২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভালুকায় ভিজিএফ’র চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

দু’দিনে ৬০ বস্তা উদ্ধার
-

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ১ নম্বর উথুরা ইউনিয়নে ঈদ উপলক্ষে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ’র চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়নের অভিযোগ উঠেছে। ঈদের দিন ও ঈদের পরদিন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উথুরা বাজারের দুই চাল ব্যবসায়ীর দোকান থেকে ৬০ বস্তা চাল উদ্ধার করেছে। ইউপি সদস্যদের বাদ দিয়ে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে চাল বিতরণ হওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। এতে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন এলাকার হতদরিদ্র ও বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদল ফিতর উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মতো ১ নম্বর উথুরা ইউনিয়নে চার হাজার ৭২০ জন হতদরিদ্র কার্ডধারীর জন্য ১০ কেজি করে ৪৭ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান তালুকদার বিতরণের জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উথুরা বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী শামছুল হক চৌধুরীকে এক হাজারটি কার্ড ও প্রতি ইউপি সদস্যকে ৩০০ থেকে ৪০০টি কার্ড দেন। কিন্তু চাল বিতরণকালে কোনো ইউপি সদস্যকে না জানানোর কারণে এবং সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে চাল বিতরণের কারণে কয়েকশ’ কার্ডধারী চাল থেকে বঞ্চিত হন।

পরে ঈদের দিন সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উথুরা বাজারের ধান-চাল ব্যবসায়ী হাফিজুলের দোকানে ২০ বস্তা ভিজিএফ’র চাল জব্দ করেন। এসময় চাাল ব্যবসায়ী হাফিজুল পুলিশি অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যান।

খবর পেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুল হক ফারুক রেজা ঘটনাস্থলে যান এবং দোকান ঘরটি তালবদ্ধ করে দেন। পরে বাজারের আরেক চাল ব্যবসায়ী লোকমানের চালের আড়তে অভিযান চালিয়ে ভিজিএফ’র আরো ৩০ বস্তা চাল জব্দ করে পুলিশ নিয়ে আসেন।

ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড মর্চি এলাকার ইউপি সদস্য মো: রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ৪০০ কার্ড পেয়েছিলেন এবং সবগুলো কার্ড তিনি বিতরণ করেছেণ। কিন্তু চাল বিতরণের সময় তাকে না জানানো কারণে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক কার্ডধারী তার কাছে অভিযোগ করেছেন ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৭ কেজির বেশি চাল তারা পাননি। এমনকি তার ওয়ার্ডের বহু কার্ডধারী চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ভয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করার সাহসও পায়নি।

১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোশারফ হোসেন জানান, আমার ওয়ার্ডে প্রথম দিন চাল বিতরণ করায় তেমন একটা সমস্যা হয়নি। তারপরও বেশ কিছু লোক চাল পাননি।

সাবেক মেম্বার আব্দুস সহিদ জানান, চাল না পেয়ে তার কাছে ৬৫ জন হতদরিদ্র তাদের কার্ডগুলো রেখে গেছেন। তিনি হতদরিদ্রদের চাল লুটপাটের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নেয়ার জোর দাবি জানান।

বনগাঁও এলাকার হতদরিদ্র মোখলেছুর রহমান জানান, তাদের ৩০০ ঘরের মাঝে ১০/১২টি কার্ড পেয়েছে। এখানকার অনেক নেশাখোর কার্ড পেয়েছে এবং চাল উত্তোলন করে তা বিক্রি করে নেশার কাজে লাগিয়েছে।

হতদরিদ্র বনগাঁও গ্রামের দুলাল মিয়া জানান, তিনি কার্ড পেলেও চাল পাননি। হোসেন আলী জানান, চাল না পেয়ে চেয়ারম্যানের কাছে গেছে তিনি জানান, চাল শেষ হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক লোক জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের খাস লোক ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ওই বাজারের ইজারাদার রবিউল আলম খোকনসহ কতিপয় নেতা-কর্মী এসব অনিয়নের সাথে জড়িত। এ সময় অনেকেই বলেন এই ইউনিয়নে অন্তত এক হাজার হতদরিদ্রের কার্ডের কোনো হদিস নেই এবং চাল উত্তোলন করতে পারেনি।

তবে অভিযুক্ত রবিউল আলম খোকন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি ভিত্তিহীন বলে দাবী করে জানান, তিনি বাজারের ইজারাদার হিসেবে ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলতে হচ্ছে।

ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি ও উথুরা বাজারের ঔষুধ ব্যবসায়ী শামছুল হক চৌধুরীকে তার দোকানে না পেয়ে এমনকি তার মোবাইলে বার বার চেষ্টা করেও মোবাইল বন্ধ থাকায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান তালুকদার জানান, ভিজিএফ কার্ড বিতরণ কমিটির সদস্য ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতিসহ সকল ইউপি সদস্যদের কার্ড পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তারা ঠিকমতো কার্ডগুলো বিতরণ করেছেন কিনা তা তার জানানোর বিষয় নয়।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুল হক ফারুক রেজা জানান, খবর পেয়ে উথুরা বাজারের চাল ব্যবসায়ী হাফিজুলের দোকানে ২০ বস্তা চাল জব্দ করে পুলিশের উপস্থিতিতে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি চালের বস্তা ছিল ৩০ কেজির কিন্তু ওই দোকানে পাওয়া গেছে, দুই মণের। চালগুলো সরকারি কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে।

ভালুকা মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, কিছু চাল জব্দ করে বাজারের একটি দোকানে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে এবং আরো ৩০ বস্তা চাল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ কামাল জানান, উদ্ধার ও জব্দকৃত চালগুলো ভিজিএফ’র কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া চাল বিতরণে অনিয়ম হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement