১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাবনায় তাঁতিদের মনে নেই ঈদ আনন্দ রঙ সুতার দাম তিন গুণ বৃদ্ধি নেই কাপড়ের দাম

-

ঈদের পোশাক তৈরি করলেও পাবনার তাঁতিদের মধ্যে নেই ঈদের আনন্দ। তারা চোখে মুখে দেখছেন ঘোর অন্ধকার। নেই কাপড়ের দাম। কিন্তু রঙ, সুতা ও মজুরিসহ তাঁত শিল্পের অন্য সরঞ্জামাদির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে লাগামহীন। তাঁতিদের বক্তব্য, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাঁচামালের দাম বেড়েছে তিন গুণ। কিন্তু সে তুলনায় কাপড়ের দাম পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের তাঁতিরা। অনেকেই পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। তাঁত বিক্রি করে ভ্যান, অটোরিকশা ও ইঞ্জিনচালিত নছিমন করিমন চালিয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে আছেন কোনোমতে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাবনা জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মধ্যে জালালপুর নতুনপাড়া, দোগাছী, চাচকিয়া, আতাইকুলা, বনগ্রাম, হাতিগাড়া, হাটুরিয়া, জগন্নাথপুর, পেচাকোলা, রাকশা, বাটিয়াখরা, সোনাতলা, ছেঁচানিয়া, ডহরজানি, ডেমরা, নাগডেমরা, পার ফরিদপুর, বনওয়ারিনগর, আমিনপুর, মাসুমদিয়া, কুড়িপাড়া, গোপালপুর, একদন্ত, শিবপুরসহ অন্যান্য এলাকা তাঁত শিল্পের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু তাঁতশিল্প দিন দিন কমে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৩০ ভাগ তাঁত। অনেকে এ পেশা ধরে রাখছেন অনেক কষ্টে। এতে অধিকাংশ তাঁতি ঋণগ্রস্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত ঘরবাড়ি বিক্রি করে পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের। নতুনপাড়ার তাঁতি আব্দুল মতিন জানান, রঙ ও সুতার দাম বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। তার সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে বিদ্যুৎ বিল ও শ্রমিকের মজুরি। কিন্তু দুই তিন বছর আগে যে দামে কাপড় বিক্রি করা হতো এখনো সেই দামই আছে। আগে একটি লুঙ্গি শ্রমিকের মুজরি ছিল ২৭ টাকা। সেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকায়। ফলে দিন দিন তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন। তিনি আরো জানান, দু’টি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেও কোনো কূল পাননি তিনি। ফলে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে নিজের থাকার ঘর বিক্রি করতে হয়েছে। একই কথা জানান নতুনপাড়ার তাঁতি সাইদুল ইসলাম ও নুরুজ্জামান। তারা বলেন, আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারকে সহজ শর্তে লোন দিতে হবে। তাহলে এই পেশা আমরা ধরে রাখতে পারব নইলে অন্য পেশায় চলে যেতে হবে।

দিন দিন লোকসানের মুখে পড়ে জেলার প্রায় ১০ হাজার তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আর দেশী ও বিদেশী প্রযুক্তি মিলিয়ে পাওয়ার লুম কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় সাড়ে ৩০০। এ কারণে টিকে থাকার যুদ্ধে হেরে গিয়ে অনেক তাঁত মালিক হয়ে পড়েছেন শ্রমিক। আবার অনেক শ্রমিক তাঁতের কাজ ছেড়ে নেমেছেন ভিন্ন পেশায়। জালালপুর এলাকার তাঁত মালিক বরকত আলী ও আব্দুল করিম জানান, রঙ, সুতাসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দামের সাথে পেরে উঠতে পারছেন না মহাজনরা। এর সাথে যোগ হয়েছে অতিরিক্ত ট্যাক্স ও ভ্যাট। কাপড় উৎপাদনের পেছনে যে খরচ হয়, তা উঠে আসে না। আর ব্যাংকে তাঁতিদের সহজশর্তে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে তারা বৈষম্য দেখেন, শুধু বড়লোক মহাজনেরাই এটি পেয়ে থাকেন। প্রান্তিক বা তৃণমূলের তাঁতিদের তেমন সুবিধা দেয়া হয় না। ফলে বড়লোক মহাজন আরো বড়লোক হন, অপর দিকে প্রান্তিক অল্পপুঁজির তাঁতিদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এসব তাঁত মালিকদের দাবিÑ তাদের ঘিরে পৃথকভাবে তাঁত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হলে অনেকটাই উপকৃত হতেন তারা। তাদের এ পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান এ অঞ্চলের তাঁতিরা।


আরো সংবাদ



premium cement