১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভালুকায় পল্লীবিদ্যুতের সংযোগের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

-

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রাহকপ্রতি পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ পেতে মিটার খরচ সাড়ে ৬শ’ টাকার বেশি না লাগার কথা থাকলেও ভালুকা উপজেলা তিনটি গ্রামে সাড়ে তিন শ’ গ্রাহকের কাছ থেকে মিটারপ্রতি ১০ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা করে প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ার অভিযোগ উঠেছে সঙ্ঘবদ্ধ দালালচক্রের বিরুদ্ধে।

কেউ ছাগল বিক্রি করে, কেউ এনজিও থেকে টাকা উত্তোলন করে, আবার কেউবা কানের ঝুমকা বিক্রি করে দালালদের টাকা দিলেও মাসের পর মাস ও বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য।

পল্লীবিদ্যুতের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদার ও ক্ষতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে দালালদের একটি সিন্ডিকেট এর সাথে জড়িত থাকার কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

উপজেলার কাদিগড় নয়াপাড়া, মেদুয়ারীর ছোট লোহাবই ও বরাইদ কৃষ্ণপুর গ্রামে গ্রাহক ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এই অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কাদিগড় নয়াপাড়ার বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ কথাগুলো সমস্বরে বলছিলেন, ‘তিন মাসের মইধ্যে বাড়িতে পল্লী বিদ্যুৎ দিবার কতা কইয়া দেড় বছর আগে একেকটা মিটারের লাইগ্যা দশ আজার কইরা টেহা নিছে। কিন্ত আমরা অহনো বিদ্যুৎ পাইতাছি না। দিব, দিতাছি কইয়া দেড় বছর পার কইরা দিল। অহন তারা আরো ছয় আজার কইরা টেহা চাইতাছে।’

তারা জানান, একই পাড়ার রফিকুল ইসলাম, পাশের পাড়াগাঁও শিরিরচালার মো: আবুল হোসেন ও মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের মামারিশপুর গ্রামের আবদুল কাদির নয়াপাড়ায় তিন মাসের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার মৌখিক চুক্তিতে মিটারপ্রতি ১৬ হাজার টাকা করে দাবি করেন। ওই টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা আগাম এবং ঘরে সংযোগ পাওয়ার পর বাকি ছয় হাজার টাকা প্রদান করতে হবে। তবে, চুক্তি অনুসারে বিদ্যুতের জন্য নিজ নিজ ঘর ওয়্যারিং করার দায়িত্ব গ্রাহকদের। ফলে, বিদ্যুৎ পাওয়ার আশায় নয়াপাড়ার ১৬ জন প্রায় ১৮ মাস আগে ২৪ ঘন্টার মাঝে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। টাকার ব্যবস্থা না থাকায় ওই সময় দিতে পারেননি আরো অনেকে।

এদিকে, টাকা দেয়ার পর ১৮ মাস অতিবাহিত হলেও আজো বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি ওইসব ব্যক্তি। মোটা অংকের টাকা নেয়ার পরও বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়ে নানান টালবাহানায় ১৮ মাস কাটিয়ে দিয়েছেন তারা। এখন মিটারপ্রতি আরো ছয় হাজার টাকা করে দাবি করছে ওই দালালচক্র। অথচ একই মাস্টার প্লানের আওতায় পাশের গ্রামটি বিদ্যুতায়িত হয়েছে অনেক আগেই।

ওই ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ একাধিক স্থানে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

নয়াপাড়ার নূরুল ইসলামের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার জানান, ‘চব্বিশ ঘন্টার মইধ্যে টেহা না দিলে বিদু্যুৎ পাওয়া যাইত না, টেহাও নাই। হের লাইগ্যা দিশাবিশা না পাইয়া বিশ আজার টেহা দামের দুইডা ছাগল দশ আজার টেহায় বেইচ্চা বিদ্যুতের ল্ইাগ্যা টেহা দিছি। অহনো বিদ্যুৎ পাইতাছিনা।’

লেহেম উদ্দিন বলেন, ‘আমি গরীব মানুষ। সুদে ঋণ কইরা বিদ্যুতের লাইগ্যা দশ আজার টেহা দিলাম। কিন্তু বিদ্যুৎ অহনো পাইলাম না।’

শফিকুলের স্ত্রী সুরাইয়া জানান, ‘আমার ভাই বিদেশ থাকে। ভাই আমারে কানের একজোড়া ঝুমকা দিছিন। বিদ্যুৎ পাইলে ক্ষেত-অ পানি সেচ দিয়া ফসল বেশী মারাইন যাইব এই আশায় ভাইয়ের দেয়া শহের কানের ঝুমকা দুইডা কমদামে বেইচ্চা টেহা দিছি। আহন আরো টেহা চায় তারা।’

মোহাম্মদ আলী জানান, ‘অফিসে টাকা দিলেই বাতি জ¦লব। দালালদের এই কথা শোনে প্রথমে ১০ হাজার ও বাতি জ¦ালানোর পর ৬ হাজার টাকা দেয়ার শর্তে ১৮ মাস আগে আমরা ১৬ জন গ্রাহক তাদেরকে ১০ হাজার করে টাকা দেই। নানান টালবাহানায় বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়েই এখন তারা আরো ৬ হাজার টাকা করে দাবি করছে।’

মোবাইলে কথা হলে মো: রফিকুল ইসলাম জানান, নয়াপাড়ার সাতজনের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে তিনি আবুল হোসেনকে দিয়েছেন। আবুল হোসেন জানান, তার কাছে দেয়া টাকা তিনি কাদিরের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

আবদুল কাদির অকপটে বলেন, ‘টাকা ছাড়া কিছুই হয় না, একটা নতুন লাইন করতে হলে অনেক টাকা লাগে। নয়াপাড়ার গ্রাহকদের সাথে কত টাকা করে চুক্তি হয়েছে তা আবুল হোসেন জানে। নয়াপাড়ার ১৬টি মিটারের জন্য সে এক লাখ টাকা দিয়েছে। সেই টাকা থেকে বিদ্যুতের লাইন অনুমোদন থেকে শুরু করে স্টেকিং, ডিজাইন ও স্টোর হতে মালামাল বের করার জন্যে এক ঠিকাদারের মাধ্যমে অফিসে ৫০ হাজার এবং লাইনটি নির্মাণ করে সংযোগ দেয়ার জন্য ঠিকাদার এমারত হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।’

তিনি ঠিকাদারের নিকট থেকে কাজ নিয়ে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন বলে জানান।

স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি, কি পল্লী, কি পিডিবি- নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ মানেই মোটা অংকের টাকা। আর কোনো এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ লাইনের কথা হলেই সেখানে গড়ে উঠে একটি দালাল চক্র।

এ বাপারে ঠিকাদার এমারত হোসেনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে মোবাইল ফোনে সংযোগ না পাওয়ায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে উপজেলার ছোট লোহাবই গ্রামে স্থানীয় অমল চন্দ্র দের ছেলে ইলেট্রেশিয়ান শ্যামল চন্দ্র দে এলাকার প্রায় শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

গ্রাহক আব্দুল খালেক, আব্দুর রহমান, লোকমান হেকিম,স্তম আলী মাষ্টার, ওমর ফারুক, মোস্তাফিজুর রহমান ধনু, হাবিবুল্যাহ ও জুলেখা খাতুন জানান, পল্লীবিদুতায়নের জন্য আমাদের কাছ থেকে তিন বছর ধরে টাকা নিয়ে হয়রানী করছে। কয়েকদিন আগে খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। এখন আরো টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে এবং টাকা না দিলে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবেনা বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে।

অভিযুক্ত শ্যামল চন্দ্র দে জানান, আমি টাকাগুলো উত্তোলন করে আনোয়ার ভাইকে দিয়ে দিয়েছে। কে আনোয়ার- জানাতে চাইলে শ্যামল জানায়, তিনি ঠিকাদারের লোক। পরে এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেনের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, শ্যামলের কাছ থেকে পাওয়া সব টাকা ঠিকাদার নাজিম উদ্দিনকে দিয়ে দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে উপজেলার বরাইদ কৃষ্ণপুর গ্রামে গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাসুদ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি দেড় শ’ গ্রাহকের কাছ থেকে ১৫-১৬ হাজার টাকা করে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন।

গ্রাহক শাহিন, সাইদুল, আব্দুস ছালাম, শুক্কুর আলী, আবু বকর, বুলবুল, আহম্মদ আলী ও নুরুল ইসলাম জানান, মাসুদ এলাকা থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও এখনো অধিকাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ পায়নি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধ নজরুল ইসলাম খান জানান, ১৫ হাজার টাকা না দেয়ায় মাসুদ তাকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়নি। পরে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের জিএমের সাথে যোগাযোগ করলে আমার বাড়ির পাশে খুঁটি স্থাপন করে সংযোগ তার টানানো হয়।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাসুদ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এলাকার অধিকাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাকিদের কিছুদিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জিএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘নয়াপাড়ার কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। তবে, অনিয়মের সাথে অফিসের কেউ বা সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার জড়িত থাকার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাসুদ কামাল বলেন, ‘নয়াপাড়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরাইলের নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধাপরাধের শামিল : জাতিসঙ্ঘ সঙ্গীতশিল্পী খালিদকে বাবা-মায়ের পাশে গোপালগঞ্জে দাফন রাণীনগরে টমটম গাড়ির ধাক্কায় নিহত ১ স্লিপিং ট্যাবলেট খে‌লেও সরকা‌রের ঘুম আসে না : গয়েশ্বর জনসাধারণের পারাপারে গোলাম পরওয়ারের খেয়া নৌকা উপহার ভোলায় হঠাৎ অসুস্থ ২৯ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি করোনায় ১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩১ ‘অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব’ নারায়ণগঞ্জের বাজারগুলোতে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নামল ‘নবীর শিক্ষা জালিম সরকারের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলাই সর্বোত্তম জিহাদ’ আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ স্থগিত অস্ট্রেলিয়ার

সকল