২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চীন-ভারতের সাথে বাংলাদেশের মুক্তবাণিজ্য

-

চীন বাংলাদেশের একজন পরীক্ষিত বাণিজ্যিক বন্ধু। চায়নার কারণে আজকের বাংলাদেশের গরিব চাষি থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক সবাই কম বেশি উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া পেয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তবাণিজ্য চুক্তির আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই । চীনের প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ ঢাকা সফরের পর মুক্তবাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে চীনের একটি প্রস্তাবের বিষয়ে বিশদ আলোচনার কথা জোরেশোরে শোনা গিয়েছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের মুক্তবাণিজ্য সম্পাদনের বহুমুখী সম্ভাবনা ও ঝুঁকির কথা ভেবে বাংলাদেশ সরকার ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করছে বলে আপাতদৃৃষ্টিতে মনে হতে পারে। তবে খুব সম্ভবত ভারতের সাথে অসম বাণিজ্য নীতির প্রেক্ষাপট ভাবনায় সরকার ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করছে ।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান পাওয়ার যেমন সুবিধা আছে, ঠিক তার বিপরীতে কিছু সমস্যাও রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে প্রাপ্ত বিভিন্ন বাণিজ্য সুযোগ-সুবিধা কয়েক বছরের মধ্যে বাতিল হতে পারে।
বিশেষ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে যে শুল্ক হ্রাস সুবিধা দিয়ে আসছিল, তা কয়েক বছরের মধ্যে বাতিল হয়ে যেতে পারে এমন সম্ভাবনা মাথায় রেখে আমাদের সরকার ও ব্যবসায়ীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। এরকম অস্থিতিশীল অবস্থায় বাজার ধরে রাখার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভিয়েতনাম, ভারত, চীন ও শ্রীলঙ্কা অনেক দিন থেকে মাঠে রয়েছে । বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যেই বাংলাদেশকে প্রায় ৫০০ পণ্যের ওপর বিনা শুল্কে রফতানির সুবিধা প্রদান করে আসছে।ফলে রফতানির প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও টাকার অঙ্কে তা একেবারেই নগণ্য, তবে চীনের চেয়ে ভারতের সাথে বাণিজ্যঘাটতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি ।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হলো চীন । কিছু কিছু ক্ষেত্রে চীন আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গেছে এ ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ নেই । ‘উগান্ডা’ থেকে ‘জাপান’ আর ‘রাশিয়া’ থেকে : ‘বাংলাদেশ’ সর্বত্রই চীনা পণ্যে জয়জয়কার । বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দীর্ঘ দিনের মুক্তবাণিজ্য ব্যবস্থা চালু থাকার কারণে চীনা পণ্য বাংলাদেশে অবাধে প্রবেশে করছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে চীনা কোম্পানিগুলো ডায়াপার থেকে প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন ও বিপণন করছে । চীনা সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলো এটিকে শুধু বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে সামাজিক ও আমাদের কোনো সরকারই চীনের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে যতটা ভেবেছেন তার চেয়েও বেশি ভেবেছেন ভূ-রাজনৈাতিক বিষয় নিয়ে । বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি আর চীনা অর্থনীতির ভবিষ্যৎ এবং ভারতের সাথে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিষয় মাথায় রেখে কোনো সরকারই চীনকে যেমন ঘাটাতেও চায়নি, তেমন বেশি গুরুত্বও দেয়নি, যতটা গুরুত্ব পেয়েছে ভারত ।
কয়েকটি চীন মৈত্রীসেতু ও বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীন তার অবস্থান জানান দেয়। সে থেকে বর্তমান সরকারের আমল পর্যন্ত চীনের বড় বড় বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের অনেক মেগা প্রকল্পে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সুবিধা পাচ্ছে। ‘চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি’ থেকে শুরু করে ‘জেডটিই’ ও ‘হুয়াওয়ের’ মতো খ্যাতিমান অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে বিনিয়োগ করছে এবং কাজ করে যাচ্ছে।
এশিয়া প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তির (এপিটিএ) আওতায় ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ চীনের বাজারে অনেক পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে । এফটিএ করার ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের যুক্তি হলো, এফটিএর মধ্য দিয়ে বাংলা দেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানো। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেরও বহুমুখী রফতানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ কি পারবে এ নিয়ে দরাদরি করার মতো সাহস দেখাতে? বাংলাদেশ হয়তো এফটিএ চুক্তি নিয়ে তাড়াহুড়া করতে চায় না । কেননা বাংলাদেশের সঙ্গে চীন ও ভারতের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। আমাদের সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যাতে আমরা লাভবান হই। অন্যথায় আমরা চীন ও ভারতের কাছে কোণঠাসা হয়ে যেতে পারি ।


আরো সংবাদ



premium cement