২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার উৎপাদন বাড়ছে কমছে খরচ

-

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। উন্নত বিশ্বের এই হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। ফসল ফলানোর জন্য জমি চাষ, বীজ বপন, নিড়ানি, সার দেয়া, কাটা, মাড়াই, ফসল ঝাড়া ও প্যাকেটিং পর্যন্ত সব কিছুই করা হচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। ফলে কৃষিতে উৎপাদন বাড়ছে, কমছে উৎপাদন ব্যয়। প্রযুক্তির ব্যবহারে ফসলের অপচয়ও কম হচ্ছে।
কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রযুক্তির েেত্র শুধু কৃষি যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবস্থাপানার অভাবে প্রতি বছর মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনের ৭-১০ ভাগ অপচয় হয়। কৃষি কাজের প্রতিটি স্তরে কৃষিযন্ত্র ব্যবহার নিশ্চিতকরণ করা হলে বছরে আরো ৭০ মিলিয়ন খাদ্যশস্য উৎপাদন বেশি হতো। কারিগরি দতাসম্পন্ন ব্যাপক কৃষি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দানা শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। উন্নত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রযুক্তি প্রয়োগে শস্য উৎপাদনের কারিগরি দতা বৃদ্ধি ও প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও ফসল কর্তনোত্তর তি কমানোর মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রফেসর ড. প্রকৌশলী এ টি এম জিয়াউদ্দিন বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ যেমন অনেকাংশে কমে যায়, একই সাথে ফসলের নিবিড়তা ৫-২২ ভাগ বেড়ে যায়। এ ছাড়াও বীজ বপন যন্ত্র দ্বারা ফসল মাঠে বুনলে বীজ ২০ ভাগ সাশ্রয়ের পাশাপাশি সার ১৫-২০ সাশ্রয় হয়। অন্য দিকে, ফসলের উৎপাদনও ১২-৩৪ ভাগ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কৃষকের মোট আয় বেড়ে যায় ২৯-৪৯ ভাগ। এ ছাড়াও ফসল উৎপাদনের ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কর্তনপূর্ব, কর্তনকালীন ও কর্তনোত্তর সময়ে ফসলের তি হয়। বাংলাদেশে দানাশস্যে ফসল কর্তনোত্তর তির পরিমাণ মোট উৎপাদনের ১২-১৫ ভাগ, যা ফল ও শাকসবজির েেত্র প্রায় ২৫-৪০ ভাগ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের মোট আবাদি জমির ৯০-৯২ ভাগ চাষ হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। যদি চাষাবাদের সব পর্যায়ে অর্থাৎ জমি তৈরি থেকে শুরু করে চাল উৎপাদন পর্যন্ত পুরোপুরি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তাহলে রীতিমতো বিপ্লব ঘটবে কৃষিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি-দ্বিতীয় পর্যায়’ প্রকল্পের আওতায় ৫১ জেলায় কৃষক পর্যায়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেগুলো জনপ্রিয় করার চেষ্টা হচ্ছে। জমি চাষ থেকে ফসল মাড়াই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তি সহজলভ্য ও জনপ্রিয় করতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। এমনকি অনেক েেত্র বিনামূল্যেও সরবরাহ করছে। সরকারি উদ্যোগে কৃষিতে ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহারে সুফলও মিলছে। উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। ধানের উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। ধানের মতো গমের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। আলু, ভুট্টারও হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে। পেঁয়াজ, রসুন উৎপাদনেও এগিয়েছে বাংলাদেশ।
কৃষকরা বলছেন, মওসুমের সময় শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়। এ সময় শ্রমিকদের পরিশোধ করতে হয় চড়া মজুরি। ফলে বোরো মওসুমে ধান চাষ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের মতেÑ ধান চাষে লাভ করতে হলে কৃষককে যান্ত্রিকীকরণে আসতে হবে। যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদ করলে খরচ যেমন কম হয় তেমনি ফসল ফলে বেশি। এ ছাড়া, গতানুগতিক পদ্ধতিতে ফসলের অপচয়ও হয় বেশি। এতে কৃষক তিগ্রস্ত হন। গতানুগতিক পদ্ধতি ও যান্ত্রিকীকরণ পদ্ধতির তুলনা করে দেখা গেছে কৃষিতে টিকে থাকতে হলে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই।
বোরো ধান সেচ, সার ও কীটনাশক নির্ভর। ফলে এর জন্য নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন হয়। এতে খরচও বৃদ্ধি পায়। প্রতি বিঘা জমিতে বীজতলা তৈরি, চারা লাগানো, নিড়ানি দেয়া, ধান কাটা ও মাড়াইসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত কৃষি মজুর লাগে ২৫ জন। বীজের দাম, সারের দাম, তিনবার সেচ দেয়া, দু’বার কীটনাশক প্রয়োগ করা ও জমির ভাড়াসহ (বা খাজনা) এক বিঘা জমিতে ধান চাষে খরচ পড়ে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে গড়ে ফলন হয় ১৮ থেকে ২০ মণ ধান। বোরো মওসুমে কৃষককে ধান বিক্রি করতে হয় ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। এ ধান কেটে বিক্রি কৃষকের ঋণের টাকা পরিশোধ, মজুরি পরিশোধ, কীটনাশকের দাম, পানির টাকা পরিশোধসহ অন্য প্রয়োজন মেটাতে কৃষক ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। কৃষকরা জানান, যে স্বপ্ন ও আশা নিয়ে তারা ধান চাষ করেন, ধান ঘরে এলে সে স্বপ্ন ও আশা ভঙ্গ হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ফসল কাটা ও ফসল বপনসহ সিজনের সময় শ্রমের যে মজুরি কৃষককে গুণতে হয় তাতে যন্ত্র ছাড়া কোনো উপায় নেই। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, তেমনি সময় ও শ্রম সাশ্রয় হয়। কৃষিকাজে সবচেয়ে শ্রম ও সময়নির্ভর কাজ হচ্ছে চারা রোপণ বীজ বপন ও ফসল কর্তন। মওসুমের নির্দিষ্ট সময় এ কাজগুলো সম্পন্ন করে ফসল ঘরে তুলতে সম্প্রতিকালে বাংলাদেশের কৃষকেদের বেশ সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। এ সময় কৃষি শ্রমিকের মজুরি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। কখনো কখনো দ্বিগুণ মজুরি দিয়েও কৃষি শ্রমিক পাওয়া যায় না।
এ ছাড়াও শ্রমিকের অভাবে বিলম্বে ফসল কর্তন ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদিত শস্যেও বড় একটি অংশ নষ্ট ও অপচয় হয়। এ ছাড়া, আগাম এবং সময়মতো ফসল বিক্রি করতে না পারলে কৃষক উপযুক্ত মজুরি পায় না। মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী বপনযন্ত্র দিয়ে বীজ বপন করতে পারলে ফসলে জীবনকাল ১০-১২ দিন কমানো সম্ভব।
তথ্য মতে, এক একর জমির ফসল শ্রমিক দিয়ে কর্তন ও মাড়াই কাজে গতানুগতিক পদ্ধতিতে ব্যয় হয় ৮ হাজার ৬৬৮ টাকা। অথচ মিনি কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে একই কাজে ব্যয় হয় তিন হাজার ৯৪২ টাকা। অন্য দিকে, এক একর জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্ট দিয়ে চারা লাগাতে খরচ হয় এক হাজার ৬০০ টাকা। আর শ্রমিক দিয়ে ব্যয় হয় ছয় হাজার টাকা। এখানে লণীয় যে, কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে কাজ করার ফলে এক একর জমিতে গতানুগতিকের চেয়ে ৯ হাজার ১২৬ টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। অর্থাৎ এই ৯ হাজার ১২৬ টাকা তার লাভ। কৃষিযন্ত্র দিয়ে চাষাবাদ ও ফসল কর্তন ও মাড়াই করলে শস্যের অপচয় কমে ৫-১০ ভাগ।


আরো সংবাদ



premium cement
জামালপুরে হিট স্ট্রোকে মরিচ ব্যবসায়ীর মৃত্যু প্রধানমন্ত্রী ৬ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন রায়গঞ্জে পাটভর্তি ট্রাকে আগুন জামালপুরে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ৪৬তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার আসন বিন্যাস প্রকাশ ছোট দেশ কাতার অর্থনীতি ও কূটনীতিতে যেভাবে এত এগোল আশুলিয়ায় ছিনতাইকারীর হামলায় আহত নারীর মৃত্যু ‘মুসলিমদের সম্পদ পুনর্বণ্টন’ অভিযোগ মোদির, এফআইআর সিপিএমের প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বিখ্যাত চালকবিহীনবিমানের আবিষ্কারক কটিয়াদীতে আসছেন গাজার গণকবরের ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের

সকল