২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টেকসই পুঁজিবাজারে প্রয়োজন সুশাসন

-

সময়ের সাথে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নয়নের তালিকায় বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এখন সাড়ে ৭ শতাংশের উপরে। কিন্তু উন্নয়নের সহযাত্রী হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। বিদায়ী ২০১৮ সাল শেষে (জিডিপি) অনুপাতে পুঁজিবাজারের আকার কমেছে। এখন যা গত ৯ বছরের মধ্যে বর্তমানে যা সর্বনি¤েœ। বিদায়ী বছরে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়েছে দুর্বল, দীর্ঘদিন অনুৎপাদনে থাকা ও বিতর্কিত ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ার দর। যদিও এই সময়ে সময়ে শতাধিক কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিদায়ী বছরে পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে বেড় সুখবর ছিল চীনা কনসোর্টিয়ামের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়া। কিন্তু তারপরও বাজারে কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম্য কমছে না। এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে যথাসময়ে তদন্ত ও উদ্যোগ না নেয়াকে। বিএসইসির দীর্ঘায়িত তদন্তের সময়ই মুনাফা তুলে নিয়ে সাইড লাইনে চলে গেছেন মুনাফাখোররা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রায় ১১ শতাংশই এখন লোকসান গুনছে। এর মধ্যে অনেক পুরনো কোম্পানি রয়েছে, যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এক সময়ে। কিছু কোম্পানি লোকসান গুনছে শুধু রাজনৈতিক কারণে।
গত বছরের জুন ক্লোজিংয়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ১৬০টির বেশি বিনিয়োগকারীকে লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে ১৩৯টি গত অক্টোবর মাসের মধ্যে ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এসবের মধ্যে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শুধু বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৪০টির কোম্পানি, বোনাস ও নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ২৭টি, কোনো লভ্যাংশ দেয়নি ১২টি, ২৮টি কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যা বছর শেষেও অব্যাহত ছিল। ২০১৮ সাল শেষেও সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বোনাস শেয়ার আসার তথ্য পাওয়া গেছে। বিশাল এই বোনাস শেয়ারের ভার নেয়ার সক্ষমতা নেই আমাদের পুঁজিবাজারের। অথচ ২০১৭ সালে বাজার থেকে কোম্পানিগুলো বোনাস শেয়ারের মাধ্যমেও নিয়েছিল দুই হাজার ৭৯১ কোটি টাকা।
বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন বছর শেষে মুনাফার আশায়। কিন্তু কোম্পানিগুলো বোনাস শেয়ার ধরিয়ে দিলে দৈনিক মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতাই বৃদ্ধি পায়। এতে শেয়ার কারসাজি চক্রের সংখ্যাও বাড়ে। গত বছরে শেয়ার কারসাজি চক্রের খপ্পরে ছিল বিতর্কিত কোম্পানি মুন্নু জুট স্ট্যাফলার। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি আলোচিত-সমালোচিত ছিল অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে। কল্পকাহিনী ছড়িয়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও জড়িত ছিলেন বলে শোনা যায়। এই সময়ে স্টাইলক্র্যাফট, ইমাম বাটন, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, দুলামিয়া কটন, আজিজ পাইপস, সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের শেয়ারেও চলে কারসাজি।
এসবের মাঝে ১৩টি কোম্পানির বিরুদ্ধে শেয়ার দর বৃদ্ধি সংক্রান্ত তদন্ত করেছে বিএসইসি। এ ছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নানা অনিয়মের কারণে পুঁজিবাজারের সাথে জড়িত মোট ১৭৪ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সতর্ক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এর মধ্যে ১০৭টিকে সতর্ককরণের পাশাপাশি ৬৭টিকে জরিমানা করা হয়েছে। ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি জরিমানা করা হয়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও পরিচালকদের। এ সময়ে ৫৪টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও পরিচালককে জরিমানা করা হয়। এর পরের অবস্থানে ছিল স্টক ব্রোকার ও ডিলাররা। এ বছর বিএসইসি ১১টি স্টক ব্রোকার-ডিলারকে জরিমানা করেছে।
কিন্তু এসবের আশানুরূপ প্রভাব পড়েনি গত বছর। কারণ হিসেবে বিনিয়োগকারী মনে করছেন, তদন্ত ও শাস্তি সময়োপযোগিতা না হওয়া। কোনো শেয়ারে যখনই কারসাজি হয় তখনই হস্তক্ষেপ করা উচিত। এতে বাজার সামান্য ভীতিকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা বাজারে আস্থা নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারেন। নতুন বিনিয়োগকারীও উৎসাহিত হন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর উদ্যোগ সময়োপযোগী না হওয়ায়, গত বছর পুঁজিবাজার থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে। বছরের ব্যবধানে লেনদেনসহ ডিএসইর সব সূচকের পতন ঘটেছে। পাশাপাশি বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকেরা বলে আসছেন, পুঁজিবাজার থেকে গত ১০ বছরে মূলধন সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির বেশির ভাগই স্বল্প মূলধনী। তালিকাভুক্তির পর থেকেই তাদের আচরণ বিনিয়োগকারী বান্ধব হয়নি। কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হয়েছে শুধু কর সুবিধা নেয়ার জন্য। কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে। কোম্পানিগুলো এসব সুবিধা নিলেও বিনিয়োকারীদের প্রতি সুবিচার করেনি।
২০১৮ সালে নতুন কিছু প্রোডাক্ট হিসেবে এসএমই এবং অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এসব কারণে গত বছরে আশানুরূপ গতি অর্জন করতে পারেনি দেশের পুঁজিবাজার। বিষয়টির সাথে বিভিন্ন সময়ে নিজেদের বৈঠকে একমত পোষণ করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা। বর্তমানে পুঁজিবাজারের আকার দাঁড়িয়েছে জিডিপির ১৭ শতাংশ। ২০১৭ সালে এ আকার ছিল ২১ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে কমেই যাচ্ছে।
বাজারের আশানুরূপ উন্নয়ন না হওয়া, দুর্বল কোম্পানির দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি, যথাসময়ে তদন্ত না হওয়া, ভালো কোম্পানির অভাবের জন্য সবাই দায়ী করছেন সুশাসনের অভাবকে। সুশাসন না থাকার ফলে যার যা খুশি করতে পারছে। বাজারে দুর্বল কোম্পানিই তালিকাভুক্ত হচ্ছে বেশি। পুরনো বছরের অনেক কাজই জমে রয়েছে। নতুন বছরে নতুন পরিকল্পনার সাথে সেসবও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য সুশাসন নিশ্চিত হওয়াকেই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন সবাই। যেনতেন উদ্যোগ না নিয়ে গ্রহণযোগ্য ও দৃশ্যমান উদ্যোগ চান বিনিয়োগকারীরা। সব ক্ষেত্রেই চান স্বচ্ছতা। তাহলেই দেশের পুঁজিবাজার অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহযাত্রী হতে পারবে।


আরো সংবাদ



premium cement
হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল

সকল