২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কৃষি এখন কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে

-

এক সময় কৃষি কৃষকের ভাগ্যের চাকা সচল করলেও বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় হাওরে বোরো মওসুমে একমাত্র বোরো ফসল কেটে গোলায় তুলতে গিয়ে মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে কৃষকের। তারপরও সব প্রতিকূলতা জয় করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কৃষক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণে হাওরে কৃষকের কপাল পুড়ছে আর ফড়িয়া ও রাইস মিল মালিকদের কপাল খুলেছে। কৃষকদের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে ধানের মূল্য ও ক্রয়ের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানালেও তা হয়নি বরং প্রতি বছর কমছে। আর রাইস মিল মালিকদের সিন্ডিকেটকে সুবিধা দিতেই ধানের চেয়ে চালের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পাঁচগুণ বেশি ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হাওর পাড়ের লাখ লাখ কৃষক। ফলে কৃষিতে দিন দিন অনীহা দেখা দিচ্ছে কৃষকদের মাঝে।
এদিকে তীব্র খরা, বীজধান কেনা, বীজতলা তৈরি, জমিচাষ, চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কার, ধান কাটা, পরিবহন ও শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যয় মেটাতে গিয়ে ঋণও করতে হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে ধানের দাম নিয়েও হতাশা এখন হাওরজুড়ে।
আক্ষেপ করে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর পাড়ের অনেক কৃষক জানান, কৃষকবান্ধব বলা হলেও বাস্তবে খাদ্য বিভাগ মিল মালিকবান্ধব আর ফড়িয়াদের হয়ে উঠেছে প্রতি বছরেই। ফলে সেন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ও চাল সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছে খাদ্য গোদাম কর্মকর্তারাও। কিন্তু সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে ধান ক্রয় সময়মতো শুরু না করায় প্রতি মণ ধান ৫৫০-৬৫০ টাকায় বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। আগামীতে আবাদ করব কি না তা নিয়ে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হাওর পাড়ের কৃষক সজল দাস ও সোহাগ মিয়া বলেন, চলতি বোরো মওসুমে কপাল পুড়েছে কৃষকদের আর কপাল খুলেছে ফড়িয়া ও মিল মালিকদের। কারণ ওই সিন্ডিকেটের জন্য প্রতি বছরের মতো এবারো ধানের চেয়ে চালের লক্ষ্যমাত্রা বেশি নির্ধারণ করাই প্রমাণ করে খাদ্য বিভাগ কৃষকদের নয় খাদ্য বিভাগ আসলে মিল মালিকবান্ধব হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় বিগত চার-পাঁচ বছরের ধরে হাওর পাড়ের কৃষককের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২০১৫ সাল থেকে ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ সালে জেলার হাওরগুলোতে জলাবদ্ধতা, অতিবৃষ্টি, আগাম বন্যা, ব্লাস্ট রোগ, খরা, শিলা বৃষ্টি, ইঁদুরে ধান কাটায় ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষক বোরো ধান চাষাবাদ করে উৎপাদন ব্যয় মেটাতে পারেছেন না। তারপরও ধানের দাম ও সরকারিভাবে ক্রয়ের পরিমাণ বাড়ানো হয়নি।
এদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ জেলায় এবার ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। সরকারি এবার মাত্র ছয় হাজার ৫০৮ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের বরাদ্দ এসেছে। অথচ ২০১৬ সালে ১৫ হাজার, ২০১৮ সালে ছয় হাজার ৮৮৭ মেট্রিক ধান কেনা হয়। ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করলেও চাল সংগ্রহ করা হবে রাইস মিল মালিকদের কাছ থেকে।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বশির আহমদ সরকার বলেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এই বোরো মওসুমে জেলার হাওর এলাকায় এক লাখ ৭২ হাজার ২২৭ হেক্টর ও হাওরের বাইরে ৫২ হাজার ২১৩ হেক্টরসহ মোট দুই লাখ ২৪ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন তিন লাখ কৃষক।
খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকদের হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, আমাদের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। কৃষকরা সরকার নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যে খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবেন এবং লাভবান হবেন।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, কৃষকদের বাঁচাতে হবে। কৃষক না বাঁচলে আমরা বাঁচব না। হাওরের কৃষকদের জন্য কৃষিঋণ, জমি চাষের পরামর্শ, কৃষি উপকরণসহ সব সেবা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চীনা কোম্পানি বেপজা অর্থনৈতিক জোনে ১৯.৯৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে মৃত মায়ের গর্ভে জন্ম নিলো নতুন প্রাণ দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে কেউ মারা যায়নি : পুলিশ সুপার হামাসকে কাতার ছাড়তে হবে না, বিশ্বাস এরদোগানের জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তার উদ্যোগ ভালো লেগেছে : সীতাকুন্ডে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১০ দেশের অংশগ্রহণে সামরিক মহড়া শুরু করল আরব আমিরাত গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ ৯ বছর পর সৌদি আরবে আসছে ইরানি ওমরা কাফেলা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের হামলার নিন্দা হেফাজতে ইসলামের ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীরা কারা?

সকল