২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিরসরাই ইকোনমিক জোনে গড়ে উঠেছে ৬১৮টি শিল্পপ্লট

-

মিরসরাইয়ে বেপজা ইকোনমিক জোনে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ৬১৮টি শিল্পপ্লট তৈরি হচ্ছে। ইকোনমিক জোনে প্রায় ৩৫০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হবে। যেখানে পাঁচ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে।
বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, মিরসরাইয়ে ১১৫০ একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল। বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চলে বেপজা জোনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। প্রথম পর্যায়ের কাজের অংশ হিসেবে প্রকল্পের চারপাশে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পে প্রস্তাবিত দু’টি সংযোগ সড়কের মধ্যে একটির কাজ চলছে। এ ছাড়া প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। এখানে বিনিয়োগকারীদের জন্য মোট ৬১৮টি প্লট তৈরি করা হবে। যেখানে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন সম্ভব। বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪৫০ কোটি মার্কিন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যাবে। যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ধাপে ধাপে বাস্তবায়নাধীন বেপজার বৃহত্তর প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ২৫০টি শিল্পপ্লট তৈরি করা হবে। যেখানে দেড় লাখ বাংলাদেশী শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে বেপজা আশাবাদী।
বেপজা অর্থনৈতিক জোনের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে গেলে বেপজার মুখপাত্র জানান, এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। ইপিজেডগুলোয় প্রতিষ্ঠিত ৫৮৮টি কারখানার মধ্যে ৪৬২টি চালু আছে। বাকিগুলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। এ কারখানাগুলোয় কর্মরত আছে প্রায় চার লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইপিজেডগুলোতে প্লট স্বল্পতার কারণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিগত কয়েক বছর জমি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। স্যামসাং সনির মতো বিশ্ববিখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানিকেও জমির অভাবে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। এ অবস্থায় বেপজার চাহিদার বিপরীতে মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাধুরচর ও পীরেরচর মৌজায় ১১৫০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে বেজা। যা বেপজার ৮ ইপিজেডের মোট আয়তনের প্রায় অর্ধেক। বেপজার অতীত সাফল্যের কারণে এরই মধ্যে বেপজা ইকোনমিক জোন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান বেপজার মহাব্যবস্থাপক নাজমা বিনতে আলমগীর। তিনি বলেন, ইপিজেড স্থাপনে বিশেষ দক্ষতা, পরিচালন অভিজ্ঞতা এবং পেশাগত জ্ঞান, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের কাজকে ত্বরান্বিত করবে। ইকোনমিক জোনটি চালু হলে বেপজার আগত বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী প্লট দেয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। প্রথম পর্যায়ের কাজের অংশ হিসেবে বেপজা ইকোনমিক জোন প্রকল্পের চারপাশে ডাইক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে অল্প দিনের মধ্যে পুরোপুরি বিনিয়োগ উপযোগী হয়ে উঠবে বলে আশা করছে বেপজা কর্তৃপক্ষ। পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চল রক্ষার জন্য বাঁধের কাজও দ্রুত গতিতে চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং এ বাঁধের কাজ করছে।
বেপজার ব্যবস্থাপক এ এস এম আনোয়ার পারভেজ জানান, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রথম পর্যায়ের কাজের অংশ হিসেবে, ভূমি উন্নয়ন, রাস্তা ড্রেন, সীমানা দেয়াল নির্মাণ, বিদ্যুৎ লাইন সাবস্টেশন ও পানির পাইপ স্থাপন ও সেনেটারি ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাদারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সৃষ্টি করা হবে।
বেপজার প্রকল্প পরিচালক আব্দুল আলিম জানান, আমরা এরই মধ্যে প্রকল্পের চারপাশে ডাইক নির্মাণের কাজ শেষ করেছি। প্রকল্পের ৩০০ ফুট চওড়া দু’টি সংযোগ সড়কের একটির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই ভূমি উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি জানান।
বেপজা সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষে বেপজা ২০১৭ সালের ১৮ মে বেজার সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেপজা ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টরস সামিট ২০১৮ এ ভিডিও কনফারেন্সে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে মিরসরাই বেপজার অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য ৭৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব ডিপিপি অনুমোদিত হয়।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একটি সংস্থা হিসেবে বেপজা আটটি ইপিজেড স্থাপন এবং সেগুলো সফলতার সাথে পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে বেপজার ইপিডেজগুলোতে পাঁচ লাখ ২০ হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছে।
প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ তানভির বলেন, যেহেতু মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে আলাদা বন্দর হবে তাই বিনিয়োগের জন্য এ জায়গার চাহিদা হবে প্রচুর।


আরো সংবাদ



premium cement