২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ময়মনসিংহে হর্কাস সুপার মাকেটে অগুনে অর্ধশত কোটি টাকার ক্ষতি

-

ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনারপাড় হর্কাস সুপার মাকেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে দেড় শতাধিক দোকান ভস্মিভূত হয়েছে। এতে অর্ধশত কোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একই সাথে নিঃস্ব হয়ে গেছেন ওই মার্কেটের ব্যবসায়িরা। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে প্রাথমিক ধারনা করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।
স্থানীয় ব্যবসায়িরা জানান, সকাল ৬টার দিকে শহরের গাঙিনারপাড় মসজিদ সংলগ্ন হকার্স সুপার মার্কেটের কাশেম ও শিপুর দোকানে আগুন লাগে। মুহুর্তের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা গোটা মার্কেটের অন্যান্য দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ময়মনসিংহে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানো চেষ্টা করে। কিন্তু পানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ত্রিশাল, ঈশ্বরগঞ্জ, মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়ীয়া ফায়ার সার্ভিসসহ দশটি ইউনিট একযোগে কাজ শুরু করে। দমকল বাহিনী বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ভবন থেকে পানি সংগ্রহ করে আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করে। এভাবে প্রায় পাঁচ ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও কিছুক্ষণ পর মসজিদের মার্কেটের আরো কয়েকটি দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গোটা শহর। এ দৃশ্য শহরের বাইরে কয়েক মাইল দুর থেকেও চোখে পড়ে। আগুনে দেড় শতাধিক দোকানের জুতা, গার্মেন্টস ও কসমেটিকসসহ ভিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠে। বুধবার দিবাগত গভীর রাত পর্যন্ত দোকানদারি করে অনেকেই সেহরীর সময় দোকান বন্ধ করে ঘুমাতে যান। সকালে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে এসে দোকানে আগুন জ্বলতে দেখে মূর্ছা যান। ঈদকে সামনে রেখে তারা প্রচুর মালামাল মজুত করছিল। এখন তারা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলেও জানান ব্যবসায়িরা। আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হলেও গোটা মার্কেটে আগুনের রেশ বিকেল পর্যন্ত ছিল।
কান্নাজড়িত কন্ঠে ব্যবসায়ি হৃদয় জানান, তাদের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস একটি জুতার দোকান। আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে। জুতার দোকানি রবিন ও বিপ্লব জানান, ঈদকে সামনে রেখে সুদ করে টাকা নিয়ে মাল এনেছিলেন। তারা এখন পথের ভিখারি হয়ে গেছেন। আলম সুজ’র মালিক আবুল কালাম আজাদ জানান, ঈদকে সামনে রেখে ঋণ করে প্রচুর মাল মজুত করেছিলেন। তার ১৫ লাখ টাকার জুতা পুড়ে গেছে। হকার্স মার্কেটের ৭২-৭৩ নম্বর রাজু গার্মেন্টেসের স্বত্বাধিকারী রাজু হোসেন কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, বুধবার বিক্রি করা ৮৩ হাজারসহ দোকানের ড্রয়ারে সাড়ে ৩ লাখ টাকা রাখা ছিল। গতকালও ১ লাখ টাকার নতুন জামা কাপড় ঢাকা থেকে এসেছে। এছাড়াও দোকানে মজুত ছিল প্রায় ১০/১২ লাখ টাকার মালামাল। নগদ টাকাসহ দোকানের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তিনি এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন। রাজু আরো বলেন, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কাশেম ও শিপুর দোকানে আগুনের সূত্রপাত হয়। মার্কেটের আশপাশে শত শত ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা নিঃস্ব হওয়ার বেদনায় আহাজারি করেন। গার্মেন্টসের দোকানি শহরের মুন্সীবাড়ির সোহেল মিয়া জানান, ঈদকে সামনে রেখে ধারকর্জ করে ২৫ লাখ টাকার জামা কাপড় তুলেছিলাম। আশা ছিল এই ঈদে বেচাবিক্রি করে যে লাভ হবে তা দিয়ে বাড়ির পুরনো ঘর ঠিক ঠাক করবো।
হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল হক কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আগুনে হকার্স মার্কেটের সবগুলো দোকানপাট ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা ঋণ করে, সূদ নিয়ে একটু লাভের আশায় প্রত্যেকটি দোকানে ঈদ সামগ্রী তুলেন। সব হারিয়ে এখন নি:স্ব এখানকার ব্যবসায়ীরা। তিনি আনুমানিক ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছেন। হকার্স মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সেক্রেটারী মোখলেছুর রহমান অভিযোগ করেন, ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতির কারণে আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল-আমীন জানান, আগুন ও আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন ছিল। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শহিদুর রহমান জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হতে পারে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অর্ধশত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পানি সঙ্কটের কারণে আগুন নেভাতে দেরি হয় বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল আমিন, মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসন ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িদের দুই/এক দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ ও স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যাংক ঋণ প্রদানে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ঘটনার তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো: নায়িরুজ্জামানকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।


আরো সংবাদ



premium cement