১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

খেলাপি ঋণ মুক্তির উপায়

-

ঋণগ্রহীতাদের ঋণখেলাপি বানাতে ব্যাংকাররাই চেষ্টা করেন। এটা খুব ভালো কথা নয়, কিন্তু আমি সে কথাটি বলতে চাই। আমার ধারণা, যখনই কোনো একটা প্রকল্প বা উদ্যোক্তাকে একটি ব্যাংক ঋণ দেবে বলে ঠিক করে, তখন তাকে ঋণের প্রথম কিস্তি হয়তো দিয়ে দেয়া হলো। তার পর থেকেই ব্যাংকাররা চেষ্টা করেন যাতে ওই উদ্যোক্তা ঋণখেলাপি হতে পারেন। ব্যাংকাররাই এ অবস্থা সৃষ্টি করেন। আমার মনে হয় ঋণগ্রহীতাদের ঋণখেলাপি বানানোর এ প্রচেষ্টা ব্যাংকারদের একটা অস্ত্র, যেটা তারা ব্যবহার করেন এবং করতে চান। এটা অত্যন্ত খারাপ। আমার একটা উপদেশ হচ্ছে, এ লক্ষ্য থেকে আপনারা বিরত থাকবেন। আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু করুন এ ব্যাপারে। আপনাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।
গত ১৮ নভেম্বর কথাগুলো বলেছিলেন খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট মিলনায়তনে এক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ওই অনুষ্ঠানে আরো বলেন, একটা সময় সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড় ব্যাংক ছিল। সেই অবস্থান এখন নেই। অনেকেই বলতে চান ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আরেকটি কথা বলা হয়, আমাদের এখানে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় সমালোচনা আছে ঋণ নিয়ে। ১০টি সরকারি ব্যাংক নিয়ে এ সমস্যার কথা বলা হয়। আর বেসরকারি ব্যাংকের বিষয়ে বলা হয় ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকরা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। তিনি তার ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেন না। এ বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কষ্টকর। তবে এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আমাদের উপায় বের করতে হবে।
হ্যাঁ, অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন একান্তই তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। তবে, তিনি শুধু ব্যাংকারদেরই দোষ দিলেন। কিন্তু এক শ্রেণীর রাঘববোয়াল যে ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে বছরের পর বছর তা আটকে রাখছেন, আর ফেরত দিচ্ছেন না, নানা অনিয়মের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিচ্ছেন ওইসব তাদের কথা হয়তো অর্থমন্ত্রী বলতে ভুলেই গেছেন, অথবা রাজনৈতিক কারণে তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন। তবে, একটি অখ্যাত কোম্পানি হলমার্কের মাধ্যমে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে বের করে নেয়া, রাজনৈতিক বিবেচনায় মনোনীত বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় একসময়ের উদাহরণ দেয়া যেত সেই বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে বের করে নেয়া, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন খান আলমগীরের ছত্রছায়ায় ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির সাথে সরাসরি ব্যাংকাররা যে জড়িত ছিলেন না সে কথা অর্থমন্ত্রী ভুলেই গেছেন। এর বাইরে বড় কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ রাতারাতি ব্যাংকের মালিক বনে গিয়ে নানা কায়দা কৌশলে ব্যাংকিং খাতকে দুর্বল করে ফেলছেন সে কথাও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে আসেনি। অর্থমন্ত্রী শুধু ব্যাংকারদেরই দোষারোপ করেছেন, যারা হুকুমের গোলাম। কর্তাদের কথা না মানলে বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করলে ছা পোষা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি, পদাবনতি, পদোন্নতি বন্ধ, আরো কত যে মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হয় সে কথা কেউ বলেন না, বা শোনেন না। তবে, যাই হোক অর্থমন্ত্রী খেলাপি ঋণ সৃষ্টির পেছনে যে আংশিক সত্য বাক্য উচ্চারণ করেছেন; বর্তমান সময়ে এ কথাইবা বলে কে? এ কারণে আমাদের অর্থমন্ত্রীকে সাধুবাদ দেয়া যেতেই পারে।
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকাররা বলে আসছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছেন না কিছু ব্যবসায়ী। দীর্ঘ দিন যাবত ঋণ পরিশোধ না করায় এ ঋণ এখন আদায় অযোগ্য বা কুঋণে পরিণত হয়েছে। এদের কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ঋণ নবায়ন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কিস্তি পরিশোধ না করায় আবার ওই ঋণখেলাপি হয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার তালিকায় থাকা শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপির পকেটে রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। যদিও এ তালিকায় অনেক রাঘববোয়াল ঋণগ্রহীতার নাম নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ৫০০ ও এক হাজার কোটি টাকার ও পরের ঋণ খেলাপিদের মাত্র ১ ও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুবিধায় ১৪টি প্রতিষ্ঠান এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করেছেন। পুনর্গঠন করা না হলে খেলাপিদের তালিকায় এসব প্রতিষ্ঠান শীর্ষে থাকত। ঋণখেলাপি নিয়ে সেপ্টেম্বরে করা সর্বশেষ তালিকায় ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ঋণখেলাপির সংখ্যা এখন পাঁচজন। এ পাঁচটিসহ শীর্ষ ২৫টি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল ১০ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় করেছে মাত্র ৯৩৫ কোটি টাকা। বাকি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকাই দীর্ঘ দিন যাবত ব্যাংকের খাতায় কুঋণ হিসেবে আটকে রয়েছে। দীর্ঘ দিন যাবত আদায় না হওয়ায় এ ঋণ এখন ব্যাংকের খাতায় গলার কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ এসব খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের আয় থেকে প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। পাশাপাশি এসব ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ আয় খাতে স্থানান্তরিত করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকের বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মামলা করেও দীর্ঘ দিন যাবত তা ঝুলে রয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কয়েক বছর ধরে বিপদসঙ্কেত বাজিয়ে যাওয়া বিষয়। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন খাতের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের বিপরীতে ব্যাংক খাতে উল্লেখযোগ্য অবনতির দাগ প্রকাশ করছে এ খেলাপি ঋণ। সরকারের অন্যান্য সাফল্যকে সবচেয়ে বেশি ঢেকে দিচ্ছে ব্যাংকিং খাতের এ কালো দাগ। খেলাপি ঋণের এ প্রভাব সুদূরপ্রসারী। যদি শক্ত হাতে একে মোকাবেলা করা না হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধসের কারণ হতে পারে ব্যাংকিং খাতের এ কালো ছায়া।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮০ হাজার কোটি টাকার উপরে, যা বছর শেষে কমে ৭৪ হাজার কোটি টাকার মতো হয়। এ কমানো সংখ্যা নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে। যা হোক, যদি এ সংখ্যাও সঠিক হয়, তাহলেও ২০১৮ সালের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। আর অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের এ পরিমাণ বেড়ে হয়েছে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণের কারণে গোটা অর্থনীতি আসলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়লেও ঋণগ্রহীতার যে কোনো বিপদ নেই, তা ভাবার কারণ নেই। আখেরে ঋণগ্রহীতার ক্ষতি সবচেয়ে বেশি ভাবা যেতে পারে। তবে তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বর্তমান অবস্থা যদি চলতেই থাকে, তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের জন্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে আমার মনে হয় না। ঋণখেলাপিরা যদি আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে সুবিধাভোগী দল বনে যায়, তাহলে সাধারণ ভালো ব্যবসায়ী, যারা ঋণের সঠিক ব্যবহার করে এবং নিয়মিত পরিশোধ করে, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি ঝামেলার শিকার হন। কারণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সাবধানতা বা শুদ্ধাচার তাদের ওপর চালানো হয়। অনেক সময় ভালো ব্যবসায়ী এমনকি ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
এখন এ খেলাপি ঋণের বোঝা কিভাবে মাথা থেকে নামানো যেতে পারে, তার পথ বের করা জরুরি। ঋণ দেয়ার আগে ভালো করে যাচাই করতে হবে, ঋণের টাকা সঠিক পথে ব্যবহার হয় কি না, তা নিয়মিত নজরে রাখতে হবে, নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে ইত্যাদি পরামর্শ খুব কমন এবং এগুলো বর্তমানে খেলাপি ঋণের চেয়ে ভবিষ্যৎ খেলাপি হতে পারে এমন ঋণের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। তাহলে বর্তমানে যেগুলো খেলাপি, সে ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে। অনেক কিছুই করা যেতে পারে, তবে তার বেশির ভাগই রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করে, কিছু কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে, কিছু ক্ষেত্রে কঠোর হয়ে, আবার কিছু ক্ষেত্রে নরম হয়ে রাষ্ট্র তথা সরকার এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ বেছে নিতে পারে। এমন কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যার সব অথবা কিছুসংখ্যককে সঙ্কট উত্তরণের পথ হিসেবে যাচাই-বাছাই করা যেতে পারে। এখনই, সম্ভব হলে আজকেই আইন প্রণয়ন করা, যাতে করে খেলাপি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেকে খেলাপি না দেখানোর জন্য আদালতের স্থগিতাদেশ নিতে না পারে।
বর্তমানে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো আদালতের স্থগিতাদেশ। বর্তমানে বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে রিপোর্ট করে। ফলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সবার কাছে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়। আর খেলাপি কোনো ব্যক্তি নতুন ঋণ পাবে না, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না, এমন আরো কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়। ফলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আদালত থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্থগিতাদেশ নিয়ে থাকেন, যাতে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি না দেখানোর আদেশ দেয়া হয়ে থাকে। এ অবস্থা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘদিন চলতে থাকে এবং এ সুযোগে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নতুন ঋণ নিতে পারে, নির্বাচন করতে পারে এবং অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসে। তা ছাড়া বন্ধকীকৃত সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করতে গেলেও আদালতের স্থগিতাদেশ বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুই লাখ ৮১ হাজার মামলার বিপরীতে ঝুলে আছে এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এর মধ্যে অর্থঋণ আদালতেই ঝুলে আছে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার মামলা।
ঋণখেলাপি হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নতুন করে ঋণ নিতে পারেন না। এমনকি কোনো জাতীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারেন না। ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলো তাই ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কিন্তু কিছু বড় ঋণখেলাপি ঋণ পরিশোধ না করতে বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ব্যাংকগুলো যাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চ আদালতে রিট করেন, তাকে যাতে ঋণখেলাপি বলা না হয়।
উচ্চ আদালত থেকে রিট করেই আবার নতুন করে ঋণ গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। প্রভাবশালী হওয়ায় তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ বের করে নেন। ব্যাংকের খাতায় ঋণখেলাপি হয়েও আইনের ফাঁক গলিয়ে নতুন করে ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করেন না। আবারও ঋণখেলাপি হন। এভাবেই বছরের পর বছর এক শ্রেণীর বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করছেন না। ব্যাংক অনেকটা নিরুপায় হয়ে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু আদালতস্বল্পতার কারণে আবার ওই মামলাও বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এভাবেই আদালতে মামলার পাহাড় জমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে মামলার হালনাগাদ প্রতিবেদন করা হয়েছে গত ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্য নিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ৯৩ হাজার ৭০০ মামলা আছে বিভিন্ন আদালতে। এতে আটকে আছে প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা।
আদালতভিত্তিক মামলাগুলোর মধ্যে অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা রয়েছে ৫৭ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আটকে আছে ৮৮ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। দেউলিয়া আদালতে মামলা আছে ১৫৯টি। এর বিপরীতে আটকে আছে ৬০১ কোটি টাকা। অন্যান্য আদালতে বিচারাধীন ৩৫ হাজার ৯৬৩টি মামলার বিপরীতে আটকে আছে ২৪ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংক থেকে অতীতে যেসব ঋণ নেয়া হয়েছে বেশির ভাগই রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ফলে এসব ঋণের বেশির ভাগই আদায় হয়নি। আর ঋণ আদায় না হওয়ায় একপর্যায়ে মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। মন্দ ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলোর মামলা করতে হয়। কিন্তু আইনগত জটিলতায় এসব মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় খেলাপি ঋণের পাহার জমে গেছে সরকারি ব্যাংকগুলোতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী অর্থঋণ আদালতসহ সব আদালতে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের আছে ৪৮ হাজার ৮৮৩ টাকা। এর বিপরীতে মামলা আছে ২২ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্থঋণ আদালতে ১৮ হাজার ৭৯৪টি মামলার বিপরীতে আছে ৪০ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা, দেউলিয়া আদালতে ১১৪টি মামলার বিপরীতে আছে ৪৩০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য আদালতে চার হাজার ১৫টি মামলার বিপরীতে আছে সাত হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।
মামলাগুলোর পর্যালোচনায় ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই রায়ের পর আদালতের স্থগিতাদেশ নেয়া। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত খেলাপিরাই আদালতের স্থগিতাদেশ নেয় এবং দিনের পর দিন তা ঝুলিয়ে রাখে।
খেলাপি ব্যক্তির এমনকি যদি আদালতে স্থগিতাদেশও থাকে, খেলাপি না বলার জন্য বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে। যেকোনো এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে খেলাপি ব্যক্তির নামে।
ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যক্তিগত গাড়ি থাকার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া যেতে পারে। যে খেলাপি, যার টাকা নেই ঋণ পরিশোধের, তার গাড়ি থাকবে কেন? বর্তমানে যেগুলো থাকবে, সেগুলো পরবর্তী বছরের ফিটনেস দেয়া বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement