২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচনে বাকৃবি বিজ্ঞানীদের সাফল্য

ইলিশের পর এবার ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচনে বাকৃবি বিজ্ঞানীদের সাফল্য - ছবি : নয়া দিগন্ত

ইলিশের পর এবার ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল’ জাতের ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্সিং) করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন বিভাগের অধ্যাপক বজলুর রহমান মোল্যার নেতৃত্বে এই সাফল্য এসেছে। ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী গবেষক দলেও ছিলেন তিনি।

গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈব প্রযুক্তিবিষয়ক সংস্থা এনসিবিআই থেকে তা নিবন্ধন পেয়েছে। বাংলাদেশের এই স্থানীয় জাতের ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচনের তথ্য মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের গোশত বিশ্বজুড়ে কুষ্টিয়া গ্রেড নামে পরিচিত, যা বিশ্বের অন্যতম সেরা ছাগলের গোশত হিসেবে সমাদৃত। জীবনরহস্য উন্মোচনের সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই উদ্ভাবন এই ছাগলের জাতের আরও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে ওই ছাগলের ওজন ও গোশতের পরিমাণ বাড়ানো এবং মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এ ব্যাপারে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দলটি পরবর্তী ধাপে গবেষণা করবে বলে জানিয়েছে।

২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে পুরো গবেষণাটি হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাগলের এই জাতের নমুনা সরবরাহ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কম্পিউটারে ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়।

এর আগে ২০১৬ সালে জাতিসংঘের কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) ও আন্তর্জাতিক আণবিক গবেষণা সংস্থা থেকে বিশ্বের ১০০টি ছাগলের বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি গবেষণা করে। তাতে বাংলাদেশের স্থানীয় জাতের ছাগল ব্ল্যাক বেঙ্গলকে বিশ্বের অন্যতম সেরা জাত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী গবেষক দলের প্রধান বজলুর রহমান মোল্যা বলেন, বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অল্প জায়গায় পালন করা যায়, দ্রুত বড় হয় বলে একে ‘গরিবের গাভী’ বলা হয়; কিন্তু এই ছাগলের আকৃতি একটু ছোট ও গোশত কম হয়। জীবনরহস্য উন্মোচনের ফলে এখন এর কোন কোন জিন তার আকৃতি ও গোশতের পরিমাণ নির্ধারণ করে, তা জানা যাবে। ফলে আরও উন্নত জাত উদ্ভাবন করা সহজ হবে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লেমেন্টে ছাগল’ ও ‘চীন ইউনান’ ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচন করা হয়। তারা ওই দুই জাতের ছাগলের আরও উন্নত জাত উদ্ভাবন করে সে দেশের কৃষকদের কাছে তা সরবরাহ করছে।

বাংলাদেশে মোট ছাগলের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৭৬ লাখ, যার ৯০ শতাংশই ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের। এ জাতের ছাগল প্রতিবারে একাধিক বাচ্চা দেয়। দ্রুত প্রজননশীল, চামড়া উন্নত মানের এবং উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার উপযোগী। এ ছাড়া ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের গোশত স্বাদে, গন্ধে ও রসালতায় অনন্য হিসেবে পরিচিত। এ জাতের অধিকাংশ ছাগলের গায়ের রং কালো। তবে বাদামি, সাদা রঙেরও দেখা যায়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বছরে প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন ছাগলের গোশত উৎপাদিত হয়, যা মোট উৎপাদিত গবাদিপশুর গোশতের প্রায় ২৫ ভাগ।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল