২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মূল্য বাড়ালে সিএনজির ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে : ফারহান নূর

-

(মহাসচিব, বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন)
ফারহান নূর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে জ্বালানি ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি তরল জ্বালানি ব্যবসা শুরু করেন। পরে ২০০৭ সালে তিনি পরিবেশবান্ধব সিএনজি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। প্রায় দুই যুগ ধরে জ্বালানি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত এ মেধাবী ব্যবসায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওপর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি ও গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরাপত্তা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছেন নয়া দিগন্তের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের সিনিয়র রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম।
নয়া দিগন্ত : সরকার বর্তমানে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রস্তাব করেছে তা যদি বাস্তবায়ন হয় তাতে সিএনজি সেক্টরে কী ধরনের প্রভাব পড়বে?
ফারহান নূর : দেখুন, এমনিতেই বর্তমানে সিএনজির মূল্য অনেক বেশি। প্রতি ঘনমিটার সিএনজি ৪০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তারপর যদি পুনরায় সিএনজির মূল্য বৃদ্ধি করা হয় তা হলে সিএনজি ব্যবসায়ীদের তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, এত দামে তখন আর কেউ সিএনজি ক্রয় করবে না। সিএনজিচালিত যানবাহনগুলো আবার তরল জ্বালানিতে ফেরত যাবে। এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে তা মুখ থুবড়ে পড়বে। হাজার হাজার লোক তাদের কর্মসংস্থান হারাবে।
নয়া দিগন্ত : বর্তমান প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না?
ফারহান নূর : দেখুন, আমি মনে করি বর্তমান প্রেক্ষাপটে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ, এলএনজি আমদানি মূল্যের সমপরিমাণ মূল্য সিএনজি খাত এখনই পরিশোধ করছে। তাই গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ ছাড়া আমাদের দেশের স্থলভাগ ও সমুদ্রসীমায় যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে সরকার যদি বাপেক্স ও অন্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তা উত্তোলনের ব্যবস্থা করে তবে গ্যাসের যে স্বল্পতা আছে তা দূর হবে বলে আমি মনে করি। যেমন, মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমায় গ্যাসের কূপ খনন করে প্রচুর গ্যাস উত্তোলন করছে। উল্লেখ্য, গ্যাস কেম্পানিগুলোতে যে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা আছে সেখানে যদি সরকার নজরদারি বাড়ায় তা হলে গ্যাসের দাম না বাড়িয়ে বর্তমান মূল্যেই সরকার জনগণকে গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে বলে আমি মনে করি।
নয়া দিগন্ত : সরকার বর্তমানে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় চাহিদার তুলনায় কেন পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না?
ফারহান নূর : বির্ভিন্ন শিল্পকারখানায় যে পরিমাণ গ্যাসের প্রয়োজন সরকার সে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করতে না পারার কারণ হলো, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের স্বল্পতা। আর এ স্বল্পতা সৃষ্টি হয়েছে দিনে দিনে গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়ার কারণে। সরকার গ্যসের মজুদ বৃদ্ধি করার জন্য বাপেক্স ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে দেশের স্থলভাগ ও সমুদ্রসীমায় অনুসন্ধান চালিয়ে নতুন নতুন কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলনের মাধ্যমে এর মজুদ বৃদ্ধি করতে পারে বলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
নয়া দিগন্ত : সিএনজি স্টেশনগুলোতে বর্তমানে আপনারা পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস পাচ্ছেন কি না?
ফারহান নূর : সিএনজি সেক্টরে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাস পাচ্ছি না। আমাদের বেশির ভাগ সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের প্রেসার কম থাকে। ফলে সিএনজিচালিত যানবাহনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয় এবং রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেশনিংয়ের কারণে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা স্টেশনগুলো থেকে যানবাহনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়।
নয়া দিগন্ত : যানবাহনে সিএনজি ব্যবহারের ফলে সাধারণ জনগণ কিভাবে উপকৃত হচ্ছে?
ফারহান নূর : যানবাহনে সিএনজি ব্যবহারের ফলে সাধারণ জনগণ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে বলে আমি মনে করি। যেমন সিএনজিচালিত যানবাহনের মালিকরা অন্যান্য জ¦ালানির তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের জ্বালানি দিয়ে তাদের যানবাহন চালাতে পারছেন বিধায় সাধারণ জনগণের ওপর বাড়তি ভাড়ার চাপ পড়ছে না। দ্বিতীয়ত, যানবাহনে সিএনজি ব্যবহারের ফলে পরিবেশ খাতে সাধারণ জনগণ বহুলাংশে উপকৃত হচ্ছেন। যেমন, ২০০০ সাল বা তার পূর্বে ঢাকা শহরে যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষকে কিছুক্ষণ পরপর ভেজা রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে হতো। কিন্তু বর্তমানে ঢাকা শহরে যানবাহনের কালো ধোঁয়ায় সৃষ্ট সে পরিবেশ নেই। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাত বিবেচনায় সাধারণ জনগণ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছে। যেমন, বায়ুদূষণজনিত কারণে সৃষ্ট রোগবালাই থেকে মানুষ রেহাই পাচ্ছে।
নয়া দিগন্ত : এ খাতে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ কত এবং কী পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে?
ফারহান নূর : দেখুন, এ খাতে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ মেলায় গিয়ে ঢাকা শহরসহ সারা দেশকে বায়ুদূষণ থেকে রক্ষার জন্য সিএনজিকে বেসরকারীকরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে সময় থেকেই সিএনজির গোড়াপত্তন হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ উৎসাহেই ব্যবসায়ীরা এ খাতে বিনিয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলা পাঁচ লক্ষাধিক থ্রি হুইলারের চালকসহ এ খাতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
নয়া দিগন্ত : বিভিন্ন সময়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। আপনি কি মনে করেন না সিএনজি ব্যবহারের কারণে মানুষ নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকে?
ফারহান নূর : না, সিএনজি ব্যবহারের কারণে মানুষ নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থকে, এটা আমি মনে করি না। কারণ, সারা বিশ্বেই সিএনজি হলো একটি গড়ফরভরবফ ঝুংঃবস। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে যানবাহনে সিএনজির ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা ব্যবহার করতে হলে জনগণকে এর সিলিন্ডার ব্যবহারসংক্রান্ত নিয়মকানুনগুলো ভালোভাবে জানতে হবে। যেমন, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষণের নিয়ম রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যানবাহনে স্থাপিত সিলিন্ডারগুলো পুনঃপরীক্ষণের বিষয়ে বিআরটিএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া, সিএনজিতে কনভার্সন করা যানবাহনটির ম্যাকানিক্যাল সক্ষমতা প্রতি বছরই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। তা হলে মনুষকে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকতে হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক

সকল