২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জিএসপি না-কি জিএসপি প্লাস

-

আবারো আলোচনায় অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যসুবিধা (জিএসপি)। ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের এ সুবিধা স্থগিত হওয়ার পর থেকে ঘুরেফিরে বহুবার আলোচনায় এসেছে এটি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতাসংক্রান্ত ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা) কাউন্সিলের চতুর্থ সভায় উঠে আসে জিএসপি প্রসঙ্গ। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে স্থগিত থাকা এ সুবিধা পুনরায় চালু করার অনুরোধ জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত পাঁচ বছরে বহুবার বলেছেন, আমেরিকার কাছে জিএসপি চাওয়া হবে না। উল্টো ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ‘জিএসপি প্লাস’ নিয়ে রফতানিবাণিজ্য চাঙ্গা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আবার সে দেশের দেয়া শর্ত পূরণের চেষ্টাও চালানো হয়েছে জোরেশোরে। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ কী চায়? জিএসপি না-কি জিএসপি প্লাস?
টিকফার চার সভা
২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে টিকফা সই হয়। চুক্তি সইয়ের পর ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল টিকফা কাউন্সিলের প্রথম সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এবং ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় সভা এবং ২০১৭ সালের ১৭ মে ঢাকায় তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টিকফা সভায় উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি ছাড়াও বাংলাদেশী পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের উপরও জোর দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের দফতরে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এ সভায় ১২ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ মার্ক লিন্সকট। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনুকূল পরিবেশের বিষয়ে সব তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও অনুরোধ জানানো হয়। এ ছাড়া টেকনোলজি ট্রান্সফার, বাণিজ্যবিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ডিজিটাল ইকোনমি ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে টেকসই গ্র্যাজুয়েশনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হয় সভায়।
কালোরাত ২৭ জুন ২০১৩
বাংলাদেশের রফতানিবাণিজ্যের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কালোরাত হিসেবে পরিচিত হয়ে রয়েছে ২০১৩ সালের ২৭ জুন। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা বা জিএসপি স্থগিত করেছে মার্কিন সরকার। রানা প্লাজা ধসের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে মার্কিন সরকার এ সিদ্ধান্ত নিলেও এর পেছনে লুকিয়ে আছে দেশের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি। প্রাথমিকভাবে বলা হয়, বাংলাদেশে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত থাকবে। বলা হয়, ছয় মাস পর এটি পর্যালোচনা করা হবে। পরবর্তীতে দেয়া হয় ১৬ দফা শর্ত। তবে শেষ পর্যন্ত সব শর্ত পূরণ করা হলেও জিএসপি ফেরত পায়নি বাংলাদেশ। বিশ্লেষকদের মতে, অলিখিত ১৭ নম্বর শর্ত তথা রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় জিএসপি ফেরত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
ভাবনায় জিএসপি প্লাস
আনুষ্ঠানিক বৈঠক জিএসপি ফিরে পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ জানানো হলে বাংলাদেশ সরকার ভালোভাবেই জানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হারানো জিএসপি বাণিজ্যিক সমঝোতায় ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সরকার এখন ইইউতে জিএসপি প্লাস সুবিধা আদায়ের জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০২৪ সালে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে বাংলাদেশ। তার পরও তিন বছর এখনকার মতোই শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা (জিএসপি) বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ যেসব দেশ বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে, আমরা চেষ্টা করছি ওই সব দেশে ২০২৭ সালের পর যাতে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাই। জিএসপি প্লাস পেলে তখনো আমরা এখনকার মতোই ওই সব বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানি করতে পারব। জিএসপি প্লাস পাওয়ার জন্য যা যা করণীয়, তা করা হবে। এরই মধ্যে আমরা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশ আমাদের জিএসপি সুবিধা দেয় না, সেসব দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হবে। ওই সব দেশের কোনোটিতে আমাদের রফতানি বেশি হবে, আবার কোনোটিতে আমদানির তুলনায় রফতানি কম হবে। শ্রীলঙ্কার সাথে এ বছরই এফটিএ সই হবে। থাইল্যান্ডের সাথে এফটিএ সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, ২০২৭ সাল পর্যন্ত নিশ্চিতভাবেই এ সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এরপর যাতে এ সুবিধা ভোগ করা যায়, সে জন্য তখন যিনি বাণিজ্যমন্ত্রী থাকবেন, তিনি আলাপ-আলোচনা করে তা আদায়ের চেষ্টা করবেন।
ঘুরেফিরে রাজনৈতিক অর্থনীতি
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশগুলো উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে জিএসপি সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এ সুবিধা পায়। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর ২০২৭ সাল থেকে এ সুবিধা থাকবে না বাংলাদেশের। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উন্নয়নশীল কিছু দেশকে জিএসপি প্লাস কর্মসূচির আওতায় একই ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে এ সুবিধা দিয়েছে তারা। তবে ভারতকে জিএসপি প্লাস দেয়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থান কোন ভাগে পড়বে সেটাই এখন দেখার বিষয়। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো আমরাও জিএসপি প্লাস পাবো? নাকি ভারতের কাতারে যেতে হবে সেটি নির্ভর করবে মূলত রাজনৈতিক অর্থনীতির ওপর।
আশার আলো ইইউ
এলডিসি হিসেবে ২০০১ সাল থেকে অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যে ‘এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ)’ কাঠামোর অধীনে ইইউর ২৮ দেশে রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ। এ সুযোগে বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ রফতানির গন্তব্য ৫০ কোটি ক্রেতার বাজার ইইউ। ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হলে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী তিন বছর পর্যবেক্ষণে থাকবে বাংলাদেশ। এ তিন বছরও জিএসপি সুবিধা মিলবে। অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ২০২৭ পরবর্তী সময়ে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে জিএসপি প্লাস কাঠামোতে আবেদন করতে হবে। বর্তমানে এ জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
রাষ্ট্রদূতের আশ্বাস
গত সপ্তাহে ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা বিষয়ক এক আলোচনা সভায় ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি তেরিঙ্ক জানান, ‘জিএসপি প্লাস’ কাঠামোর অধীনে তখনো শুল্কমুক্ত রফতানির সুযোগ থাকবে। তবে এ সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কিছু শর্ত প্রতিপালন করতে হবে। এ সময় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২৭টি কনভেনশনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। এ অনুচ্ছেদে সুশাসন, পেশাগত নিরাপত্তা, পরিবেশের উন্নয়নের মতো বিষয়ের কথা বলা হয়েছে। ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, পোশাক খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম প্রশংসার দাবি রাখে। সংস্কারের এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে হবে। সংস্কারের ফলে বাংলাদেশের যে নতুন অবস্থান তৈরি হয়েছে তা বহির্বিশ্বে বিশেষ করে ইউরোপে প্রচারের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তিনি। এ বিষয়ে তার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন রাষ্ট্রদূত। উদ্যোক্তাদের দাবিগুলো ইইউ নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা

সকল