১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুত হচ্ছে ৪০টি বগি

-

এবারের ঈদে যাত্রীসেবায় রেলবহরে যুক্ত হচ্ছে ৪০টি বগি (ক্যারেজ)। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় আরো বগি তৈরির কাজ চলছে জোরেশোরে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক বগি প্রস্তুত হয়ে গেছে। শিগগিরই সেগুলো রেলের পরিবহন পুলে হস্তান্তর করা হবে।
রেলওয়ে কারখানা সূত্র জানায়, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সেবা দিতে রেলের বিভিন্ন বহরে ৪০টি বগি সংযুক্তকরণের উদ্যোগ নিয়েছে রেলবিভাগ। অতি পুরাতন, চলাচলের অনুপযোগী এসব কোচ মেরামত করা হচ্ছে কারখানাটিতে। কারখানার ২২টি উপশপে এসব মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সহস্রাধিক শ্রমিক।
সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরামহীন চলছে বগি মেরামত কাজ। কেউ ওয়েল্ডিং, কেউ বা রঙ, কেউ বা আসন মেরামত আবার কেউবা চাকা মেরামতে ব্যস্ত।
ক্যারেজ শপের খালাশি উজ্জ্বল বিশ^াস জানান, এখানে বছরের অন্যান্য সময় যেভাবে কাজ হয় ওই সময়ের চেয়ে ঈদ ঘিরে বেশি ব্যস্ত থাকি আমরা। কারণ ঈদে লক্ষ্যমাত্রা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেয়া হয় আমাদের। এ জন্য সে সময় নির্ধারিত সময়ের চেয়েও অতিরিক্ত সময় কাজ করি।
আরেক শ্রমিক নাজমুল হাসান বলেন, রমজান মাসে আমরা কোনো ছুটি কাটাই না। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও সেটিও। আমাদের মাথায় তখন একটি চিন্তা থাকে ঈদের জন্য আমাদের এখানে তৈরি হওয়া বগিগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীরা বাড়িতে ফিরবে। এ কারণে কাজটাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি।
তবে শ্রমিকরা আক্ষেপ করে বলেন, লোকবলসঙ্কট প্রকট হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিটি শপে প্রয়োজনের বেশির ভাগই লোক নেই। যার কারণে সময় বেশি দিতে হচ্ছে। অতি দ্রুত কারখানার জনবলসঙ্কট পূরণ করা না হলে অনিশ্চয়তায় পড়বে প্রতিষ্ঠানটি।
ক্যারেজ শপের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, এই বিভাগে ৩৯৫ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হলেও রয়েছে মাত্র ১১৮ জন। এত কম লোকজন নিয়েও শ্রমিকরা সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে মেরামত কাজ করে চলেছেন। তারপরও আমরা ঈদের আগেই কোচগুলোর কাজ শেষ করে বের করে দিতে পারব।
পেইন্টিং বিভাগের ইনচার্জ সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান, এখানে কাজ কোনো বিষয় নয়। কিন্তু মূল সমস্যা জনবল ঘাটতি। যতদিন না জনবল ঘাটতি পূরণ হবে ততদিন বেগ পোহাতে হবে আমাদের। উপরন্তু যে সমস্ত শ্রমিক রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে প্রায়ই অবসরে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যাত্রী সেবা। ঈদ এলে তো কোনো কথাই নেই। একটি বগির রঙের কাজ শেষ করতে অন্তত ৯ দিন লাগে। জনবলসঙ্কটের কারণে ধাপে ধাপে এখন সময় লাগছে ১৩ থেকে ১৪ দিনের মতো।
কারখানার সহকারী কর্মব্যবস্থাপক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, লক্ষ্য নির্ধারণ হওয়া ৪২টি বগির মধ্যে ইতোমধ্যে ২০টি বগি প্রস্তত হয়েছে। সেগুলো পরিবহন পুলে দ্রুত হস্তান্তর করা হবে।
তিনি বলেন, পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করা রেলগাড়ির যাবতীয় কাজ এ কারখানায় সম্পাদন হয়ে থাকে। তৈরি হওয়া কোচগুলো প্রথমে পার্বতীপুরে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী যুক্ত করা হয় বিভিন্ন বহরে।
কারখানা সূত্র জানায়, ঈদে যাত্রীদের সুবিধার্থে নীলসাগর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, একতা, দ্রুতযান, তিতুমীর এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, সীমান্ত এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন বহরে অতিরিক্ত বগি যুক্ত করা হবে। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে রেল বিভাগকে প্রতি বছরই এটি করতে হয়।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক জয়দুল ইসলাম জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি হওয়ার আগেই অর্থাৎ জুনের ২ তারিখের আগে এখানে প্রস্তুত হওয়া বগিগুলো হস্তান্তর করা হবে পরিবহন পুলে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে শতকরা ৬৭ ভাগ শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে এ ছাড়া ঘাটতি রয়েছে বাজেটেও। যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক মিলে দুই বিভাগে তিন হাজার ১৭১ জন শ্রমিক প্রয়োজন হলেও রয়েছেন মাত্র এক হাজার ২০ জন। তারপরও যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
জয়দুল ইসলাম বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা নির্বিঘেœ নিরাপদে বাড়িতে ফিরে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারলে এটিই আমাদের কাছে বড় পাওয়া।


আরো সংবাদ



premium cement