পাপিয়াকে কেন্দ্র করে নরসিংদী আ’লীগে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব
- নরসিংদী সংবাদদাতা
- ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
অনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত শামীমা নূর পাপিয়াকে কেন্দ্র করে নরসিংদী আওয়ামী লীগের দন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। কেউ আর পাপিয়াকে নিজেদের অনুসারী বলতে রাজি নয়, তার অপকর্মের দায়ও নিতে চাইছে না কেউ। বরং গ্রুপগুলো দোষ চাপাচ্ছে অন্যের ঘাড়ে।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, নরসিংদী সদরের এমপি ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক) দাবি করেন, পাপিয়াকে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ২০১৪ সালে যুব মহিলা লীগের কাউন্সিলের সময় আমি মঞ্চে বসে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তারকে অনুরোধ করেছিলাম পাপিয়াকে কোনোভাবেই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে না আনতে। তখন নাজমা আক্তার, বর্তমান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন ভূঁইয়া আমার সাথে একমত হয়েছিলেন; কিন্তু কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল এতে একমত না হওয়াতে আমার সাথে তার কথাকাটাকাটি হয়। পরে ঢাকা এসে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে পাপিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।
পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনের অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেখানে পাপিয়ার অপকর্মের দায় যুব মহিলা লীগ নিচ্ছে না সেখানে আওয়ামী লীগ দায় নেয়ার প্রশ্নই আসে না। পাপিয়ার স্বামী মতি সুমন কার লোক, তাদের জন্ম কোথা থেকে নরসিংদীবাসী জানে। তাকে যারা তৈরি করেছে এ দায় তাদের, আওয়ামী লীগের নয়। নরসিংদীর রাজনীতিতে সুমন ও পাপিয়া আমার অনুসারী নয়। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার নির্বাচনী প্রচার করতে চায় পাপিয়া ও সুমন। আমি বলেছি, আমার নির্বাচনী প্রচারণা তোমাদের করতে হবে না। কারণ তারা ভোট চাইলে আমার ভোট আরো কমবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে পাপিয়ার স্বামী নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান। অনেক আগে থেকেই চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত তিনি। এলাকায় পাপিয়া ও তার স্বামী নরসিংদী সদর আসনের এমপি নজরুল ইসলাম হীরু বলয়ের লোক হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালে জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তৌহিদা সরকার রুনা সভাপতি ও পাপিয়া চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। হঠাৎ পাপিয়া এত বড় পদ পাওয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি তৌহিদা সরকার রুনা বলেন, পাপিয়া যদিও তার সাথে কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া পাপিয়া সাধারণ সম্পাদক হলেও দুই-একটা সভা ছাড়া দলীয় কর্মকাণ্ডে তেমন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেননি।
এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, পাপিয়াকে রাজনীতির মাঠে আমদানি করেছেন এমপি নজরুল ইসলাম হীরু। এর দায় দলের অন্য কেউ নেবে না। আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। নরসিংদীর পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, পাপিয়াকে যুবলীগ নেত্রী বানানোর সময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিরোধিতা করেছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা তা আমলে নেননি। কাউন্সিল শেষে ঢাকা থেকে পাপিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়। নরসিংদীর একাধিক রাজনৈতিক নেতা জানান, পাপিয়া যে ঢাকায় অভিজাত হোটেল ভাড়া নিয়ে অসামাজিক ব্যবসা চালাতেন এটা অনেকেরই জানা ছিল। তবে প্রভাবশালীদের সাথে তার ওঠাবসা থাকায় এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছুই বলতেন না।
প্রসঙ্গত, পালিয়ে দেশত্যাগ করার সময় গত শনিবার রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শামীমা নূর পাপিয়া (২৮) এবং তার স্বামী ও অপরাধের সহযোগী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯), ও শেখ তায়্যিবাকে (২২) গ্রেফতার করে র্যাব। আটকের পর বহিষ্কৃত যুব মহিলালীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার অপরাধ জগতের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য বের হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে দেহব্যবসা, অস্ত্র-মাদক কারবার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। মনোরঞ্জন করে মন জুগিয়েছেন ওপরওয়ালাদের। আবার তাদেরই ব্ল্যাকমেইলিং করে ফাঁদে ফেলেছেন। চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা