২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অপার সম্ভবনাময় হালুয়াঘাটের কড়ইতলী পর্যটনকেন্দ্র

-

বছরের প্রায় ছয় মাস প্রতিদিন ভারত থেকে আসা কয়লাবাহী শত শত ট্রাক ছোট বড় পাহাড়ে ভূ ভূ করে উঠা নামা । কয়লা লোড আনলোডে ব্যস্ত সময় পার করে শত শত শ্রমিক। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা বাণিজ্যে মগ্ন ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ইটা ভাটার মালিকদের আনাগোনা সর্বত্র। সব মিলিয়ে একটি বন্দরে কার্যক্রম স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করা যায় কড়ইতলী পর্যটনকেন্দ্রে। চলে নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে মে, জুন পর্যন্ত। বন্দরটি মূলত পাহাড়ের উপরে হওয়ায় দর্শনার্থীদের মনকারে সহজেই। রয়েছে ছোট ছোট টিন ও দালান ঘর। কেউ কেউ সৌখিনতার বশে বাগান সাজিয়েছে ব্যবসায়ীক এ স্থানটি।
একটু এগুলেই পাহাড়। দূরে ভারতের মেঘালয়ের তুরা পাহারের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে দৃষ্টির দুই পরতেই শুধু পাহাড় আর পাহাড়। একটির পেছনে আরেকটি। যেন একটি আরেকটির ছায়া। সব পাহাড় আকাশমুখী কোন কোনটিকে ঘন মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে। সেখানে মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের যেন মিতালী চলছে।কোন কোন পাহাড়ে ঝুম বৃষ্টি। আবার মেঘের ফাঁক বুঝে এক রাশ রোদের আলো এসে পড়েছে কোনও কোনওটিতে। এক পাহাড়ে যখন বৃষ্টি, অন্যগুলোতে তখন রোদ। এভাবে প্রতিদিন পাহাড়ের গায়ে চলে রোদবৃষ্টির খেলা। কেউ কেউ ভাবতে পারে এটি নিশ্চয়ই পার্বত্য জেলার নয়নভিরাম কোনও স্থান হবে। কিন্তু এ সব ধারণাকে তুড়ি বাজিয়ে উড়িয়ে দেয়া যায় যদি কেউ চলে আসে হালুয়াঘাটের কড়ইতলীতে। কড়ইতলী ছাড়াও পানিহাটা ও সূর্যপুর থেকেও মেঘালয়ের সব পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে কাছের জায়গাটি কড়ইতলী। এ দীর্ঘ রাস্তার একপাশের মেঘালয় সীমান্তের ছায়ার মতো ঘিরে আছে শুধুই পাহাড়। পাহাড় থেকে সীমানা অতিক্রম করে মাঝে মধ্যে দলবেদে নেমে আসে হাতি কিংবা মায়াবী হরিণ।কড়ইতলী গ্রামটি ১নং ভূবনকুড়া ইউনিয়নের, হালুয়াঘাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিমি: ভেতরে। রাস্তার দু,দিকে ধান ক্ষেতের ফাঁকে ফাঁকে নানা জাতের সবুজ গাছ। কোথাও তাল গাছ কোথাও বা খেজুর গাছ,কোথাও বীজতলার টিয়া রঙ, কোথাওবা সবুজে সবুজে ধান ক্ষেত। কোথাও বা পানি। লম্বা লম্বা পা নিয়ে সে পানিতে নি:শব্দে মাছ ধরে বকের ঝাঁক। সবুজের বুকে সাদা বক, কি যে অদ্ভুত! মনে হয় যেন সবুজ আঁচলের কোন শিল্পী পটে আঁকা ছবি। মনে হবে যেন কোন স্বপ্নময় দেশ এটি। যতদুর দৃষ্টি যায় কেবল গায়ে গায়ে লাগানো উঁচু-নিচু সব পাহাড়। এখানে একটি খাল মনে হলেও এটি আসলে পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি ছোট নদী। বর্ষার পাহাড়ি ঢলের জলরাশি নিয়ে এটি আছড়ে পড়ে কংস নদীর বুকে।অ ার সে সময় ভেসে যায় দু, পাহাড়ের লোকালয়। সে এক লোভনীয় দৃশ্য। এখানে ক্ষণে ক্ষণে বদলায় দূর পাহাড়ের রং। বিকাল হতেই নানা ঢঙের মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। নানা জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে গারো নারীরা। বাড়ে পর্যটকদের ভীড়। এছাড়াও এখানে দেখতে পাবেন ইন্ডিয়া থেকে আমদানী কৃত কয়লা পাথর। কড়াইতলী স্থল বন্দরের কাছে বেসরকারীভাবে গড়ে তুলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পার্ক। ভারত বাংলাদেশ সিমান্তে একদম কাছে ৫ একর জায়গার উপর ঘরে তুলা এই পার্কে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। কড়ইতলী কোল এন্ড কোক ইম্পোর্টাস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন উদ্যোগে নির্মিত এই পার্কটি ২০১৭ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং এমপি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। সেই থেকে পার্কটি সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রতিদিন এই পার্কটিতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। পাহাড়ি অঞ্চল ও মনোরম পরিবেশ হওয়ায় এখানে আগত দর্শনার্থীরাও বেশ খুশি। এখানে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে দোলনা, ময়ুর, হরিন, বক, জিরাফ সহ নানা প্রজাতির ভাষ্কর্য। শুধু তাই নয় এখানে দুর্লভ প্রজাতির ফলজ, বনজ, ঔষধি ও বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ রয়েছে।এই পিকনিক স্পটটির উদ্যোক্তা কড়ইতলী কোল এন্ড কোক ইম্পোর্টাস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এর সভাপতি ও স্থানীয় ভূবনকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান এম.সুরুজ মিয়া জানান, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে অনেকেই বেড়াতে আসেন। কিন্তু এখানে বসার বা প্রকৃতিটাকে ভালোভাবে উপভোগ করার জন্য কোন জায়গা ছিলো না। তারপর আমি উদ্যোগ নেই এখানে একটি পিকনিক স্পট করার। সেই থেকে শুরু করি কাজ। প্রায় ১ বছরের মাথায় মানুষের কাছে বেশ সাড়া পাই। আমার ইচ্ছে আছে এখানে আরো ৫ একর জমি ক্রয় করে এই পার্কটির আয়তন বৃদ্ধি করা।


আরো সংবাদ



premium cement