১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড লাগিয়ে ফেলা হচ্ছে ময়লা

শ্রীপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের এ কেমন প্রহসন

-

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি ব্রিজসংলগ্ন খালে দীর্ঘ দিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে শ্রীপুর পৌরসভা। এতে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি চরমভাবে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।
যে স্থানে শ্রীপুর পৌরসভা ময়লা ফেলছে সেখানে ময়লা ফেলতে নিষেধ করে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি লিখে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছে পৌর কর্তৃপক্ষই। সাইনবোর্ডে লিখা আছে ‘এ জায়গায় ময়লা ফেলানো সম্পূর্ণ নিষেধ, ময়লা ফেললে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। -নির্দেশক্রমে পৌর কর্তৃপক্ষ।’ সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দেখে মনে হয় যেন এটিই ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুল, মাদরাসা ও কলেজগামী শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা। অচিরেই এ ময়লা অপসারণ করে উৎকট গন্ধ থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আশা করছেন এলাকাবাসী।
ওই জায়গায় পৌর কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় পৌরসভার নির্ধারিত ভ্যানে করে ময়লা ফেলতে দেখা গেছে। ভ্যানচালকের নাম জিজ্ঞাসা করলে সে পরিচয় জানাতে রাজি হননি। উল্টো প্রশ্ন করে, আমার নাম লেইক্কা কী করবেন। আমাকে কইছে এইহানে ফেলতে, তাই আমি ফালাইতেছি। কে বলছে- জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন, পৌরসভার স্যারেরাই বলছে এহানে ময়লা ফালাইতাম।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ যেখানে নিজেই আইন ভঙ্গ করছে, সেখানে সাধারণ মানুষ কিভাবে আইন মেনে চলবে? তা ছাড়া শ্রীপুর পৌরসভা কতটুকু ‘শ্রী’ নিয়ে আছে তা পৌরসভার প্রবেশদ্বার দেখলেই সহজে বুঝা যায়।
শুক্রবার দুপুরে সরজমিনে দেখা যায়, সড়কের একপাশে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ, মরা পশু, মুরগির নাড়িভুঁড়ি পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাশ দিয়ে নাক ঢেকে চলছেন পথচারীরা। স্থানীয়রা বাসিন্দারা বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান। ময়লা ফেলা অব্যাহত থাকায় এলাকার জনসাধারণের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
চ্যাম্পিয়ন পরিবহনের চালক মফিজুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের এ স্থানে আসলেই আর সামনে যেতে মন চায় না। ১০০ মিটার সড়ক পার হতে অনেক কষ্ট হয়। বিরক্তিকর দুর্গন্ধ। বমি চলে আসে। এ রকম অবস্থা অনেক দিন থেকে চলছে। আমরা দ্রুত এ অবস্থার সমাধান চাই।
জৈনা বাজার এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ আল-আমীন বলেন, প্রতিদিন গাজীপুর থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য এ সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হয়। কিন্তু সড়কের এ স্থানে (গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি) এলে ময়লা আবর্জনা থেকে উৎকট গন্ধ ছড়ায়। নাক চেপে গাড়িতে চালাতে হয়। যাত্রীরাও নাক-মুখ চেপে চালককে দ্রুত গাড়ি চালাতে তাড়া দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাস্টারবাড়ি এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করলেও পৌরবাসী কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না। ফলে ব্যস্ততম এ মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি হোটেল রেস্টুরেন্টসহ অধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ময়লা এখানে ফেলা হচ্ছে। এগুলো অনেক সময় সড়কের উপরে চলে আসে। এতে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, শ্রীপুর পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা আমার চোখে পড়েনি। ফলে বাধ্য হয়ে সড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। আমাদের পক্ষ থেকে সড়কের পাশে ময়লা ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। নিরুপায় হয়ে লোকজন সড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। অতীতে সড়কের পাশে ফেলা ময়লা আমি নিজ খরচে অপসারণও করেছি। প্রশাসন, স্থানীয় কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ এগিয়ে এলে সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা সম্ভব। তারা সবাই মিলে একটি জায়গা নির্ধারণ করে দিলে সড়কের পাশে কেউ ময়লা ফেলবে না।
ব্যবসায়ী তমিজ উদ্দিন বলেন, ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়েছে আশে-পাশের এলাকা। পৌরসভার শোভা বর্ধন, সৌন্দর্য রক্ষা, নাগরিকদের পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পৌর কর্তৃপক্ষের অন্যতম দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অথচ সেই শ্রীপুর পৌরসভা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে।
শ্যামলী পরিবহনের চালক আমজাদ হোসেন জানান, মহাসড়কের এ স্থানে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। কোনো কোনো সময় অতিরিক্ত ময়লা জমে সড়ক দখল করে রাখে। এতে সড়কের প্রশস্ততা কমে যায়। ময়লা পচে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এর ফলে এ স্থান দিয়ে চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালকেরা স্লিপ খেয়ে দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শ্রীপুর পৌরসভার পরিদর্শক (কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টর) জহির রায়হান বলেন, শ্রীপুর পৌরসভার ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। আমরা কয়েক দিন পর পর মহাসড়কের পাশ থেকে ময়লা পরিষ্কার করে থাকি। ময়লা ফেললে ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিষয়ে তিনি বলেন, পৌরসভার বাইরের কেউ এখানে ময়লা ফেললে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ শামছুল আরেফীন বলেন, একটি নিরাপদ সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে। দুর্গন্ধে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। আশা করছি মহাসড়কের পাশে ময়লা না ফেলার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুরের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফ উদ্দিন জানান, গত ১১ জুন জেলা প্রশাসকের মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। পৌরসভা বিনা অনুমতিতে আমাদের রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে আসছে। এতে আমরা ভীষণ বেকায়দায় পড়েছি। রাস্তার অর্ধেক অংশে ময়লা ফেলায় ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা পৌরসভাকে জানিয়েছি এবং জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি একাধিকবার বিষয়টি তুলেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই বিষয়টির সমাধান হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement