২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চাঁদা না দেয়ায় কাউখালী-বটতলী সড়ক বন্ধ করে দিলো ইউপিডিএফ

-

যাত্রীর অপেক্ষায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে সিএনজিগুলো। কিন্তু কোনো যাত্রী সিএনজিতে চড়বে না। কিছু যাত্রী সিএনজিতে উঠলেও তাদের জন্য টেনে দেয়া হয়েছে সীমারেখা। সিএনজিসহ অন্যান্য যানবাহনকেও কাশখালী মসজিদ মার্কেটের ব্রিজ পর্যন্ত সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ। এর ব্যতিক্রম ঘটলে সরাসরি গুলির হুমকিও। এ যেন ভিন্ন কোনো রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সীমানা বা নো-মেনস ল্যান্ড। চালকরা চাঁদা না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাঙ্গামাটির কাউখালী-বটতলী সড়কে এমন কাণ্ড ঘটায় ইউপিডিএফ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কাউখালী সদর থেকে কাশখালী হয়ে দুর্গম বটতলী পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। পূর্বে কাশখালী মসজিদ মার্কেট এলাকা পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করলেও পরবর্তীতে রাস্তা সম্প্রসারিত হওয়ায় উপজেলা সদর থেকে বটতলী পর্যন্ত সিএনজিসহ অন্যান্য যান চলাচল শুরু করে। কিন্তু বছরের শুরু থেকে ইউপিডিএফ শ্রেণী ভেদে প্রতি যানবাহনের চাঁদা নির্ধারণ করে দেয়। এ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালকদের ডেকে নিয়ে বিগত দুই বছর ও চলতি বকেয়াসহ মাথাপিছু তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে বিশেষ টোকেন নিতে বলে। এতে চালকরা রাজি না হওয়ায় বটতলী সড়কে গাড়ি চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
উপজেলা সদর থেকে কাশখালী মসজিদ মার্কেট বাঙ্গালীপাড়া পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করলেও উপজাতীয় যাত্রীদের গাড়িতে উঠতে নিষেধ করে দেয়। সন্ত্রাসীদের ভয় উপেক্ষা করে কাশখালী পর্যন্ত কিছু যাত্রী সিএনজিতে উঠলেও তাদের বড় আতঙ্কে থাকতে হয়। ফলে সদর থেকে বটতলী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার পাহাড়ের উঁচু নিচু রাস্তা হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে। সাপ্তাহিক হাটবারে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় অসহায় মানুষগুলোকে।
কাশখালী-বটতলী সড়কের সিএনজি চালক উচিংমং মারমা (৪০) জানান, সারা দিন গাড়ি চালিয়ে সংসার ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হয়। তাদের এহেন হটকারী সিদ্ধান্তে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। বটতলীর কৃষক চাইহ্লাঅং মারমা (৪৫) জানান, গাড়ি না থাকায় ভোর ৫টায় তরকারি নিয়ে হেঁটে বাজারে এসেছি। অনেক কষ্ট হয়েছে। হাটহাজারীর একটি স্কুলে পড়ে বটতলীর মনু মারমা (১২)। সে জানায়, অনেক দিন পর বাড়ি এসেছি বেড়াতে। হেঁটে ফিরে যেতে হবে শুনে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবুও যেতে হবে কিছু করার নেই। যাত্রী না থাকায় এ সড়কের শতাধিক সিএনজি চালকদের দিনভর বেকার বসে থাকতে হচ্ছে। চালক বেলাল জানান, সন্ধ্যা হলেই মালিকের গাড়ির ভাড়া পরিশোধ করে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
এ দিকে যৌথবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে কিছুটা কোণঠাসা ইউপিডিএফ। গত দুই মাসে কাউখালীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে টাকাসহ বেশ কয়েকজন ইউপিডিএফের চাঁদাবাজ আটক হয়। এর পর থেকে চাঁদায় নির্ভর ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে তারা মরণ কামড় দিচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর। বার্ষিক ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ৫ আগস্ট স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। যেসব ব্যবসায়ী চাহিদা মতো টাকা পরিশোধ করবে না তাদের দোকানে কোনো পাহাড়িকে বাজার করতে বারণ করা হয়েছে। আতঙ্কিত সাধারণ পাহাড়িরা তাদের কথার বাইরে গেলে তালিকা করে নির্যাতন চালানো হয়। কাউখালী স্থায়ী ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দিন জানান, ব্যবসা বাণিজ্যে এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পেতে কাশখালী সেনাক্যাম্প পুনঃস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement