২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কিশোরী বয়সেই বিয়ে, তালাক অতঃপর করুণ পরিণতি

নারী নির্যাতন
কিশোরী বয়সেই বিয়ে, তালাক অতঃপর করুণ পরিণতি - প্রতিকী ছবি

স্বামী তালাক দেয়ায় মনের দুঃখে আত্মহত্যা করেছে তাসলিমা আক্তার তানিয়া নামে মাত্র পনের বছর বয়সী এক স্ত্রী। ভাগ্যাহত ওই কিশোরীর বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বুরুঙ্গা গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই গ্রামের ইউনুছ আলীর ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া কন্যা তানিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে দিনাজপুর জেলার কানিতোলা উপজেলার তাওলিয়াপাড়া গ্রামের মাজেদুল ইসলামের বাউন্ডেলে ছেলে ইসমাইল হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় এক বছরকাল প্রেম করার পর অভিভাবকদের অগোচরে বিয়ে করে দুজনই।

বিয়ের ৮ মাসের মাথায় পারিবারিক কলহ বাঁধে। পরে সংবাদ পাঠিয়ে তানিয়ার মাকে দিনাজপুর নিয়ে যাওয়া হয়। গত সোমবার স্বামী ইসমাইল শাশুড়িকে ঘরে আটকে রেখে কিশোরী স্ত্রী তানিয়াকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং তালাক দেয়।

এরপর তানিয়া রাতের বাসেই মায়ের সাথে নালিতাবাড়ীস্থ পিত্রালয়ে চলে আসে এবং মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে বিষপান করে।

স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মধ্যরাতে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় তানিয়ার বাবা ইউনুছ আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ইসলাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন :
প্রেম করে বিয়ে, অতঃপর লাশ হলেন তানিয়া
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা, ১৪ জুলাই ২০১৮
প্রেম করে বিয়ের পর স্বামীর ভাড়া বাসায় ঢাকায় গিয়ে দুই মাস পর লাশ হলেন তেঁতুলিয়ার মেয়ে নাট্যশিল্পী তানিয়া আকতার নদী। তানিয়া ছিলেন তেঁতুলিয়া সম্মিলিত নাট্যগোষ্ঠী দলের একজন নাট্যকর্মী।

নদীর পরিবার ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, ঢাকা তিতুমীর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তানিয়া আকতার নদী। চলতি বছরের মে মাসে ডেভেলপার কোম্পানি বন্ধনের কর্মী মো: শাওন নামে এক ছেলেকে প্রেম করে বিয়ে করেন। বিয়ের পরে শাওন তাকে ঢাকা উত্তরা ৮নং সেক্টরের আদম আলী মার্কেটসংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় বাবা-মায়ের কাছে নিয়ে যান। শাওনের বাবা শহীদুল ইসলাম উত্তরা ৭নং সেক্টরে কাস্টম অফিসে চাকরি করেন। শাওনের পরিবার প্রেমের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। যে কারণে তানিয়ার ওপর শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন চলে। ফলে স্বামী শাওনকে অন্যত্র ভাড়া বাসায় ওঠার জন্য তানিয়া চাপ দেন। কিন্তু শাওন বাবা-মাকে ছেড়ে তানিয়াকে নিয়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নেননি।

গত ২৭ জুন তানিয়া তার স্বামীকে নিয়ে তেঁতুলিয়ায় গ্রামের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ফের ঢাকায় যান। তানিয়ার বড় বোন সোনিয়া জানান, ঢাকায় যাওয়ার পর তার শাশুড়ির শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা মুঠোফোনে তাদের বলেন। এ ছাড়া সিথি নামে এক বান্ধবীর কাছেও তানিয়া নির্যাতনের কথা জানান। এমনকি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তানিয়া গত ১১ জুলাই সকালে তার বান্ধবী সিথির বাসায় গিয়ে ওঠেন। সে দিন রাত ১০টায় শাওন জোর করে তানিয়াকে বাসায় নিয়ে আসেন।

তানিয়ার মা হামিদা বেগম জানান, বুধবার বেলা ১টায় তানিয়া মুঠোফোনে বলে, আমি গোসল সেরে তোমার সাথে দুই ঘণ্টা কথা বলব; এ সময় তার শাশুড়ি তাকে গালমন্দ করেন। এরপর থেকে তানিয়ার মুঠোফোনটি বন্ধ পান। সে দিন রাত ৯টায় শাওন প্রথমে মুঠোফোনে তানিয়ার মা হামিদা বেগমকে জানান ‘আমার প্রাণপাখি তানিয়া উড়াল দিছে’। পরে শাওনের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আপা আপনার তানিয়াকে আমি মেরে ফেলেছি আমাকে ক্ষমা করবেন।

পরে তানিয়ার বড় বোন সোনিয়া ঘটনাটি মুঠোফোনে ঢাকায় তার স্বামী ফারুক হোসেন ও বাবা জয়নালকে বললে, তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। ততক্ষণে শাওনের পরিবার তানিয়ার লাশ একটি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠায়। খবর পেয়ে তানিয়ার বান্ধবী সিথিও ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কিন্তু শাওনের পরিবার তাদের কোনোভাবেই অ্যাম্বুলেন্স নিতে রাজি না হলে সিথি ও ফারুক জোর করে গাড়িতে উঠে গভীর রাতে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান। এ সময় তানিয়ার বান্ধবী সিথি ও ভাই ফারুক ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ, দক্ষিণখান পুলিশ স্টেশনে খবর দেন। থানার অফিসার ইনচার্জ তপন চন্দ্র সাহা নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট সংগ্রহ করেন। একই সাথে শাওন ও তার বাবা-মাকে থানায় নিয়ে আসেন। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে তানিয়ার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ ব্যাপারে তানিয়ার বান্ধবী সিথি মুঠোফোনে আমাদের প্রতিবেদককে জানান, বিয়ের পরে তনিয়াকে যে নির্যাতন করত তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও সে আমাকে যেসব কথা বলেছে; তা ফোন রেকর্ডে আছে। প্রয়োজনে আমি বান্ধবীর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থাকে সহযোগিতা করব। তানিয়ার বাবা জয়নাল ও মা হামিদা বেগম মেয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন।

গতকাল তানিয়ার লাশবাহী অ্যাম্বলেন্স গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। বাদ জুমা কলোনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাহা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

প্রেমের বিয়ে অতঃপর যৌতুকের দাবীতে নির্মম নির্যাতন
সোহেল রানা, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী), ২৪ জুলাই ২০১৮
পাশাপাশি বাড়ীর কারণে পরিচয়, প্রেম-ভালোবাসা। বাড়ীর সবার অজান্তে সুখের আশায় শুভ পরিণয়। এরই মধ্যে একটি কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার পরই শুরু হয় বিপত্তি। যৌতুকের দাবীতে শুরু হয় প্রতিনিয়তই নির্যাতন। দিনদিন নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে যৌতুকের জন্য সারা শরীরে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে পাষণ্ড স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের দিলালপুর গ্রামে। স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বালিয়াকান্দি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক সন্তানের জননী আসমা বেগম (২৫)।

বালিয়াকান্দি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আসমা বেগম জানান, ১১ বছর পুর্বে ভালোবাসে নবাবপুর ইউনিয়নের দিলালপুর গ্রামের জহুরুল শেখের সাথে পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করে। পরে পারিবারিকভাবে মিমাংসা হয়। তাদের একটি ১০ বছর বয়সী মেয়ে রয়েছে। সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। বিয়ের কিছু দিন পর থেকেেই স্বামী যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে আসছিল। মঙ্গলবার বিকেলে বাবার বাড়ী থেকে টাকা আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। টাকা এনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ঠেকাতে গেলেও তাদের উপর গালিগালাজ করে। পরে তারা চলে গেলে তার ইচ্ছামত পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। মারাত্বক আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বালিয়াকান্দি হাসপাতালে ভর্তি করে।

আসমার বাবা আঃ রহিম শেখ জানান, তাদের অসম্মতিতে বিয়ে হয়। মেয়ের অন্যায় মেনে নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে আসছিল। দিনদিন নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার যৌতুকের জন্য শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement