১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঈদের বাজার জমজমাট

-

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফেতরকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে কেনাকাটা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে মুখরিত রয়েছে রাজধানীর মার্কেটগুলো। দম ফেলার সময় নেই ফুটপাথের দোকানিদেরও। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ ছুটছেন এসব দোকানে। নির্বাচনের বছর হওয়ায় গ্রামগঞ্জেও এবারের ঈদকে ঘিরে টাকার ছড়াছড়ি লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ঈদ বেচাকেনায় এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। যদিও বিলাসবহুল মার্কেটগুলোয় বেচাকেনা অপেক্ষাকৃত কম বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ, সরকারের অযৌক্তিক নীতিমালার কারণে অনেক ক্রেতা পাশের দেশ ভারতে চলে যাচ্ছেন। আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভারত থেকে পণ্য এনে দেশের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব কারণে ঈদকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।
গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকার নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্টার্ন প্লাজা, মালিবাগের মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিংমল, আনারকলি মার্কেট, কনকর্ড টুইন টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাস, নাভানা বেইলি স্টার, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, পলওয়েল, গাজী ভবন, পীর ইয়েমেনি, মগবাজারের বিশাল সেন্টার, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান পিংক সিটি, নাভানা টাওয়ার, কনকর্ড পুলিশ প্লাজা, তালতলা মার্কেট, বঙ্গবাজার ঘুরে দেখা যায়, লাখ লাখ মানুষ কেনাকাটায় নেমে পড়েছেন। ক্রেতাদের ভিড় দেখে মনে হয় পুরো রাজধানীই যেন এক বিপণিবিতান। ভিড়ের কারণে ক্রেতারা সারি বেঁধে মার্কেটে ঢুকছেন, ভিড় ঠেলে সামনে এগোচ্ছেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিক্রয়কর্মীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হচ্ছেন, বাধ্য হচ্ছেন দরদাম না করেই পছন্দের পোশাকটি একটু বাড়তি দামে কিনে আনতে।
রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে সকাল থেকেই ক্রেতার ভিড় দেখা যায়। বেশি ভিড় দেখা যায় জুতা, স্যান্ডেল, পাঞ্জাবি ও অলঙ্কারের দোকানগুলোতে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, কেউবা পরিবার-পরিজন নিয়ে সকালেই হাজির হন রাজধানীর সবচেয়ে বড় এই শপিংমলে। দেশী জুতার ব্র্যান্ড বে এম্পোরিয়ামের বিক্রয়কর্মী মাসুদ জানান, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, তাদের বিক্রি বাড়ছে। ছুটির দিন বলে দম ফেলার ফুরসত মিলছে না। রামপুরা থেকে পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে ফিউচার পার্কে এসেছেন মনসুর আহমেদ। তিনি বলেন, এখানে সব ব্র্যান্ডের পণ্য একই ছাদের নিচে মিলছে। তাই চেষ্টা করছেন পুরো পরিবারের কেনাকাটা এখানেই শেষ করতে। ঈদের দিনে পছন্দের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চাই প্রসাধনীও। তাই অলঙ্কার আর কসমেটিকসের দোকানেও ছিল সব বয়সী নারীর ভিড়। ঈদের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না কিনতে দেখা গেছে অনেককেই। যমুনা ফিউচার পার্কের মতোই গুলশান ও বনানীর বিপণিবিতানগুলোতে গতকাল ছিল ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়।
ফুটপাথজুড়ে ঈদ মার্কেট
এ দিকে জুতা থেকে শুরু করে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকস, পারফিউম, কী নেই এখানে! ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর ফুটপাথগুলোই এখন ঈদ মার্কেট। যদিও এখানে সারি সারি দোকান, এসি নেই, নেই কোনো ঝলমলে আলোকসজ্জা। এমনকি ক্রেতা আকর্ষণে নেই র্যাফল ড্র। তবে তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা বলা যায় এসব অস্থায়ী মার্কেটেই।
কিছু পয়সা বাঁচাতে এক এলাকার রাজপথের ফুটপাথ, এপাড়া থেকে ওপাড়ার ফুটপাথের দোকানগুলো ঘুরে তারা কিনে নিচ্ছেন পছন্দের পোশাক। অপেক্ষাকৃত কম দামে ভালো জিনিস কিনতে চাকরিজীবীরাও ছুটে আসছেন এ দোকানগুলোতে। রাজধানীর নিউমার্কেট, ফার্মগেট, মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, মালিবাগ মৌচাক, গুলিস্তানসহ রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাথের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বিক্রেতারা জানালেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে বেচাকেনাও ততই বাড়ছে।
নিউমার্কেটের ফুটপাথে শিশু ও মেয়েদের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকার ফুয়াদ রহমান। এখানে পোশাক-পরিচ্ছদ যে দামে বিক্রি হয় তা অন্যান্য বড় শপিং মলে বিক্রি হয় দ্বিগুণ দামে। ফুয়াদ বলেন, মার্কেটের দোকানের ভাড়া গুনতে হয় অনেক বেশি। ফুটপাথ তো আর তেমন নয়। তা ছাড়া আমরা সরাসরি বিভিন্ন গার্মেন্ট থেকে মালামালের লট কিনে আনি। ফলে আমরা কম দামে কিনতে পারি। তাই বিক্রিও করি কম দামে। তবে কেনাবেচা বেশ ভালো হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
ফুটপাথের মার্কেট ভেদে ছেলেদের শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, জিনস প্যান্ট ৩৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, টি-শার্ট ২৫০ থেকে ৪০০, মেয়েদের থ্রি-পিস ৪৫০ থেকে ১২০০, শাড়ি ৪৫০ থেকে ১০০০, শিশুদের থ্রি-কোয়ার্টার জিনস প্যান্ট ৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৫০০, ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৫০০, শাড়ি ৫০০ থেকে ১৫০০ এবং ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য হাতাকাটা গেঞ্জি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।
সামর্থ্যবানেরা ছুটছেন কলকাতায়
এ দিকে ঢাকায় পোশাকের দাম অত্যধিক। ঈদের সময় দাম আরো বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। ভালো বিক্রির কারণে বিক্রেতাদের আচরণও তখন পাল্টে যায়। অন্য দিকে ভারতের বাজার পোশাক পাওয়া যায় লেটেস্ট মডেলের। দামও অপেক্ষাকৃত কম। ঈদ উপলক্ষে তারা বিশেষ ছাড়-অফারও দেয়। ভিসা পাওয়ার জটিলতাও এখন আর নেই। বিমানের পাশাপাশি সড়ক এবং রেলপথে যাতায়াত এখন অনেক সহজ। এসব কারণে ঈদ উপলক্ষে দেশের ক্রেতারা দলে দলে কলকাতায় চলে যাচ্ছেন। কেবল ঈদের কেনাকাটর জন্য ভারতে গেছে দেড় লাখ বাংলাদেশী। এদেশের ব্যবসায়ীরা হারিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজার। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বেশি ভ্যাট এবং দোকান ভাড়ার কারণে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।
কলকাতা থেকে ঈদের বাজার করে আসা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশী ক্রেতা ধরতে ভারতে গড়ে উঠছে নতুন নতুন বাজার। বিশেষ করে কলকাতার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা মির্জা গালিব স্ট্রিট, মল্লিকবাজার, বেলগাছিয়া, নিউমার্কেট, চিৎপুর, টালিগঞ্জ, এন্টালি, আনোয়ার শাহ রোড, রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস মেটিয়াবুরুজ, খিদিরপুর, পার্ক স্ট্রিট, চিৎপুরের জাকারিয়া স্ট্রিট, ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদ চত্বর এলাকায় ইতোমধ্যে ঈদের জমজমাট বিক্রি শুরু হয়েছে। এসব এলাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এর বাইরে ধর্মতলা থেকে গড়িয়াহাট, শিয়ালদহ থেকে রাজাবাজার বা বেলগাছিয়া-পার্ক সার্কাস থেকে এন্টালি-খিদিরপুর এলাকাতেও ঈদের কেনাকাটার ধুম লেগেছে। কলকাতার বিখ্যাত বিগ বাজার, শ্রী লেদারস, খাদিম, সাউথ সিটি মলসহ বিভিন্ন মার্কেটে ঈদ উপলক্ষে কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর বিশেষ ছাড়ও দেয়া হচ্ছে। ব্র্যান্ডের দোকানগুলো ছাড়াও বড় বাজার বা চায়না মার্কেট এলাকায় পাইকারি মূল্যে শাড়ি, থ্রিপিস, প্রসাধনী কিনছেন অনেক বাংলাদেশী।
ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে জানা যায়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকে আরো সুগম করতে ২৪টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াতকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসায় প্রবেশ ও প্রস্থান নিষেধাজ্ঞা অপসারণ করা হয়েছে। ভিসাপ্রাপ্তি সহজতর করতে ঢাকার বাইরে বড় শহরগুলোয় বেশকিছু ভিসা সেন্টার খোলা হয়েছে। ফলস্বরূপ বাংলাদেশের মানুষ ব্যাপক হারে ভারতীয় ভিসা গ্রহণ করছে। বছর প্রথম পাঁচ মাসে ভারতীয় ভিসা গ্রহণকারীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। কেবল রমজানের রশুরুতেই ভিসা গ্রহণ করেছেন দেড় লক্ষাধিক বাংলাদেশী। এর বাইরে বিনা ভিসায় ভারত সফরকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।


আরো সংবাদ



premium cement