২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বোতলের পানি পান করেন এমডি

টিআইবির রিপোর্ট একপেশে : ঢাকা ওয়াসা

-

ঢাকা ওয়াসা নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনকে কথিত গবেষণাপত্র উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, টিআইবি যে পদ্ধতিতে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা একপেশে ও উদ্দেশ্যমূলক। ঢাকা ওয়াসাকে হেয়প্রতিপন্ন ও বিব্রত করতে এ জাতীয় প্রতিবেদন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
গত ১৭ এপ্রিল টিআইবি ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ওয়াসায় ঘুষ, দুর্নীতি, পানিতে দুর্গন্ধ, গ্রাহকদের নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়াসহ এমডির ব্যক্তিগত প্রভাবের বিষয়টিও উঠে আসে। এর প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ওয়াসা।
তাকসিম এ খান বলেন, এটা প্রফেশনাল কোনো গবেষণার প্রতিবেদন নয়, এটা একটা রিপোর্টের মতো হয়েছে। এটা নিম্নমানের ও ঢালাও রিপোর্ট। এটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে ডাটা কালেক্ট করতে পারেনি।
‘ঢাকা ওয়াসার নিম্নমানের পানির কারণে প্রতি বছর পানি ফোটাতে অপচয় হয় ৩৩২ কোটি টাকা’ টিআইবির গবেষণার এমন ফলাফলের বিষয়ে ওয়াসা এমডি বলেন, এ তথ্য সম্পূর্ণ হাইপোথেটিক্যাল ও বাস্তবতা বিবর্জিত। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি শতভাগ বিশুদ্ধ ও সুপেয়। তবে মাঝে মাঝে পুরনো পাইপলাইন ও বাসার ট্যাংকি ময়লা হওয়ার কারণে পানি দূষিত হয়। আমাদের ঢাকা ওয়াসা থেকে বাড়ির হাউজে পানি যাওয়ার আগ পর্যন্ত পানি শতভাগ সুপেয় থাকে। এ ছাড়া আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) সংশ্লিষ্ট সবার মানদণ্ড অনুযায়ী ল্যাবরেটরিতে পানি পরীক্ষা করে গ্রাহকদের জন্য সরবরাহ করি। এসব ল্যাবরেটরি টেস্টের ফলাফল আমার কাছে আছে। আমি বলতে পারি যে আমাদের পানি শতভাগ সুপেয়।
ওয়াসার দুর্নীতির বিষয়ে তাকসিম বলেন, ঢাকা ওয়াসা দুর্নীতি থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। ওয়াসার সব কাজ অটোমেশন পদ্ধতিতে হয়। শুধু মিটার রিডিং করতে একজন মিটার রিডার বাসায় বাসায় যান। এটাকেও অটোমেশন করে ফেলব। ইতোমধ্যে আমরা পাইলট হিসেবে এ কাজ শুরু করেছি, সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। পানির সংযোগ ও গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়। এতে অনিয়ম দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।
আপনি কি বলতে পারেন ওয়াসা শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তাকসিম এ খান বলেন, ‘শতভাগ! এই শব্দটার বিষয়ে আমি বলতে পারব না। তবে আমরা দুর্নীতিমুক্ত, আমাদের এখানে সুশাসন আছে। শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত হলে তো ফেরেশতা হয়ে যেতাম।
টিআইবির প্রতিবেদনে ‘এমডি তাকসিম ওয়াসায় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তাকসিমের মন্তব্য জানতে চান সাংবাদিকেরা। কিন্তু মাউথ স্পিকারটি তার কাছ থেকে নিয়ে ওয়াসার বোর্ড পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সাংবাদিক শাবান মাহমুদ প্রশ্নের উত্তর দেন। শাবান মাহমুদ বলেন, আমি বোর্ডের একজন সদস্য। দায়িত্ব পাওয়ার পর তাদের চারটি সভায় যোগ দিয়েছি। এটি একেবারেই কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ। কারণ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা প্রত্যেকেই পেশাজীবী সংগঠনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত প্রতিনিধি। কোনো মেরুদণ্ডহীন প্রাণী সেখানে সদস্যপদ পাননি।
তিনি আরো বলেন, আজকে এমডি সাহেব আপনাদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে যেভাবে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর্যায়ে রয়েছেন, পরিচালনা পর্ষদে উনি এর চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়েছেন। অনেক সিদ্ধান্ত উনি গত দুই থেকে আড়াই বছর ধরে নেয়ার চেষ্টা করলেও পরিচালনা পর্ষদের কারণে সেগুলো গ্রহণ করতে পারেননি।
ওয়াসার এমডি বোতলের পানি পান করেন : সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন আপনি ওয়াসার সরবরাহ করা পানি পান করেন কিনা? জবাবে তিনি হাস্যোচ্ছলে বলেন, তিনি এবং তার পরিবার, জীবন ও স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে নিয়মিত বোতলের পানি পান করেন। তিনি আরো বলেন, মাঝে মাঝে আমি টেপের পানিও পান করি। আবার কখনো কখনো বাড়ির বাইরের পানির ট্যাংকে প্রবেশের আগে ওয়াসার পানি সংগ্রহ করে সেখান থেকেও পান করি। আগামী দুই মাসের মধ্যে নগরীর কয়েকটি এলাকায় নগরবাসীকে তিনি সরাসরি টেপের পানি পান করারও পরামর্শ দিতে পারবেন জানিয়ে বলেন, এখনো আমরা সব এলাকায় হয়তো না ফুটিয়ে পানি পান করার নিশ্চয়তা দিতে পারব না, তবে দুই মাস পরে অনেক এলাকাতেই আমরা সরাসরি টেপের পানি পান করার পরামর্শ দেবো। সেই বিষয়ে কিছু এখনো বাকি আছে। কাজ শেষ হলে আমরাই ওয়াসার পক্ষ থেকে পানি আর না ফুটিয়ে সরাসরি টেপের পানি পান করার ঘোষণা দেবো। ওয়াসার এমডি সাংবাদিকদের আরো জানান, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিএসটিআই অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওয়াসার পানিতে কোনো জীবাণু পায়নি। আমরাও পর্যায়ক্রমে ওয়াসার পানির পাইপ পরিবর্তন করছি। এখন বাড়িতে স্থাপন করা পানির ট্যাংকগুলো যদি বাড়ির মালিকেরা নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার ও জীবাণুনাশক করেন তাহলে হয়তো অচিরেই নগরবাসী না ফুটিয়েই ওয়াসার পানি পান করতে পারবেন।
গত ১৭ এপ্রিল টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে ওয়াসার অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে বলা হয়, সেবাগ্রহীতাদের ৮৬.২ ভাগ ওয়াসার কর্মচারী ও ১৫.৮ ভাগ দালালকে ঘুষ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে পানির সংযোগ গ্রহণে ২০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০, গাড়িতে জরুরি পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০, মিটার ক্রয়/পরিবর্তন করতে ১ হাজার থেকে ১৫ হাজার, মিটার রিডিং ও বিল-সংক্রান্ত বিষয়ে ৫০ থেকে ৩ হাজার এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সেদ্ধ করে পান করেন। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতি বছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়।


আরো সংবাদ



premium cement