২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বর্বর নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ, অভিযুক্ত স্বামী আটক

নারী নির্যাতন
নির্যাতনের শিকার মমতাজের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন কর্তব্যরত ডাক্তার ও মানবাধিকারকর্মীরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

যৌতুকলোভী স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মমতাজ বেগম (২১) নামের এক গৃহবধূ। পাষণ্ড স্বামীর বর্বর নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূকে সোমবার রাত ৮টায় হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। বর্তমানে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বেডে রয়েছেন নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ।

খবর পেয়ে নির্যাতিত মমতাজ বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছেন নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন, সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সিংড়া উপজেলা শাখার সদস্যরা।

এদিকে, বুধবার ভোর ৪টায় সিংড়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় ওই নির্যাতিত গৃহবধূর দেড় বছরের শিশু আরাফাতকে উদ্ধার করে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং পাষণ্ড স্বামী সবুজ হোসেনকে আটক করা হয়েছে।

নির্যাতিতার পরিবার ও থানা পুলিশ জানা যায়, সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল পূর্ব ভেঙরি গ্রামের সবুজ হোসেনের সাথে চার বছর আগে বিয়ে হয় মৌগ্রামের মকবুল প্রামানিকের মেয়ে মমতাজ বেগমের। তাদের সংসারে দেড় বছরের একটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের সময় দেড় লাখ টাকা যৌতুক তুলে দেয় সবুজের হাতে মমতাজের পরিবার। কিন্তু স্বামী সবুজ হোসেন আরো যৌতুকের টাকা দাবি করেন। এনিয়ে মাঝেমধ্যেই তাদের সংসারে ঝগড়া-বিবাদ হয়।

সোমবার যৌতুকের টাকা নিয়ে শাশুড়ি শাফিয়া বেগমের সাথে ঝগড়া লাগলে ওই গৃহবধূকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। এক পর্যায়ে গৃহবধূকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা করে পাষন্ড স্বামী সবুজ ও তার মা শাফিয়া বেগম। পরে তাকে উদ্ধার করে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

নির্যাতিত গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, ‘প্রায়ই যৌতুকের টাকার জন্য তাকে তার স্বামী ও শাশুড়ি মিলে মারপিট করে। সব নির্যাতন সহ্য করেই মাঝেমধ্যেই বাপের বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে আসি। তবুও স্বামী ও শাশুড়ির মন পাই না। সোমবার সন্ধ্যায় একই বিষয় নিয়ে ঝগড়া লাগলে স্বামী এবং শাশুড়ি লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেছে। সাথে চলে কিল-ঘুষির ঝড়।’

এদিকে, খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে নির্যাতিতা মমতাজ বেগমের কাছে ছুটে যান সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। মমতাজ বেগমের কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনে এই প্রতিবেদককে বলেন, অমানবিকভাবে মমতাজ বেগমকে বেদম মারপিট করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থালে কালশিরা পড়ে গেছে। নির্যাতিত গৃহবধূর দেড় বছরের শিশু আরাফাতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং আটক করা হয় পাষন্ড স্বামী সবুজ হোসেনকে। কিন্তু এতেই শেষ নয়। ওই পাষন্ড যুবক সবুজকে কেন আটক করা হয়েছে জানতে চেয়ে ওসিকে ফোনে চার্জ করেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্য।

সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: রাশেদুল হাসান জানান, মমজান বেগম নামের এক গৃহবধূ নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। বর্তমানে তার শারিরীক অবস্থা উন্নতির দিকে। আমরা সার্বক্ষণিক ওই নির্যাতিত গৃহবধূর খোঁজ খবর রাখছি।

অপরদিকে, নির্যাতিত মমতাজ বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছে নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন। স্থানীয় মানবাধিকার ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে খবর পাওয়ার তিনি সিংড়া উপজেলা প্রশাসনকে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

আরো পড়ুন :
খুঁটিতে বেঁধে গৃহবধূকে বর্বর নির্যাতন
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা, ০৭ আগস্ট ২০১৮
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় খুঁটিতে বেঁধে আকলিমা বেগম (২৬) নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতন করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ওই গৃহবধূ উপজেলার ধনপুর ইউপির পশ্চিম ছাতারকোনা গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (৭আগস্ট) সকাল সাড়ে নয়টার সময় উপজেলার ছাতার কোন গ্রামে পুলিশ সদস্যের পরিবার ও ওই গৃহবধূর পরিবারের মামলা মোকদ্দমার বিরোধ কে কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্যের চাচা আব্দুল কদ্দুছের বাড়ির উঠানে পুলিশ সদস্যের পিতা আব্দুল মোতালেব (৬০) ও আইন উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মান্নানসহ অন্যান্যরা ওই গৃহবধূর বসতঘর থেকে তাকে ধরে এনে খুঁটিতে বেঁধে বেধড়ক মারপিঠ করে। খবর পেয়ে বিশ্বম্ভরপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আশংকাজনক অবস্থায় ওই ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

গৃহবধূর স্বামী সেলিম মিয়া জানায়, ‘আমার স্ত্রী আকলিমা গত রোববার আমল গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় আমার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে খুঁটিতে বেঁধে মারপিঠ করা হয়েছে। আমি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

তবে এ বিষয়ে পুলিশ কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম ও তার পরিবার জানায়, গৃহবধূ আকলিমা পুলিশ সদস্যের মা সুফিয়া খাতুনকে পুলিশ সদস্যের বাড়িতে গিয়ে মারপিট করে। পরে আকলিমার আত্মীয়রাই তাকে মারধর করে।

এ বিষয়ে বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি মোল্লা মুনির হোসেন জানান, ঘটনা সম্পর্কে শুনেছি। এখনো কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement