১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঈশ্বরগঞ্জে বন্দোবস্তের ২৬ বছরেও জমি পায়নি ভূমিহীন ২ পরিবার

-

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ভূমিহীন দুটি পরিবারকে সরকার কর্তৃক বন্দোবস্ত দেয়া বিশ শতক কৃষি জমি দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। দুই পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে জমি বন্দোবস্ত দেয়া হলেও জোরপূর্বক সে জমি দখলে নিয়ে পুকুর কেটে ফেলেছেন দখলদাররা। ওই অবস্থায় নিজেদের প্রাপ্য জমি ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দুই ভূমিহীন পরিবার।

জানা যায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাইদগাঁও গ্রামের ভূমিহীন মো: আবু তাহের ও জালাল উদ্দিন বিলে মাছ ধরে সংসার চালান। নিজেদের কোনো জমিজমা না থাকায় কৃষি খাস জমি বন্দোবস্তের জন্য ১৯৯১ সালে আবেদন করেন। তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক যাবতীয় কার্যক্রম শেষে আবু তাহের ও তার স্ত্রী মোসা: মহরমের নেছা এবং জালাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে ১০ শতক করে ২০ শতক জমি বন্দোবস্ত দেন।

১৯৯২ সালের ২৫ মার্চ দুই পরিবারকে ভাইদগাঁও মৌজার ১নং খতিয়ানের ৬৫ নম্বর দাগভুক্ত ২০ শতক কৃষি জমি ওই দুই পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

কিন্তু পরদিন ওই জমিতে আবু তাহের ও জালাল উদ্দিনের পরিবার দুটি আবাদ করতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা জয়নাল আবেদীনের পিতা হযরত আলী ও তার চাচাতো ভাইয়েরা তাদের বেধড়ক মারপিট করে জমিটি বেদখল করে। এরপর তাহের ও জালালের পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে শারীরিক ও মানসিক হেনস্তা করতে থাকে।

১৯৯৩ সালে দখলদার হযরত আলী বাদি হয়ে তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার ময়মনসিংহ, সহকারি কমিশনর (ভূমি) ঈশ্বরগঞ্জসহ ভূমিহীন ওই দু’টি পরিবারকে বিবাদী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। আদালত বন্দোবস্ত ২০ শতক জমি ভূমিহীনদের বলেয়া রায় দেয়। অদ্যাবদি ওই ২০ শতক জমির খাজনা তারা আদায় করে যাচ্ছেন। কিন্তু ২৬ বছরেও ওই জমিতে তারা যেতে পারেননি।

ভূমিহীন জালাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন জানায়, বিলে জাল টেলে মাছ ধরে সংসার চলে তাদের। সরকার তাদের ১০ শতক জমি দিয়েছে জেনে খুবই খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু জমি বুঝিয়ে দেয়ার পরদিনই ক্ষেতে গেলে তাদেরকে বেধড়ক মারধর করে জমিটি পূর্বের দখলকারী হযরত আলী, তাদের ভাই, ভাতিজা ও সন্তানরা দখলে নিয়ে যায়।

ভূমিহীন আবু তাহের জানান, আগে বিলে মাছ ধরে সংসার চালাতেন, এখন তিনি একটি চায়ের স্টল দিয়ে চা বিক্রি করেন। ২৬ বছর আগে সরকার ১০ শতক জমি দিলেও তারা জমিতে যেতে পারছেন না। বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে প্রতিপক্ষ দখলদাররা।

প্রভাবশালী হযরত আলীর ছেলে যুবলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, ভূমিহীন হিসেবে জমি তারা পেলেও সেই জমি তাদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ২০ শতক জমি বাবদ তারা ১০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু এখন তারা অস্বীকার করছে জমি বিক্রির কথা। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা সালিশও হয়েছে। এখন সে জমি ফেরত পেতে হলে বর্তমান বাজার মূল্যে তাদের টাকা দিতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এলিশ শরমিন জানান, বিষয়টি জেনে ওই ভূমিহীন দুই পরিবারের কাছে জমিটি হস্তান্তরের ব্যবস্থা করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement