২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব

-

দৃশ্যত আমরা মনে করি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র পরাশক্তি, যা সারা বিশে^ নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সব সময় ব্যস্ত থাকে। অথবা মনে হয়, বিশে^র বিভিন্ন অংশে কিছু আঞ্চলিক শক্তির প্রভাব কাজ করে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রথমেই মনে রাখতে হবে, এখনকার বিশ^পরিস্থিতি আর এখন থেকে ১০০ বছর আগের বিশ^পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন যদি বলা হয়, বিশে^র নিয়ন্ত্রণ পরাশক্তিগুলোর হাতে নয়, বরং মাত্র ১৩টি পরিবার সারা বিশ^ পরিচালনা করে, তাদেরই ইশারায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য শক্তি নাচতে থাকে, তাহলে সাধারণ লোকেরা হয়তো চমকে উঠবে। আর কিছু উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি এটিকে নাম দেবেন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। অথচ এটাই বাস্তব। সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ১৩টি পরিবারের হাতে বিশে^র মোট সম্পদের শতকরা ৯৯ ভাগ। অবশিষ্ট ১ ভাগ নিয়েই পুরো বিশ^ দ্বন্দ্বে লিপ্ত। এই ১৩ পরিবার এক গোপন ব্যবস্থায় নিজেদের কায়কারবার পরিচালনা করে এবং অদূর ভবিষ্যতে পুরো বিশে^ নিজেদের অশুভ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করে রেখেছে।
বস্তুত এটি একটি গোপন অশুভ চক্র। এই চক্রের সদস্য প্রায় ৩০০। তাদের অধীনে রয়েছে নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থা যেমন অন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ^ব্যাংক ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো। সাধারণ ভাষায় এগুলো মাল্টিন্যাশনাল বা বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। এসব কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় সংগঠন, মিডিয়া ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আইনজীবী, শিক্ষাবিদ এমনকি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ওপরও প্রভাব সৃষ্টি করে তারা। তাদের অধীনে সারা বিশে^ কর্মরত কোটি কোটি মানুষ জানতেও পারে না তাদের নিয়ন্ত্রণ করে কারা। সাধারণ কর্মীরা মনে করে, আঞ্চলিক শাসকেরা তাদের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ তারা টেরই পায় না যে, তাদের ভালো-মন্দের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তাদের শাসকদের নেই। এই ক্ষমতা অন্য কারো। গোপন এই চক্রের খবর গোপনই থেকে যায়।
অবশ্য শয়তানি চক্রের খবর বেশিদিন গোপন থাকতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা তার কোনো কোনো বান্দাকে দাঁড় করান অশুভ চক্রের বিরুদ্ধে এবং অশুভ চক্রের তৎপরতা ফাঁস করতে। এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন মিসরের আইনুশ শামস বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক আবদুল ওয়াহহাব আলমাসিরি। আরব বিশে^ তিনিই প্রথম প্রণয়ন করেছিলেন মওসুয়াতুস সাহয়ুনিয়াহ বা এনসাইক্লোপিডিয়া অব জায়নিজম। তিনি ছিলেন আরব বিশে^র অন্যতম সেরা শিক্ষাবিদ ও মনীষী। ২ জুলাই ২০০৮ সালে তিনি কায়রোয় ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের খবর প্রচার হলে তেলআবিব ও নিউ ইয়র্কসহ সারা বিশে^র ইহুদি মহলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।
কুয়েত থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন আল মুজতামার এক রিপোর্ট অনুযায়ী, এই চক্র বা ১৩ পরিবারের পরিকল্পনা হলো সারা বিশে^ একক বিশ^ব্যবস্থা চালু করা। তাতে সারা বিশে^র রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে অভিন্ন প্ল্যাটফরমে একত্র করে একটি আন্তর্জাতিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হবে জেরুসালেম। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুসালেমে স্থানান্তর করলেন, তা এ থেকেই সহজে বোঝা যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশে^র বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা হবে। পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করা হবে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক ধাপ নামিয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রের সমপর্যায়ে আনাই তাদের পরিকল্পনা। রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বিশে^র জনসংখ্যা কমিয়ে আনাও এই চক্রের পরিকল্পনার অংশ। কেননা তাতে সারা বিশ^কে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। বিশে^র জনসংখ্যা কমানোর জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের হাতিয়ার ও কৌশল ব্যবহার করা হবে। এ ক্ষেত্রে নীতিনৈতিকতার কোনো বন্ধন মানা হবে না। নতুন নতুন দুরারোগ্য বিভিন্ন ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটানো, বিভিন্ন ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া, কৃত্রিম উপায়ে তৈরি খাবারের প্রসার ঘটানো ইত্যাদি তাদের কৌশল। যেমন ফার্স্টফুডের নামে এমন এমন খাবার বাজারে ছাড়া হবে, যেগুলো মানুষের কর্মক্ষমতা নষ্ট করবে। তা ছাড়া, রয়েছে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবসা ও যুদ্ধবিগ্রহ বাধানো। এমন একটি খবরও রয়েছে যে, ক্যান্সার ও এইডসের মতো মরণব্যাধির প্রতিষেধক ও চিকিৎসাও তাদের কাছে আছে। কিন্তু তারা তা গোপন রেখেছে। কারণ, এসব রোগের বিস্তারে তাদের ভূমিকা রয়েছে এবং বিশে^র জনসংখ্যা কমিয়ে আনতে হলে এসব ব্যাধির ব্যাপকতা এতে সহায়ক হবে।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, এই ১৩টি পরিবারের কাছে এই পরিমাণ সম্পদ রয়েছে যে, বর্তমানে বিশে^র সবচেয়ে ধনী হিসেবে পরিচিত বিল গেটস তাদের সামনে কিছুই নন। এই ১৩ পরিবারের যোগাযোগ ও কারবার সম্পূর্ণ গোপনে সম্পন্ন করা হয়। এ জন্য তাদের ব্যাপারে খুব কম মানুষ জানে। এমনকি তাদের নামই শোনেনি অনেক মানুষ। এই ১৩ পরিবারের নামÑ অস্টার (অঁংঃড়ৎ), ফ্রিম্যান (ঋৎববসধহ), রাসেল (জঁংংবষ), ওনাসিস (ঙহঁংংরং), বান্ডি (ইঁহফু), রকফেলার (জড়পশবভবষষবৎ), কলিন্স (ঈড়ষষরহং), কেনেডি (কবহহবফু), লি (খর), ভেনডুয়িন (ঠধহফুঁহ), রথশাইল্ড (জড়ঃযবপযরষফ)ও ডু পন্ট (উঁ ঢ়ড়হঃ)।
সারা বিশে^ ছড়িয়ে থাকা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ৬২০। আর তাদের মোট মূলধনের পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ কোটিরও বেশি। এগুলোর মধ্য থেকে ৪০টি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এশিয়ার দেশ ও বাজারগুলো দখল করে রেখেছে। এসব কোম্পানির কারসাজিতে এ পর্যন্ত যেসব দেশ ইতোমধ্যে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে সেরেছে, সেই তালিকায় রয়েছে সুদান, সোমালিয়া, উত্তর কোরিয়া, রুয়ান্ডা, জিম্বাবুয়ে, এল সালভাদর, ইউক্রেন, মাল্টা, আলবানিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া ইত্যাদি দেশের নাম। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো কিভাবে বিশে^র মানুষকে গোলাম করে রেখেছে, তার একটি উদাহরণই যথেষ্ট হবে বলে আশা করি। নেসলে কোম্পানি প্রতি বছর কয়েক লাখ টন সম্পূর্ণ খাদ্যোপযোগী সামগ্রী সাগরে ডুবিয়ে দেয় বাজার ঠিক রাখার জন্য। উদ্দেশ্য, বিশ^বাজারে যেন তাদের পণ্যের চাহিদা বজায় থাকে। এই কোম্পানি সারা বিশ^ থেকে খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করার দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। এসব উপাদান সংগ্রহ করে তা থেকে খাদ্যপণ্য উৎপাদন করার পর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নিজেদের ইচ্ছামতো মূল্যে সরবরাহ করা হয়। এই কোম্পানির সম্পদ এই পরিমাণ যে, বলা হয়ে থাকে নেসলে চাইলে আফ্রিকার এক একটি দরিদ্র দেশের জনগণের জন্য কয়েক দশক বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement