২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

লম্পট ও সন্ত্রাসী আলমাসের কবল থেকে মুক্তি চায় নিপা

-

নারী লোভী, লম্পট ও সন্ত্রাসী আলমাস মোল্লা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে, ভয় দেখিয়ে. জিম্মি করে, প্রশাসনের লোকজন ও সমাজপতিদের ম্যানেজ করে গত ১৫ বছর ধরে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আউট বাড়ীয়া গ্রামে ফাতেমা আক্তার নিপা (২৮) নামের এক অসহায় নারীকে রক্ষিতা করে রেখেছে। সেই অসহায় নারী ফাতেমা আক্তার নিপা দুঃসহ কষ্টের রক্ষিতার জীবন এবং নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ উর্ধ্বতন প্রশাসনের লোকজনের দৃষ্টি আর্কষনের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে গফরগাঁও প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অভিযোগকারীর পিতা-মাতা ভাই সহ গফরগাঁও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান রেশমা আক্তার, গফরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলম খোকন, সালটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হক ঢালী, উস্থি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম তোতা, রাওনা ইউপি চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম, লংগাইর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন বিপ্লবসহ সাংবাদিক ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ। সংবাদ সম্মেলনে অসহায় নারীর সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসে এক করুন নির্যাতনের কাহিনী। যা সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে।


জানা যায়, উপজেলার গফরগাঁও ইউনিয়নে আউট বাড়িয়া গ্রামের দরিদ্র শাহাব উদ্দিনের ৩ মেয়ে ১ ছেলের মধ্যে ফাতেমা আক্তার নিপা বড়। সংসারের কথা চিন্তা করে ভাই-বোনদের মুখে আহার জোগারের লক্ষ্যে লেখাপড়ার স্বপ্ন ফেলে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই ২০১৪ সালে নিপা গার্মেন্টেস চাকুরী করার জন্য ছুটে যায় সাভার হেমায়েতপুর ষ্টার এসোসিয়েট লিঃ এর। বাড়ীর পাশের লোকজনের সহযোগীতায় তার চাকুরী হয় ঐ গার্মেন্টেসে। চাকুরীর শুরুতেই গার্মেন্টেসর জুট ব্যবসায়ী আলমাস মোল্লার কু-নজরে পড়ে সুন্দরী নিপা। প্রথম থেকেই আলমাস তার পিছু নেয় এবং বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করতে থাকে ।
পরিবারের অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে নিপা ২০০৭ সাল পর্যন্ত নানা কৌশলে নিজেকে রক্ষা করে ঐ গার্মেন্টেসে চাকুরী করে। পরে ঐ গার্মেন্টেসই কর্মচারী, নড়াইলের লোহাগড়া থানার কালনার চর গ্রামের কামাল হোসেনের সাথে বিয়ে হয় নিপার। বিয়ের পর স্বামী কামাল হোসেন তার বাড়ীতে নিয়ে যায় নিপাকে। পরে কর্মস্থলে আবারও চাকুরী করতে আসলে কামাল ও তার ৪ ভাইকে আটক করে পিটিয়ে আহত করলে খবর পেয়ে আলমাসের পিতা কামাল ও তার ভাইদের উদ্ধার করে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়।
নিপার বিয়ের ৬ মাস পর হঠাৎ লোহাগড়া থানা পুলিশ নিপা ও তার স্বামীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঁঠায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলমাস তার বাসায় চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করে। পরে দীর্ঘদিন জেল খাটার পর নিপা দম্পতি জামিন পায়। পরে মামলা মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় আদালত খারিজ করে দেয়। এরই মধ্যে আলমাসের অত্যাচার চরম আকার ধারন করলে কামাল নিপাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়।
এসময় আলমাস থানা পুলিশের ভয় ও আরো মামলার ভয় দেখিয়ে গুন্ডা বাহিনী দিয়ে উঠিয়ে নিপাকে তার নিকট নিয়ে আসে। বেশ কিছুদিন আলমাসের ভাড়া করা বাসায় নিপাকে থাকতে এবং শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। পরে কৌশলে নিপা বাড়ী চলে আসে ২০০৯ সালে পারিবারিক ভাবে আবারো কালাইপাড় গ্রামের ছোবহানের ছেলে হেলালের নিকট নিপার বিয়ে হয়। বিয়ের ৪ মাস পর হেলালকে পুলিশ দিয়ে নানা ভাবে হয়রানি শুরু করে আলমাস। সেই সুবাদে পুলিশি হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে ৩ মাসের গর্ভবর্তী থাকা অবস্থায় নিপাকে ডির্ভোস দিয়ে হেলাল ও এলাকার কিছু অর্থলোভী লোকজন অসহায় নিপাকে আলমাসের হাতে তুলে দেয়।
নিপাকে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে বাধ্য করে। আলমাস নিপাকে নিয়ে আবারো তার নিয়ন্ত্রণে ভাড়া বাসায় রেখে রক্ষিতা হিসাবে দিনাতিপাত শুরু করে। নিপাকে রক্ষিতা থাকতে গত ১৫ বছরে নিপার পিতা শাহাব উদ্দিন , ভাই রোবেলকে সাভার, কেরানীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার নিজস্ব লোকদের দিয়ে একাধিক মামলা জড়িয়ে হয়রানি করে, নিপাকে তার রক্ষিতা হিসেবে থাকতে বাধ্য করে।
নিপা পালাবার চেষ্টা করলে তাকে এবং ভাই, বোনদের লোক লাগিয়ে খুন করার হুমকি দিত। অবশেষে নারী লোভী, সন্ত্রাসী আলমাসের কবল থেকে কৌশলে পালিয়ে এসে অসহায় ফাতেমা আক্তার নিপা পিতা-মাতা ও ভাইকে নিয়ে গফরগাঁও প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেকে রক্ষার জন্য আবেদন জানায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর কাছে। এসময় নিপা বলেন, লম্পট আলমাস আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। আমি বহুবার আলমাসের লালসার শিকার হয়ে ধর্ষিত হয়েছি। আমি বাঁচতে চাই। আমাকে এই সন্ত্রাসী নারীলোভী লম্পটের হাত থেকে বাঁচান।
এ ব্যাপারে গফরগাঁও উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান রেশমা আক্তার বলেন, আমার বাড়ির পাশেই নিপাদের বাড়ী। তার এই করুন নির্যাতনের ঘটনা আমরা শুনেছি এবং পরিবারসহ তাকে রক্ষার জন্য সরকারের উপর মহলের আবেদন জানাচ্ছি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম খোকন, পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম ও নাজমুল হক ঢালী বলেন, ঘটনা সম্পূর্ণ সত্য। অভিযুক্ত আলমাস মোল্লা মোবাইল ফোনে গফরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম খোকন এর মাধ্যমে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সব সত্য নয়। আপনারা বিষয়টি মিমাংসা করে দিন।


আরো সংবাদ



premium cement