১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গুজব ছড়িয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ছাড় নয় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

-

পদ্মা সেতুতে শিশুর মাথা লাগার গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের ছাড় দেয়া হবে না। যারাই এই ঘটনা ঘটাচ্ছেন আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি পেতেই হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুজবে নির্ভর করে গণপিটুনির মতো অন্যায় কাজে অংশ না নিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে কতগুলো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে। ঘটনাগুলো কারো কাছে কাম্য নয়। সবগুলো নিছক গুজব, এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। যারা বিবেচনা না করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, যারা গণপিটুনিতে অংশ নিচ্ছেন, তাদের একজন বা এক শ’ জনও যদি এমন ঘটনা ঘটান, শাস্তি একই রকম হবে। এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটলে আমরা দোষীদের অবশ্যই আইনের মুখোমুখি করব। আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি পেতেই হবে। গুজবের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা ও ধমীয় প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দিয়েছি।
ছেলেধরা সন্দেহে গত কয়েক দিনে সারা দেশে ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের ভিডিও দেখে শনাক্ত করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে ৮১ জনকে গ্রেফতার করেছি, আরো গ্রেফতার করব। এতে আহত হয়েছেন ১৫ জন। মামলা হয়েছে ৯টি, জিডি হয়েছে ১৫টি। তবে আমরা গণগ্রেফতারে বিশ্বাস করি না। যিনি অপরাধ করেছেন তাকে শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করব। এর আগে যখন পদ্মা সেতুতে শিশুর মাথা লাগার গুজব ছড়ানো হয়, তখন আমরা চারজনকে শনাক্ত করেছি এবং তাদের গ্র্রেফতার করেছি। তিনি বলেন, যারা কোনো বিবেচনা ছাড়াই আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যদি কারো বিষয়ে সন্দেহ হয়, তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সোপর্দ করুন। তাদের ফোনে জানান, অথবা ৯৯৯ প্রচলিত রয়েছে, সেখানে জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধীরাই গণপিটুনির শিকার হচ্ছেন বেশি। এনজিওকর্মীদেরও এ ধরনের ঘটনার শিকার হতে হয়েছে। আমরা দেখেছি ব্যক্তিগত আক্রোশে ধামরাইয়ে রটনা রটিয়ে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক শাসনের অবক্ষয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গত ২০ জুলাই বাড্ডায় মা তার সন্তানকে ভর্তির জন্য তথ্য নিতে গিয়ে যে ঘটনার শিকার হলো এটা সারা দেশবাসীকে ব্যথিত করেছে, আমরাও এই ঘটনা খুব গুরুত্বের সাথে দেখছি। ইতোমধ্যে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা ৭ জনকে গ্রেফতারও করেছি। যারা যারা সেখানে ছিল, এ ঘটনার জন্য দায়ী যারা সবাইকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা আমরা নেবো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা মসজিদের ইমাম সাহেবদের বলছি, সব জায়গায় বলছি- এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে। সেই সাথে আমরা বলতে চাচ্ছি, যারা ফেসবুকে এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন, আমাদের পুলিশ কিন্তু বসে থাকবে না। যারাই ঘটাবেন, তাদের আমরা শনাক্ত করব। তাদের আমরা আইনের মুখোমুখি অবশ্যই করব। আমাদের পুলিশকে এত অদক্ষ ভাববেন না।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, যারা সাইবার ক্রাইম করেছেন, ফেসবুকে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে যে ক্রাইম করেছেন আমরা অলরেডি কয়েকজনকে শনাক্ত করে অ্যারেস্ট করেছি। সবাই (আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী) সক্রিয় রয়েছে। যারাই ঘটাবেন, যারাই উদ্দেশমূলকভাবে এই প্রচারণা করতে চেষ্টা করবেন, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইবেন অবশ্যই তাকে আইনানুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। তিনি বলেন, ডিসি ও এসপিদের বলে দেয়া হয়েছে তারা যেন খেয়াল রাখেন কোন জায়গায় যেন এই ধরনের গুজব বিস্তার লাভ করতে না পারে। যেখানে গুজব সেখানেই যেন তারা অ্যাকশনে যেতে পারে, সেই ধরনের ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সব ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা দেখছেন কি না- একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আপনার কাছে কি মনে হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন ব্যর্থতা আছে? থাকলে আপনি আমাকে খবর দিতেন, আমি তখনই ব্যবস্থা নিতাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাথে সাথে কাজ করত।
মামলাগুলোর বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে কি না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা যথাসম্ভব মামলাগুলোর চার্জশিট দিয়ে দেবো। তাড়াতাড়ি যাতে বিচার হয়, আমরা সেটারও ব্যবস্থা নেবো। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দিলেই যে দ্রুত বিচার হবে তেমন তো কোনো কথা নয়, আমরা কত তাড়াতাড়ি দিতে পারি সেটা হলো বড় কথা।


আরো সংবাদ



premium cement