২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
জীবিকার জন্য সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া

চৌগাছার ৭ জনের সন্ধান মেলেনি ৬ বছরেও

-

যশোরের চৌগাছার একই পরিবারের চারজনসহ সাতজন জীবিকার অন্বেষণে ছয় বছর আগে দালালের হাত ধরে মালয়েশিয়া যান। স্বজনদের চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও মেলেনি তাদের সন্ধান। এদিকে পরিবারের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে হতাশা বেড়েই চলেছে। তাদের সন্ধানের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
জানা যায়, ২০১৩ সালে ১ জুন উপজেলার মুক্তদাহ গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে অমিত হাসান মুকুল (৩০), হায়দার আলীর ছেলে আজিজুর রহমান (৪০), মৃত বদরউদ্দিনের ছেলে ফুলজার হোসেন (৪৬), মৃত ছবেদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম খোকন (৪০), মৃত আত্তাব হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৭), রোস্তমপুর গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে রমজান আলী (৪৫) ও দুর্গাবরকাটি গ্রামের উসমান আলীর ছেলে লিটন হোসেন (২৭), মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অল্প টাকায় মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে তারা আদম ব্যাপারির খপ্পরে পড়েন। মুক্তদাহ গ্রামের ঘরজামাই সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা রাজু আহমেদ ওরফে ফজলুর রহমান তাদের ফুসলিয়ে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যান। ১২ জুন অমিত হাসান মুকুল বাড়িতে ফোন করে বলেন, ‘আমরা সবাই সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছি। ট্রলারে উঠেছি আমাদের জন্য দোয়া করবা, এখনই রওনা দিবো।’ ওই কথাই পরিবারের সাথে তার শেষ কথা।
মুকুলের স্ত্রী চামেলি খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘যে নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছিল সেই নাম্বার তারপর থেকে বন্ধই পেয়েছি। বারবার চেষ্টা করতে করতে ছয়টি বছর কেটে গেলেও তাদের সন্ধান পাইনি। অতিকষ্টে দিন কাটে আমাদের।’ নিখোঁজ শরিফুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী রেশমা বেগম, ফুলজার রহমানের স্ত্রী রূপবান বেগম ও আজিজুর রহমানের বৃদ্ধা মা মনোয়ারা বেগম (৬০) বলেন, ‘বহু চেষ্টা করেও তাদের কোনো সন্ধান পাইনি।’
ভুক্তভোগীরা জানান, নিখোঁজের তিন মাস পর আমরা আদম ব্যাপারি রাজুর কাছে যাই। আমাদের স্বজনদের ফিরিয়ে দিতে চাপ দিতে থাকি। এ সময় রাজু তার সহযোগী চট্টগ্রামের টেকনাফের অপর আদম ব্যাপারি রাশিদুল ইসলামের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেয়। টেকনাফের আদম ব্যাপারি রাশিদুল আমাদের জানায়, কোনো সমস্যা নেই, তারা অল্প দিনের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় পৌঁছে যাবে। পৌঁছানোর পর চুক্তি মোতাবেক জনপ্রতি দুই লাখ ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। কিছুদিন পরই আদম ব্যাপারি রাজু তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে রাতের আঁধারে মুক্তদাহ গ্রাম থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে টেকনাফে রাশিদুল ইসলাম ও সাতক্ষীরার রাজুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা আজ পর্যন্ত স্বজন অথবা কোনো দালালের সন্ধান করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে নিখোঁজ মুকুলের বাবা আতিয়ার রহমান জানান, আমরা ঘটনার প্রথম দিকে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক ছোটাছুটি করেছি। কিন্তু আদম ব্যাপারিদের কোনো সন্ধান পাইনি। আমাদের গ্রামের পাঁচজন, রোস্তমপুর গ্রামের একজন, দুর্গাবরকাটি গ্রামের একজনসহ ঝিকরগাছা উপজেলার আরো আটজন এই দালালদের খপ্পরে পড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় রওনা দেয়। কিন্তু ছয় বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত কারো কোনো সন্ধান মেলেনি। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি আরো বলেন, রোজগারকর্তা না থাকায় বর্তমানে এসব পরিবারে সীমাহীন দারিদ্র্য নেমে এসেছে। অনেকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ অথবা গার্মেন্টে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
নিখোঁজ আজিজুর রহমানের স্ত্রী দু’টি সন্তান রেখে অন্যত্র চলে গেছেন। দাদীর কাছেই সন্তান দুটি অতিকষ্টে বড় হচ্ছে। স্বজনদের প্রশ্ন আদৌও তারা বেঁচে আছে নাকি দালালরা তাদের হত্যা করেছে। এ উত্তর জানার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement