১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

সর্বস্তরে সুশাসন ছাড়া বেশি সামনে এগোনো যাবে না

-

মো: গোলাম ফারুক। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন চতুর্থ প্রজন্মের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে। দেশের ব্যাংকিং খাতের গতিপ্রকৃৃতিসহ এসবিএসির বিষয়ে কথা বলেন নয়া দিগন্তের প্রতিনিধির সাথে

নয়া দিগন্ত : দীর্ঘ ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে রাষ্ট্রায়ত্ত একাধিক ব্যাংকে কাজ করেছেন। এখন দায়িত্ব পালন করছেন চতুর্থ প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী পদে। এ দুই খাতের ব্যাংকের মধ্যে মৌলিক তফাত কী দেখছেন?
মো: গোলাম ফারুক : যেকোনো দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হলো ব্যাংকিং খাত। এ খাতের সুস্থতার ওপর ব্যবসাবাণিজ্যের উত্থান-পতন অনেকাংশেই নির্ভর করে। স্বাধীনতার পর বিদেশী ব্যাংক ছাড়া দেশের সব ব্যাংক সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। এরপর সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোই দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। সে হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত সরকারি ব্যাংকগুলোই গড়েছিল। এরপর আশির দশকের শুরুতে বেসরকারি ব্যাংক আসার পর দেশের ব্যাংকিং খাত অনেক বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের প্রায় ৭০ শতাংশই বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণে।
তবে এটি ঠিক, সরকারি ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সুশাসনের ঘাটতির বিষয়ে অনেক দুর্নাম ছড়িয়েছে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরেও পুরোপুরি করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। একটি উদীয়মান অর্থনীতি সম্প্রসারণের শুরুর দিকে কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে। তবে অর্থনীতিকে একটি সুদৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করাতে হলে অবশ্যই সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের অভ্যন্তরে কার্যকর সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। সর্বস্তরে সুশাসন ছাড়া আমরা খুব বেশি সামনে এগোতে পারব না।
নয়া দিগন্ত : ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ভেঙে পড়ার জন্য পরিচালনা পর্ষদ না ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কাকে বেশি দোষারোপ করবেন?
মো: গোলাম ফারুক : কার্যকর সুশাসন যেকোনো ব্যাংকের বেড়ে ওঠার প্রধান সিঁড়ি। আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে মানুষ ব্যাংকের কাছে টাকা রাখে। কোনো ব্যাংক আমানতকারীদের সম্পদ যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে, সে ব্যাংক বিলুপ্ত হতে বাধ্য। একটি পরস্পরবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে ব্যাংকারকে এগিয়ে যেতে হয়। বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদ চায় সর্বোচ্চ মুনাফা। ঋণগ্রহীতা চায় সর্বনি¤œ সুদহারে ঋণ পাওয়ার নিশ্চয়তা। অন্য দিকে আমানতকারী চায় ব্যাংক সর্বোচ্চ হারে আমানতের সুদ পরিশোধ করুক। পরস্পরবিরোধী এ পরিস্থিতির মোকাবেলা করার জন্যই দরকার পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সমন্বয় ও স্বচ্ছতা।
এসবিএসি ব্যাংকের পর্ষদকে আমি বলে দিয়েছি, উদ্যোক্তাদের ৪০০ কোটি টাকার মূলধন পাহারা দেয়ার জন্য আমি দায়িত্ব নিইনি। আমার প্রধান দায়িত্ব জনগণের আমানতের পাহারা দেয়া। আমানতের সুরক্ষা দেয়াই একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপকের প্রধান কাজ।
নয়া দিগন্ত : বেসরকারি খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। কেন?
মো: গোলাম ফারুক : এটি ঠিক, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের বিনিয়োগে কিছুটা স্থবিরতা আছে। এর পেছনে নানামুখী কারণ রয়েছে। ব্যাংকে আমানতের সুদহারের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার প্রায় দ্বিগুণ। এ অবস্থায় মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্রে বেশি বিনিয়োগ করছে। বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সরকার অনেক বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছে। বিদায়ী বছর ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও (ঋণ ও আমানতের অনুপাত) বেড়ে গিয়েছিল। আগামী মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সীমার মধ্যে ব্যাংকগুলোকে এডি রেশিও নামিয়ে আনতে হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের চেয়ে আমানত সংগ্রহে বেশি জোর দিচ্ছে।
এ ছাড়া নির্বাচনী বছর হওয়ায় ব্যাংক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক। উদ্যোক্তারাও এ মুহূর্তে সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে। তবে আশা করছি, আগামী জুনের পর ব্যাংকের বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
নয়া দিগন্ত : ২০১৩ সালে একসঙ্গে ৯টি বেসরকারি ব্যাংক যাত্রা করেছিল। এর মধ্যে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড একটি। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের অগ্রগতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
মো: গোলাম ফারুক : প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক সফলতার পথেই হাঁটছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের কাছে গ্রাহকদের পাঁচ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকার আমানত জমা হয়েছে। একই সময়ে এসবিএসি ব্যাংক চার হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আশার কথা হলো, আমাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত আছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার নিয়ন্ত্রণহীন হলেও এসবিএসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ২ শতাংশের নিচে। মুনাফার দিক থেকে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমরা সামনের সারিতেই অবস্থান করছি। চলতি বছর অধিকাংশ ব্যাংকের মুনাফা কমলেও আমরা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২৮ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা পেয়েছি। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১০৭ কোটি টাকা।
নয়া দিগন্ত : ৫৯টি তফসিলি ব্যাংকের পরও আরো নতুন ব্যাংক আসছে। এটিকে কিভাবে দেখছেন?
মো: গোলাম ফারুক : আমাদের দেশের অর্থনীতির আকারের সাথে তুলনা করলে হয়তো ব্যাংকের সংখ্যা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কিন্তু দেশের ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা এলাকা বিবেচনা করলে আরো ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। তবে আমরা চাই একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা।
নয়া দিগন্ত : দেশের দক্ষিণ বাংলার উন্নয়নের কথা আপনার ব্যাংকের নামের সাথেই যুক্ত। দক্ষিণ বাংলার জন্য কী করছেন?
মো: গোলাম ফারুক : এসবিএসি ব্যাংকের অর্থই হলো দক্ষিণ বাংলা কৃষি ও কমার্স ব্যাংক। নামের যথার্থতা ধরে রাখতেই আমরা খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে সর্বোচ্চ শাখা খুলেছি। কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নসহ কৃষকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ আমাদের অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচি। এসবিএসি ব্যাংকের গ্রামীণ শাখাগুলো সত্যিকার অর্থেই গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
নয়া দিগন্ত : এসবিএসি পরিবার ও গ্রাহকদের প্রতি আপনার বার্তা কী?
মো: গোলাম ফারুক : এসবিএসি ব্যাংকের পরিচালক, উদ্যোক্তা, ৮০০ কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের নিয়ে আমরা একটি পরিবার। এ পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ভালো-মন্দের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে চাই। আমাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই ব্যাংকের প্রতিনিধিত্ব করছে। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু না করেও আমরা দেশের সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে চাই।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নাভালনির মৃত্যু : ৩০ রুশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ইইউর সালাম মুর্শেদীকে গুলশানের বাড়ি ছাড়তে হাইকোর্টের নির্দেশ গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্যে মিসর ও সৌদি আরব যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন আমাকে অ্যাপ্রোচ করেছিল, আমি গ্রহণ করিনি : মেজর অব. হাফিজ জাতিসঙ্ঘ সংস্থার প্রধানকে গাজায় প্রবেশে বাধা ইসরাইলের মিয়ানমারে বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবরে ‘শঙ্কিত’ জাতিসঙ্ঘ প্রধান ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ২৩ হলমার্ক কেলেঙ্কারি : তানভীর-জেসমিনসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন লক্ষ্মীপুরে উপড়ে ফেলা হয়েছে যুবলীগ নেতার চোখ ঝড়-বৃষ্টির আভাস, কমবে তাপমাত্রা ফ্রান্সে কমিউনিটি মসজিদের ইফতার মাহফিল

সকল