২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

যৌতুকের জন্য কিশোরী নববধূকে গলাটিপে হত্যা

নিহত নববধূ সাথী আক্তার - নয়া দিগন্ত

যে বয়সে তার স্কুলে লেখাপড়া করার কথা, সেই বয়সেই বিয়ে হয়েছিল তার। পারিবারিক দারিদ্র্যতার কারণে সেই বিয়েকে মেনে নিয়ে স্বামীর ঘরে গিয়েও সংসার করা হলো না তার। বিয়ের পর হাতের মেহেদী না মুছতেই যৌতুকলোভী মানুষরূপী পশুদের হাতে প্রাণ দিতে হলো তাকে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। নিহত নববধূর নাম সাথী আক্তার (১৪)।

এক লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে নববধূ সাথী আক্তারকে গলাটিপে হত্যা করে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন।এ ঘটনায় নিহত কিশোরী নববধূর বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে ৬জনকে আসামী করে মঙ্গলবার রাতে গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের ছয়বাড়িয়া গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী শারফুল ইসলামের (২৯) সাথে চরমছলন্দ জিরাতিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফের মেয়ে চরমছলন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সাথী আক্তারের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে হতদরিদ্র কৃষক আব্দুল লতিফ বিয়ের সময় বরপক্ষকে এক লাখ টাকা যৌতুক দেন।

কিন্তু বিয়ের পর দুই মাস যেতে না যেতেই স্বামী শারফুল ইসলাম ব্যবসার জন্য স্ত্রী সাথী আক্তারের কাছে আরও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না পেয়ে গত কয়েক দিন যাবত স্বামী শারফুল, শাশুড়ি জোসনা বেগম, ননদ নাছিমা ও সাবিনা ইয়াসমিন নববধূ সাথী আক্তারের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল।

এরপর গত রোববার পহেলা বৈশাখের রাতে যৌতুকের জন্য স্বামী শারফুল জোরপূর্বক স্ত্রী সাথী আক্তারের মুখে ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। এতে সাথী আক্তার অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সাথী আক্তারকে পাঠিয়ে দেয়া হয় স্বামী শারফুলের বোন জামাই চরমছলন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দফতরী কবীর মিয়ার বাড়িতে। এ সময় সাথী আক্তারের সাথে স্বামী শারফুল ও তার বাড়ির লোকজনও চরমছলন্দ গ্রামে কবীর মিয়ার বাড়িতে চলে আসে।

নিহত কিশোরী নববধূর বাবা আব্দুল লতিফ অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেয়ের জামাতা শারফুল ও তার বোন জামাই কবীর মিয়া আমাকে জানান- সাথী আক্তার আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে আমি গিয়ে সাথীর লাশ কবীর মিয়ার ঘরের খাটেও ওপর পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় সাথীর গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন মিলে গলাটিপে হত্যা করেছে।

এ বিষয়ে গফরগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ খান জানান, এ ঘটনায় নিহত সাথী আক্তারের অভিযুক্ত ননদ নাছিমা খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement