২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাগেরহাট বিআরটিএ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ

-

বাগেরহাট বিআরটিএ কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শকের বিরুদ্ধে গত দুই বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণসহ নানাবিধ অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন কি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ঝঊওচ প্রকল্পের প্রশিক্ষণার্থী চালকরাও এই ঘুষের আওতা থেকে বাদ পড়েননি। তাদের কাছেও জনপ্রতি তিন হাজার করে টাকা দাবি করা হয়েছে। টাকা দিতে অস্বীকারকারী চালকদের পরীক্ষায় ফেল করানো হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তরা দালালের মাধ্যমে টাকা দিয়ে মোটর যান পরিদর্শকের নেকনজর লাভ করছে।
বাগেরহাট টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী সেখ মনিরুজ্জামান ও শিক্ষার্থীরা বিআরটিএর চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ করেছেন। লিখিত ওই অভিযোগে জানা গেছে, বাগেরহাট টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ঝঊওচ প্রকল্পের অধীনে চার মাস ধরে প্রায় অর্ধশত বেকার যুবক ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে উল্টো আরো টাকা পেয়েছেন। সেই প্রশিক্ষণার্থীরা ড্রাইভিং লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করার পর পরীক্ষার্থীদের ঢালাওভাবে অকৃতকার্য করা হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় জনপ্রতি তিন হাজার টাকা দাবি করা হয়। আর সেই টাকা প্রদানের জন্য পরিদর্শকের মিঠু নামে এক আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
এ ছাড়া গত ২১ অক্টোবর পরীক্ষার দিন ধার্য থাকলেও গতকাল ৯ অক্টোবর সেইসব প্রার্থীদের বহিরাগত দালাল মারফত ফোন করে ডেকে এনে পরীক্ষা নেয়া হয়। এর মধ্যে ফকিরহাটের আট্টাকী গ্রামের শেখ ইশারাত আলীর ছেলে শেখ ইবাদত আলীকে (১১৪ নম্বর রোলধারী এক প্রার্থী) অনলাইনে আবেদন করায় তাকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন। তার পরীক্ষার তারিখ ছিল ২১ অক্টোবর। তাকে ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় মোবাইলে বিআরটিএ অফিসের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে এক দালাল ফোন দিয়ে বলেন ৯ অক্টোবর পরীক্ষায় আসতে। এ দিন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। পরে সাংবাদিক ও ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পরীক্ষা দিতে পারেন তিনি।
বাগেরহাট বিআরটিএর সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহম্মেদ জানান, ড্রাইভিংয়ের লারনার বাবদ সরকারি ফি ৩৪৫ টাকা থেকে ৫১৮ টাকা। আর ডিএল বাবদ সরকারি ফি ২৫৪২ থেকে ১৬৮৯ টাকা। এই টাকা সরকারি রাজস্ব হিসেবে জমা হয়। তবে তিনি মোটরযান পরিদর্শকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এসেছে বলে উল্লেখ করে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বাগেরহাট বিআরটিএ কার্যালয় শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে উল্লেখ করেন।
এ দিকে বাগেরহাট বিআরটিএ কার্যালয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আসা একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন লারনার ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বাগেরহাট বিআরটিএর সাথে যুক্ত একাধিক দালাল কাজ করছে। তাদের মাধ্যমে সাড়ে সাত হাজার থেকে আট হাজার টাকা প্রদান করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। তবে শর্ত থাকে পরীক্ষার দিন পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। প্রতি পরীক্ষায় প্রায় ১৫০ জন অংশ নেন। এর ভেতর থেকে চুক্তি অনুযায়ী যারা এগিয়ে থাকবেন তাদের কৃতকার্য করা হয়। আর যারা চুক্তিতে আসতে অপারগতা দেখান তাদের অকৃতকার্য করা হয়। আর দালালদের মাধ্যমে প্রদত্ত অতিরিক্ত নেয়া হয় ৪৯৪০ টাকা। এই টাকার মধ্যে দালাল ও অফিসের কর্মচারীরা পেয়ে থাকেন এক হাজার থেকে ১৯০০ টাকা। আর বাকি তিন হাজার টাকা দিতে হয় মোটরযান পরিদর্শককে। এ টাকার কম হলে কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষায় কৃতকার্য করা হয় না। এ ছাড়া বিআরটিএ অফিসের কর্মচারী নয় এমন একাধিক ব্যক্তিকে টাকা কালেকশনের সুবিধার্থে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন স্থানে বসিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ দিকে অভিযুক্ত মেহেদি হাসানের সাথে কথা বললে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই অফিসে যোগদান করেছেন তিনি দুই বছর প্রায়। এ সময়ে তিনি তেমন কোনো অনিয়মের সাথে যুক্ত হননি। তা ছাড়া কাজে গতি আনার জন্য কিছু লোককে বসিয়ে অফিসের ফাইল জট কমিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement