১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

চীন-জাপানের অর্থনৈতিক ঐক্য

-

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। আর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান। দেশ দু’টির রাজনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই বৈরী। আবার বিশ্বমোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৈরী সম্পর্ক দুই দেশেরই। জাপান আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের গুডবুকেই বাইরে ছিল। নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে চীন। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকাতে বৈরিতা ভুলে এক সারিতে আসছে চীন-জাপান। প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক ইস্যুকে সামনে না এনে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে অর্থনৈতিক দিকটিকে। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনের সাথে সৃষ্ট বাণিজ্য টানাপড়েন দুই দেশের বৈরী সম্পর্ক বন্ধুত্বে রূপ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। দীর্ঘ সাত বছর পর গত সপ্তাহে প্রথম কোনো জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিনজো আবের চীন সফরই এ ইঙ্গিতই বহন করে।
প্রধানমন্ত্রী আবের সফরকালে চীন ও জাপানের মধ্যে ১৮০০ কোটি ডলার মূল্যমানের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এটি উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ‘উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে’ নির্দেশ করছে বলে উল্লেখ করেছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। চীনের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, প্রতিযোগিতার সহাবস্থান থেকেই জাপান ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে। প্রধানমন্ত্রী লি’র হাতে হাত রেখে আমি আমাদের এ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই। তিন দিনের সফরে উভয় দেশের মধ্যে ৫০টির বেশি চুক্তি সই হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে উভয় দেশ। উন্নত বাণিজ্যিক শর্তাবলি নির্ধারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি জাপানকে চাপ দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দশকের পর দশক ধরে যেসব মতবিরোধ এশিয়ার এ বৃহত্তম দুই অর্থনীতির সম্পর্ককে কণ্টকাকীর্ণ করে তুলেছে, তা দূর করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন দুই প্রধান। তাদের মতে, মুক্ত বাণিজ্যের সমর্থক হিসেবে চীন ও জাপান একত্রে কাজ করবে বলেও জানিয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি সমালোচনার বিষয়ে বেশ সতর্ক থাকতে দেখা গেছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে, এমনকি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠককালে তিনি ট্রাম্পের সাথে সুর মিলিয়ে বেইজিংয়ের রাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক মডেল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে উভয় নেতাই বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার ওপর সমর্থন দিয়েছেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাণিজ্য ইস্যুগুলো সমাধান এবং উদার বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সিকিউরিটিজ মার্কেটগুলোর সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে চীন ও জাপানের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) সই হয়েছে। এ চুক্তির নথিতে সই করেন চায়না সিকিউরিটিজ রেগুলেটরি কমিশনের (সিএসআরসি) চেয়ারম্যান লিউ শিয়ো এবং জাপানের ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এজেন্সির কমিশনার তোশিহাইদ এন্ডো। এ ছাড়া উভয় দেশের মধ্যে ৩ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ইয়েন পর্যন্ত (৩ হাজার ২৯ কোটি ডলার) মুদ্রা বিনিময় চুক্তি সই হয়েছে, যা ২০২১ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
প্রেসিডেন্ট শি’র উদ্দেশে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেয়া খুবই প্রয়োজন। আসিয়ানভুুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রস্তাবিত মুক্তবাণিজ্য চুক্তি রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) এবং চীন-জাপান-কোরীয় ট্রেড জোন নিয়ে আলোচনার গতি বৃদ্ধি করতেও মত দিয়েছেন তারা।
বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার ভাষায়, মুক্তবাণিজ্যে দেশ দু’টির এ অকুণ্ঠ সমর্থন উভয়ের জন্যই অপেক্ষাকৃত নতুন অবস্থান হিসেবে উল্লেখ করা যায়। কারণ কয়েক দশক ধরে এ দেশ দু’টি একে-অন্যের বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে সমালোচনায় লিপ্ত ছিল। চীন বর্তমানে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে, পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান এমন দুর্দান্ত প্রবৃদ্ধিতে ছিল। রাষ্ট্র নির্দেশনা এবং স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে অত্যধিক সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে চীন তাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়েছে; কিন্তু এ সময়টিতে বিদেশী কোম্পানিগুলো একপাশে পড়ে গেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিবাদের কারণে চীনের নতুন বন্ধু প্রয়োজন। অন্য দিকে রফতানির প্রধান গন্তব্য ও পর্যটকদের অন্যতম উৎস হওয়ায় চীনের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী জাপান। এসব বিষয় সামনে রেখেই আবের সফরে চীন ও জাপানের মধ্যে অর্ধশতাধিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। জাপানের কোম্পানিগুলো আশা করছে, এ সফরের মাধ্যমে চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক আবার সহজ হয়ে উঠবে; যার ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। অন্য দিকে বেইজিং আশা করছে, টোকিও তাদের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে সমর্থন দেবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement