২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে আস্থা-অনাস্থা

-

সংবেদনশীল মূলধন বাজার হিসেবে সারা বিশ্বে পুঁজিবাজার পরিচিত। একজন ব্যক্তি বা একটি প্রতিষ্ঠান কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে সর্বপ্রথম কোম্পানির অতীত কর্মকাণ্ড, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এখানেই শুরু হয় আস্থা-অনাস্থার হিসাব। যে কোম্পানি বিনিয়োগে সাধারণ মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর যত সাড়া পায় সে কোম্পানির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তত আস্থাশীল মনে করা হয়। নিকট অতীতে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান আলীবাবা এ আস্থার ওপর ভর করেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ আইপিওর মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের (বাংলাদেশী টাকায় ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা) মূলধন সংগ্রহ করে।
প্রধানত, উদ্যোক্তাদের মূলধন সরবরাহ পুঁজিবাজারের মূল কাজ হলেও মূলধন সরবরাহকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকৃত অর্থের মুনাফা দু’ভাবে পেয়ে থাকেন। একটি কোম্পানিকে স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্তির পর সেকেন্ডারি মার্কেটে ক্যাপিটাল গেইনের মাধ্যমে অন্যটি নির্দিষ্ট সময় পর কোম্পানি কর্তৃক ঘোষিত লভ্যাংশ পাওয়ার মাধ্যমে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অংশ হিসেবে বছর শেষে ঘোষিত লভ্যাংশই কোম্পানির ভালো-মন্দ বিচারের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। আবার কোম্পানির দৈনন্দিন পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে শেয়ারদরের যে ওঠানামা তাতেও কেপিটাল গেইনও থাকে বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য। একসময় বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশকে প্রধান বিবেচনায় নেয়া হলেও বাজারের সাম্প্রতিক প্রবণতায় ক্যাপিটাল গেইনই প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। কারণ এখানেই বিনিয়োগের নগদ লাভ হাতে আসছে, যা পুঁজিবাজারের স্বাভাবিকত্ব কিছুটা হলেও নষ্ট করছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশে একটি কোম্পানি বছর শেষে শেয়ারহোল্ডারদের কত লভ্যাংশ দিচ্ছে তা-ই প্রধানত কোম্পানির মৌলভিত্তির মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এর সঙ্গে কোম্পানির সংবেদনশীলসহ অন্যান্য তথ্য নিয়মিত সরবরাহ আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে স্বচ্ছতা, নিয়মিত সাধারণ সভার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতাও এ ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে। তবে কোম্পানির উদ্যোক্তা কারা, তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ইত্যাদিও এক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া বাজারে একাধিক তালিকাভুক্ত কোম্পানি থাকলে এগুলোর অতীত পারফরম্যান্সও অনেক সময় কোম্পানির মৌলভিত্তির নিয়ামক হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়। আর এসব কিছুকে পুঁজি করেই সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ারের হাতবদল ঘটে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো এখানেই বড় আকারের পুঁজি বিনিয়োগ করে থাকে।
প্রাইমারি মার্কেটের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষের সম্মতির প্রয়োজন দেখা দেয়। দুই কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমেই একটি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন পায়। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের পারফরম্যান্স বিচার করেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আইপিওর মাধ্যমে মূলধন সরবরাহ করে থাকেন, যা পরে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে কোম্পানির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য ব্যয় করে থাকেন। একই সঙ্গে কোম্পানির মালিকানায় চলে আসেন আইপিওর মাধ্যমে অর্থ বিনিয়োগকারীরা। সাধারণত আমাদের দেশে আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে এ যাবৎ একটি বীমা খাতের কোম্পানি ছাড়া আর কোনো কোম্পানির আইপিওতে মূলধন সংগ্রহে ব্যত্যয় ঘটেনি।
এর দ্বিতীয় পর্যায় হচ্ছে তালিকাভুক্তি। তালিকাভুক্তির পর সেকেন্ডারি মার্কেটে কোম্পানির শেয়ারের ট্রেডিং শুরু হয়। এখান থেকেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ারহোল্ডারদের কোম্পানি সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সরবরাহে বাধ্য থাকে। প্রতি তিন মাস অন্তর কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশে তৈরি হয় বাধ্যবাধকতা যেখানে কোম্পানির আয়-ব্যয়ের চিত্রের পাশাপাশি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট মুনাফার বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে। এর মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দর।
পুঁজিবাজারের এ পর্যায়েই আস্থা-অনাস্থার বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দেয়। কোনো কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্তির পর থেকে ধারাবাহিকভাবে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে যৌক্তিক হারে লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। আবার কোনো কোনোটি আর্থিক প্রতিবেদনে আয়ের বড় ধরনের ফিরিস্তি দিলেও লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে কার্পণ্য থাকে। কেনো কোনোটি আবার মূলধন সংগ্রহ ও তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানির মুনাফার ফিরিস্তি দিলেও তালিকাভুক্তির পরের চিত্রে তার ভিন্নতা দেখা যায়। এমন অনেক কোম্পানিও রয়েছে তালিকাভুক্তির দ্বিতীয় বা তৃতীয় বছরের মাথায় লোকসান দেখিয়ে লভ্যাংশ বঞ্চিত করে বিনিয়োগকারীদের।
এভাবে একটি খাতে তালিকাভুক্ত হয়েও বাজারে ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের ভিন্ন ভিন্ন দর নির্ধারিত হয়। কোনো কোনোটি বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আস্থা অর্জন করে নেয় আর কোনোটি তাদের অনাস্থার কোপানলে পতিত হয়ে দিনের পর দিন হারাতে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রথম ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের সাড়া পেয়ে ব্লু-চিপ কোম্পানির খাতায় নাম লেখায় আর দ্বিতীয় ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে একসময় বাজে কোম্পানির খাতায় নাম লেখায়। কিছুটা দেরিতে হলেও আমাদের দেশে এ ধরনের কোম্পানিগুলোর শেষ ঠিকানা তালিকাচ্যুতির মাধ্যমে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট।
আবার এমনও দেখা যায় প্রায় একই মানসম্পন্ন দুই শিল্প গ্রুপের দুই কোম্পানির শেয়ারদরে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কারণ একটাই। কোনোটির প্রতি মানুষের আস্থা আবার কোনোটির প্রতি অনাস্থা। এটাও নির্ধারিত হয় তালিকাভুক্তির পর কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি আচরণ। কোনো কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের আস্থার যথাযোগ্য প্রতিদান দিয়েছে আর কোনোটি দেয় নাই। আমাদের পুঁজিবাজারে জ্বালানি ও ওষুধ খাতে তালিকাভুক্ত দু’টি বড় শিল্প গ্রুপের দু’টি কোম্পানির শেয়ারদরের সঙ্গে একই খাতের অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বিচার করলেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতেই প্রমাণ হয় পুঁজিবাজারে আস্থা-অনাস্থা কতটা ভূমিকা রাখে।


আরো সংবাদ



premium cement
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ

সকল