবার বাড়ি টিকুরী গ্রামে এ ঘটনায় উভয় পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে সালিস হয়েছিল। সালিস-দরবারে ইসলামী রীতি অনুযায়ী মহিদুলের সঙ্গে তরুণীটির বিয়ে পড়ানো হয়। পরে তাদের বিয়েটি রেজিস্ট্রি করে নেয়ার কথা ছিল।

এদিকে ডৌহাখলা ইউনিয়নের পানাটি গ্রামের শামছুল হকের ছেলে পুলিশ সদস্য (পুলিশ নং-৫৪৩৯) জাহাঙ্গীর আলমের কাছে বিয়ের প্রলোভনে প্রতারণার শিকার হন রামগোলপুর ইউনিয়নের ধুরুয়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেমের মেয়ে খাজিদা আক্তার আঁখি (২১)। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীর এখন রাজধানীর উত্তরা থানায় কর্মরত আছেন বলে জানা যায়।

ভূক্তভোগী খাদিজা আক্তার জানান, ৬ বছর আগে জাহাঙ্গীরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। পরবর্তীতে তাদের পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আদালতে এফিডেভিট ও রেজিস্ট্রি কাবিন মূলে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা ময়মনসিংহ শহরে একটি ভাড়া বাসায় প্রায় ৩ মাস একসঙ্গে থাকেন। এরপর জাহাঙ্গীর তার পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে রাজি করানোর পর তাকে বউ হিসেবে ঘরে তুলে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

কিছুদিন পর ওই তরুণীকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জাহাঙ্গীর। দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা জানার পর জাহাঙ্গীরের নিকট স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করে ঘরে তুলে নেয়ার আকুতি জানান তিনি। এসময় জাহাঙ্গীর তাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে উল্টো তাকে নানা হুমকি প্রদান করেন।

এদিকে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে গত ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার খাদিজা নামের ওই তরুণী পানাটি গ্রামের শামছুল হকের ছেলে পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে বিষের বোতল হাতে নিয়ে অবস্থান করেন। ইতোমধ্যে স্ত্রীর মর্যাদার পাওয়ার দাবিতে ও স্বামীকে ফিরে পেতে খাদিজা আক্তার ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ ঘটনায় মন্তব্য জানতে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোন নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অপরপ্রান্ত থেকে কেউ রিসিভ করেননি।


আরো সংবাদ



premium cement