২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভালুকায় ৭শ’ টাকার এলপিজি গ্যাস ১১শ’ টাকায় বিক্রি

-

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সর্বত্রই বিস্ফোরক অধিদফতর ও পরিদর্শকের লাইসেন্স ছাড়াই বেশ কয়েকটি সিএনজি স্টেশনসহ বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার পাশে বিভিন্ন দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে অবৈধভাবে ৭শ টাকার এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ১১শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে গ্যাস বিক্রির সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একটি সিএনজি স্টেশনের কর্মচারী নিহতের ঘটনাও ঘটেছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার ভরাডোবা এলাকায় এসএনএস সিএনজি স্টেশন, কাঠালী জহুর উদ্দিন সিএনজি স্টেশন, মাস্টারবাড়ি পূর্বাশা সিএনজি স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি স্টেশনে দিন রাত অবাধে বিভিন্ন কোম্পানীর বোতলে অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি করে চলেছে। সম্প্রতি উপজেলারর মাস্টারবাড়ি পূর্বাশা সিএনজি স্টেশনে পিকআপ ভর্তি মেয়াদোত্তীর্ণ বোতলে গ্যাস বিক্রির সময় বিস্ফোরণে স্টেশনের এক কর্মচারীর দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘটনস্থলেই মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
তাছাড়া পৌরসভার পাঁচরাস্তামোড় ও ফায়ারসার্ভিসমোড়সহ উপজেলার মল্লিকবাড়ি, বিরুনিয়া, সিডস্টোর, মাস্টারবাড়ি, কাচিনা, ডাকাতিয়া, উথুরা, শান্তিগঞ্জ, বাটাজোর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০০’র বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যত্রতত্র পেট্রোলিয়াম জাতীয় জ্বালানি তেল এবং প্রায় ৩০/৪০টি দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা প্রশাসনিক বা বিস্ফোরক অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই মনোহারী ও স্টেশনারি দোকানে খোলামেলাভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অকটেন, পেট্রোল, ডিজেলসহ সেনা কল্যাণ এলপিজি গ্যাস, বসুন্ধরা, জি গ্যাস, ওরিয়ন, ওমেগা, পদ্মা, প্রেট্রোম্যাক্স, টোটাল ও বেক্সিমকো সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব পেট্রোলিয়াম জাতীয় জ্বালানি তেল ও সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির জন্য বিস্ফোরক দ্রব্যের লাইসেন্স গ্রহণের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার বিধান থাকলেও ব্যবসায়ীরা এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সাধারণ ব্যবসার মতোই তা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভালুকা বাজারের পাঁচ রাস্তামোড় এলকায় অবস্থিত মজিবর ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড গ্যাস স্টোর ও পলী গ্যাস স্টোরে নিয়মনিতির তোয়াক্কা না করে মজিবর ও নুরুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তি প্রশাসনের নাকের ঢগায় এভাবে বিভিন্ন কোম্পানীর মেয়াদোত্তীর্ণ বোতলে গ্যাস বিক্রি করলেও যেন দেখার কেউ নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, কোন ধরণের তদারকি না থাকায় ১২ কেজির ৭০০ টাকার গ্যাস ওই ব্যবসায়ীরা এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে।
স্থানীয় বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ও সচেতন মহল জানান, অসাবধানতাবসত এসব প্রতিষ্ঠানের কোন একটিতে আগুন লাগলে সম্পুর্ণ বাজার এলাকা ধ্বংস হয়ে যাবে। জননিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবসায়ীদের বিধি-বিধান মেনে জ্বালানি তেল ও সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির অনুরোধ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি বিষ্ফোরক অধিদফতর এবং পরিদর্শকের লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভরাডোবা এসএনএস সিএনজি স্টেশনের মালিক মো: সুমন মিয়া গ্যাস বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ভালুকার সব সিএনজি স্টেশনের মালিকরাই এইভাবে বোতলে গ্যাস বিক্রি করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধা আসলে বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হবে।
উপজেলার সিডষ্টোর বাজারে অবস্থিত এনএন ট্রেডার্সের মালিক খন্দকার নাঈম জানান, তিনি বসুন্ধরার গ্যাস সিলিন্ডার এক হাজার ২০ টাকায় (১২ কেজি) বিক্রি করেন। তাদের বিস্ফোরক লাইসেন্স রয়েছে। তিনি বলেন, আর কিছু দরকার আছে বলে আমার মনে হয়না।
ভালুকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ইন্সপেক্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো: জয়নাল আবেদীন জানান, ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছাড়া যত্রতত্র পেট্রোলিয়াম জাতীয় জ্বালানি তেল ও সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করতে পারেনা।
ভালুকা তিতাস গ্রাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিট্রিভিশন কোম্পানী লিমিটেডের ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার শাহাজাদা ফরায়েজী জানান, সিএনজি স্টেশনে বোতলে গ্যাস বিক্রি অবৈধ। কেউ বিক্রি করে থাকলে খোঁজ নিয়ে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement