১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

পোশাক শিল্পের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

-

বাড়তে বাড়তে রফতানি বাণিজ্যে ৮৮ শতাংশ অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে দেশের তৈরী পোশাক শিল্পখাত। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হয়েও তৈরী পোশাকের বিশ্ববাজারে নাম লিখিয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানিকারকের খাতায়। কিন্তু শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, বন্দর সমস্যা এবং সর্বোপরি ক্রেতাদেশ ইউরোপ আমেরিকা থেকে অনেক দূরত্বে অবস্থানের কারণে ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে এ শিল্পের চলার পথ। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। বাড়তি মজুরির চাপ সামলাতে চলছে শ্রমিক ছাঁটাই। তা ছাড়া লিড টাইক কমাতে ব্যর্থ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা। সার্বিক পর্যালোচনায় ক্রমেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে সম্ভাবনাময় এ শিল্পখাত।
চাহিদা কমছে বাড়ছে ব্যয়
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বিশ্বের পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ৪৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৭ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫৪ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ উৎপাদনকারী দেশগুলোতে ক্রেতাদের চাহিদা কমেছে, যা মূল্যভিত্তিক বাজার প্রতিযোগিতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় রফতানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। ২০১৪-২০১৮ সময়ে আমাদের অন্যতম প্রধান বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাকের দরপতন হয়েছে ১১.৭২ শতাংশ। অন্য দিকে, এ সময়ে পোশাকের গড় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৯.৫৪ শতাংশ। বাড়তি খরচের কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে গত চার বছরে (২০১৪-২০১৮) ১২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে জানিয়েছে তৈরী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। তাদের আশঙ্কা, নিকট ভবিষ্যতে আরো অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
চলছে শ্রমিক ছাঁটাই
এ দিকে নতুন মজুরি ঘোষণার পর অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় সামাল দিতে অনেক শিল্পমালিক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ক্রয়াদেশের অভাব ও শ্রমিকের নতুন মজুরি কাঠামো সংক্রান্ত চাপ সামাল দিতে অনেক কারখানা বন্ধের ঘটনাও ঘটেছে। গত চার বছরে ১২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন কাজে যুক্ত আছেন এমন অভিজ্ঞ শ্রমিক, বয়স্ক এবং তুলনামূলক অনুৎপাদনশীল হিসেবে শনাক্ত কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিছু কারখানা তাদের হেলপারের সংখ্যা কমিয়ে আনতে শুরু করেছে। বসানো হচ্ছে কমসংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন হয় এমন মেশিনারি। তা ছাড়া শিক্ষানবিস শ্রমিকদের দিয়ে মেশিন অপারেটরের কাজ করিয়ে মালিকরা নতুন মজুরি কাঠামোর চাপ সামলানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে ধারণা করছেন শ্রমিকেরা।
ম্যাকেঞ্জির প্রতিবেদন
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ১০ বছরের মধ্যেই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মতো দেশ থেকে তৈরী পোশাক আমদানি কমিয়ে দিতে পারে। এসব দেশে মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণেই বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো এমন পরিকল্পনা করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের পরিবর্তে মেক্সিকো ও তুরস্কের মতো কাছাকাছি দেশগুলো থেকে পোশাক উৎপাদন করাতে চায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। সেটি হলে কম সময়ের মধ্যে নিজেদের বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাক তুলতে পারবে বলে মনে করছে তারা। ফ্যাশন দ্রুত পরিবর্তন হওয়ায় কম সময়ে পোশাক পাওয়া ক্রেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ১৮০টি ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ও ব্যবস্থাপকদের ওপর জরিপের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপে অংশ নেয়া নির্বাহী ও ব্যবস্থাপকেরা ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের চাহিদার অর্ধেকের বেশি পোশাক আশপাশের দেশ থেকে তৈরি করাতে চান। এর সরল অর্থ দাঁড়ায়Ñ চীন, বাংলাদেশ থেকে পোশাকের ব্যবসা আবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে চলে যেতে পারে।
দূরত্বও একটা সমস্যা
বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি তৈরী পোশাক রফতানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। জার্মানিও আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতাদেশ। কিন্তু দূরত্বের কারণে এসব দেশে পণ্য পাঠাতে অনেক সময় ব্যয় হয়। রফতানির ক্ষেত্রে এটিও একটি বড় সমস্যা। সোর্সিং জার্নালের সাথে যৌথভাবে পরিচালিত ম্যাকেঞ্জির প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ফ্যাশন খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। সময়মতো বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্য তুলতে না পারলে অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। তাই কম সময়ের মধ্যে সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য বুঝে পাওয়া ক্রেতাদের কাছে এক নম্বর অগ্রাধিকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এশিয়ার দেশগুলো থেকে উৎপাদনের পর সমুদ্রপথে ৩০ দিনের কম সময়ে পণ্য আনা সম্ভব নয়। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের উচিত পশ্চিমা বিশ্বে কিভাবে দ্রুত পণ্য সরবরাহ করা যায়, সেই কৌশল বের করা। অন্য দিকে, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির বিষয়টি ক্রেতাদের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতাদের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। এমন তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন থেকে একজোড়া জিনস প্যান্ট উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে ১২ দশমিক শূন্য ৪ মার্কিন ডলার খরচ হয়। সেটি মেক্সিকোতে করলে লাগে ১০ দশমিক ৫৭ ডলার। আবার চীন থেকে একজোড়া জিনস প্যান্ট উৎপাদন করে ইউরোপে আনতে ১২ দশমিক ৪৬ মার্কিন ডলার খরচ হয়। সেটি তুরস্কে করলে লাগে ১২ দশমিক শূন্য ৮ ডলার। তার মানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনের থেকে মেক্সিকো এবং ইউরোপের দেশগুলোর জন্য চীনের চেয়ে তুরস্কে পণ্য উৎপাদনের খরচ কম। তা ছাড়া চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা ইউরোপের জার্মানিতে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে ৩০ দিন লাগে। অন্য দিকে সড়কপথে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দুই ও তুরস্ক থেকে জার্মানিতে পণ্য পরিবহনে লাগে তিন থেকে ছয় দিন। তবে চীনের থেকে বাংলাদেশ উৎপাদন খরচ এখন পর্যন্ত কম বলে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
বার্নিকাটের আশঙ্কা
এ দিকে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা না হলে বিদেশী ক্রেতারা অন্য দেশে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা থেকে সদ্যবিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। তার সম্মানে বিজিএমইএ আয়োজিত বিদায় সংবর্ধনায় বক্তৃতাকালে বার্নিকাট বলেন, বিজিএমইএর জন্য পরবর্তী বড় বাধা হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্রমিক অধিকারের বিষয়ে অগ্রগতি ছিল শ্লথ। আমি যে কথাটি অনেকবার জোর দিয়ে বলেছি, আন্তর্জাতিক শ্রম নীতিগুলো মেনে চলা কেবল সঠিক কাজই নয়, এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিজিএমইএ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আপনাদের যত দ্রুত সম্ভব আইনগত প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনাতে উৎসাহিত করতে চাই। বিষয়টি দীর্ঘায়িত করলে কোনো লাভ হবে না। আইনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত এবং তা কার্যকর করলে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। এটি বিশ^বাজারে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক ব্যবসার অংশ বাড়াতেও সহায়তা করবে। ভোক্তারা এখন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে শ্রম ইস্যুগুলোকে ক্রমেই বেশি করে বিবেচনায় নিচ্ছে। তাই ব্যবস্থা নিতে দেরি করা অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœœ হওয়ার ঝুঁঁকিতে পড়বে। বিদেশী ক্রেতাদের অন্যত্র ঝুঁঁকে পড়ার হুমকিও বাড়বে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকা নির্ভর করবে বাংলাদেশের সতর্ক থাকা এবং কারখানা নিরাপত্তা ও শ্রমিক অধিকারের মতো বিষয়ে কাজ করে যাওয়ার ওপর। ২০১৩ সাল থেকে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সহায়তায় এ দেশের উদ্যোক্তারা তৈরী পোশাক কারখানাগুলোতে বিশাল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এগুলো এখন বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ কারখানাগুলোর মধ্যে পড়ে। এ সময়কালের একটা বড় অংশই আমি এ দেশে ছিলাম বলে সচক্ষে এই রূপান্তরটা প্রত্যক্ষ করেছি। আমি জানি, এটা ছিল খুবই কঠিন আর ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া। তবে আপনারা যদি আত্মতৃপ্তিতে না ভোগেন, তা হলে বহুদিন ধরে এর সুফলও পাবেন। এখনকার চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আওতায় কারখানাগুলোর সংস্কারের কাজ শেষ করা এবং অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কারখানাগুলোতে অর্জিত অগ্রগতি বজায় রাখা।
একটি প্রচারপত্র এবং...
বিজিএমইএ সভাপতি মো: সিদ্দিকুর রহমান সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন ডেকে অভিযোগ করেছেন, ‘জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন নামের একটি সংগঠন আংশিক সত্য, বিকৃত ও ভুল তথ্যসংবলিত একটি প্রচারপত্র জনসাধারণের মাঝে বিলি করেছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, নতুন মজুরি কাঠামোতে আমরা মূল মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য ভাতাদি আগের তুলনায় বৃদ্ধি করেছি, যাতে করে তারা আরো ভালো থাকতে পারেÑ সেখানে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন তাদের প্রচারপত্রে বলেছে, নতুন মজুরি কাঠামোতে মূল মজুরি বৃদ্ধি পায়নি। প্রচারপত্রে তারা ১৯৯৪, ২০০৬ সালের মূল মজুরির তুলনা করেছে, কিন্তু কৌশলে ২০১৩ সালের মূল মজুরির বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। তারা আরো বলেছে, সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকের হার মোট শ্রমিকের ৩ থেকে ৫ শতাংশ। অথচ এদের হার ২০ শতাংশের উপরে রয়েছে। সম্প্রতি সিপিডি কর্তৃক পরিচালিত আরএমজি স্টাডিতেও একই তথ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। অধিকন্তু, সেখানে আপনারা আরো দেখতে পারেন, কোন গ্রেডে কত শ্রমিক কাজ করে। একটি স্পর্শকাতর শিল্পখাত সম্পর্কে এ ধরনের ভুল ও বিকৃত তথ্য পরিবেশনের উদ্দেশ্য কীÑ ওই ঔদ্ধত্য তারা কোথায় পেলো, তা আমরা জানতে চাই।’ প্রচারপত্রে কিছু দেশের ন্যূনতম মজুরির হার ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, যদিও রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকের মূল্য কমেছে, খরচ বেড়েছে এবং বর্তমান পোশাক শিল্পের বাস্তবতায় এই মজুরি বাস্তবায়ন করা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তারপরও আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পোশাক শিল্পে আট হাজার টাকা নি¤œতম মজুরি মেনে নিয়েছি। ২০১৩ সালেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা নি¤œতম মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা করেছি। তারও আগে ২০১০ সালে নি¤œতম মজুরি তিন হাজার টাকা করেছিলাম। ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পোশাক শিল্পে মজুরি বৃদ্ধির হার হচ্ছে ৩৮১.৩৫ শতাংশ বলে জানান তিনি।
উদ্যোক্তার জবানবন্দী
আয়-ব্যয়ের হিসাবে গড়মিলের বর্ণনা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মজুরি বেড়েছে ৫১ শতাংশ। মনে করেন একটি ফ্যাক্টরির শ্রমিকের মাসিক বেতন বর্তমানে আসে এক কোটি টাকা। নতুন কাঠামো অনুযায়ী ওই মালিককে এখন বেতন দিতে হবে এক কোটি ৫১ লাখ টাকা। তাহলে কি ওই ফ্যাক্টরি বিগত দিনে মাসে ৫১ লাখ টাকা হারে লাভ করেছে? অসম্ভব! তাহলে এই বাড়তি টাকাটা আসবে কোত্থেকে? জায়গা একটাই, বায়ারদের কাছ থেকে ফিনিশড পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিতে হবে। অথবা অন্য খরচ কমাতে হবে। যদিও এটা অনেক কঠিন। কারণ এ দেশে গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সব কিছুরই বিল দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। বায়াররা দাম না বাড়ানোর কারণে এক সিজন অর্ডার ফিরিয়ে দেয়ায় তার কোম্পানির রফতানি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কিন্তু খরচ তো আর কমেনি, মাস শেষে শ্রমিকের বেতনসহ ফ্যাক্টরির যাবতীয় খরচ, ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধÑ কোনো কিছুই কিন্তু থেমে থাকেনি। গত এক বছেরও সে ধকল কাটিয়ে উঠতে পারিনি। পণ্যের দাম চাইলেই বাড়ানো যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমি রিফিউজ করলে কী হবে? অর্ডার তো আর আমার জন্য অপেক্ষা করেনি, হয় আমার দেশেরই অন্য কোনো ফ্যাক্টরি নিয়েছে অথবা অন্য কোনো দেশে অর্ডার চলে গেছে। কম দামে অর্ডার নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, অর্ডার না নিয়ে গত ছয় মাসে ছয় কোটি টাকা লসসহ গত এক বছরে প্রায় আট কোটি টাকার একটা বড় ঘাটতিতে পড়েছি। কম দামে যারা অর্ডার নিচ্ছে, তারা অর্ডার নিয়ে হয়তো লস করেছে ২৫ লাখ, না নিলে লস হতো এক কোটি টাকা। বিষয়টি যদি এরকম হতো যে, অর্ডার না নিয়ে ফ্যাক্টরি তিন বা ছয় মাস বন্ধ রাখলে কোনো খরচ নেই, তাহলে অর্ডার না নেয়ার মতো আপনার সহজ পরামর্শটা সানন্দে গ্রহণ করা যেত। মোহাম্মদ হাতেমকে প্রশ্ন করা হয়, কম দামি পণ্য না বানিয়ে চীনাদের মতো দামি পোশাকের অর্ডার নেন না কেন? জবাবে তিনি বলেন, যে দেশের শ্রমিকের উৎপাদন দক্ষতা ৪০ শতাংশ, সে শ্রমিক দিয়ে কম দামি পণ্য ছেড়ে বেশি দামি পণ্য বানানোর মতো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। তবে হ্যাঁ, বাঁচতে হলে আমাদেরও শ্রমিকের দক্ষতা বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং দামি পোশাক বানানোর কাজ নিতে হবে। অন্যথায় বাড়তি মজুরি পরিশোধ করতে গিয়ে হাজার হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে শ্রমিকদের সাথে কাউন্সিলিং করতে হবে। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে, মাইন্ডসেট করাতে হবেÑ যেহেতু বেতন বেড়েছে, উৎপাদনও বাড়াতে হবে, অন্যথায় টিকে থাকা অসম্ভব।

 


আরো সংবাদ



premium cement