২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শিল্পকলায় দুই নাটক মঞ্চস্থ

-

মঞ্চায়ন হলো ম্যাড থেটারের জনপ্রিয় প্রযোজনা ‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকটি। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলার একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকটি প্রদর্শিত হয়। এর আগে ২০১৭ সালে লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে পরপর দু’দিন প্রদর্শনী করেছিল ম্যাড থেটার। কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘কে কথা কয়’-এর নাট্যরূপ ‘নদ্দিউ নতিম’। নাটকটি ম্যাড থেটারের প্রথম প্রযোজনা।
নাটক রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম, যিনি ম্যাড থেটারের হেড ম্যাড। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন আসাদুল ইসলাম, সোনিয়া হাসান ও আর্য মেঘদূত, যারা একই পরিবারের সদস্য, বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে যা অনন্য ও নতুন।
নাটকটির সহযোগী নির্দেশক আনিসুল হক বরুণ, সেট ও লাইট ডিজাইন ফয়েজ জহির, পোশাক সোনিয়া হাসান, আবহসঙ্গীত আর্য মেঘদূত, আলোক নিয়ন্ত্রণে আরিফ আহমেদ ও আবহসঙ্গীত নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন আদর, আতিক ও রাশেদ। দেশে ও দেশের বাইরে ‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকের একের পর এক সফল প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ম্যাড থেটার দর্শকদের মন জয় করে চলেছে।
‘নদ্দিউ নতিম’ নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় মতিন উদ্দিন একজন কবি। মনে মনে নিজেকে কল্পনা করে নেয়Ñ সে একজন উজবেক কবি। নিজেই সে নিজেকে স্বপ্ন দেখেÑ ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ, পরনে জোব্বার মতো একটা পোশাক, লম্বাটে মুখ, চোখ তীব্র। মতিনের মধ্যে বাস করে অন্য এক মতিন। দিনে দিনে মতিন উদ্দিন হয়ে ওঠে নদ্দিউ নতিম। মতিনের হৃদয়ের সবটুকু দখল করে থাকে সহপাঠী নিশু। ভাবের ভেলায় ভেসে বেড়ালেও ভাবাবেগে মতিন ডুবে যায় না, সে বুঝতে পারে নিশুর মতো স্কলার মেয়ের যোগ্য সে নয়। মতিনের একদিন চোখে পড়ে পত্রিকার পাতায় তিন লাইনের ছোট্ট একটা বিজ্ঞাপনÑ একজন সর্বক্ষণিক টিউটর প্রয়োজন, টিউটরের সৃজনশীলতা ব্যক্তিগত যোগ্যতা হিসেবে ধরা হবে, বেতন আকর্ষণীয়। বেতনের আকর্ষণীয় ক্ষমতায় মতিন তার কবিসত্তাকে সাময়িক স্তিমিত রেখে কমল নামের একজন মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর টিউটর পদে অভিষিক্ত হয়। মতিনের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট হওয়ায় তাকে টিউটর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু প্রতিবন্ধী শিশুটি কবিকে ভোলে না। শিশুটি কবির সাথে কথা বলতে চায়, কিন্তু সে সুযোগ তো আর নেই। কবি চলে গেছে। শিশুটি জেদ ধরেÑ সে কথা বলবেই বলবে। একপর্যায়ে সুযোগ হয় কবির সাথে কথা বলার। কমল মতিনের সাথে তার জীবনের একটি সিক্রেট শেয়ার করে, যে সিক্রেটের জন্য মতিনকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়াতে হয়। হাসপাতালের এক হিমশীতল ঘরে সে শুয়ে থাকে। তার কাছে মনে হয়, সে যেন অনন্তকাল এভাবেই শুয়ে ছিল। কী সেই সিক্রেট যার জন্য কবিকে জীবন দিতে হলো? ম্যাড থেটার- মানুষের অবচেতনে এক ধরনের সূক্ষ্ম পাগলামি কাজ করে। এই পাগলামি ব্যবহার করে কেউ কেউ প্রথাগত যুক্তি বুদ্ধির দেয়াল ভেঙে নতুন সমীকরণ আমাদের সামনে দাঁড় করায়। যারা এই পাগলামি ব্যবহার করতে পারে তারা প্রচলিত ধারার বাইরে নতুন কিছু করার সম্ভাবনা তৈরি করে। সেই সম্ভাবনাকে থিয়েটারের মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য ম্যাড থেটার।
‘সার্কাস সার্কাস’
মঞ্চস্থ হলো ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় নাটক ‘সার্কাস সার্কাস’। আজাদ আবুল কালামের রচনা ও পরিচালনায় নাটকটি গতকাল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হয়। এটি প্রাচ্যনাটের চতুর্থ প্রযোজনা। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) ১৯৯৮ বার্ষিক প্রতিবেদনে ‘সার্কাস সার্কাস’কে নতুন একটি দলের প্রযোজনা হিসেবে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় প্রযোজনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
‘দ্য গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’ নামে একটি সার্কাস দল প্রতিষ্ঠাতার হাত ধরে একসময় প্রচুর খ্যাতি অর্জন করে। দলটি এখন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন প্রতিষ্ঠাতার ভাই। তিনিই সার্কাস দলটিকে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ধ্বংসাবস্থা থেকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলেন।
ঘটনাক্রমে সার্কাস দলটি একটি গ্রামে আসে শো করতে। অদক্ষ খেলোয়াড়, সদস্যদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত দলটি। সমস্যা আরো ঘনীভূত হয় যখন স্থানীয় ধর্মীয় প্রভাবশালী নেতারা সার্কাস শো বন্ধ করার জন্য হুমকি দেয়। একপর্যায়ে দলের ভেতরেও কলহ শুরু হয়। এমনি একসময়ে ‘দ্য গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’-এ আগুন দেয়া হয়। লাশ পড়ে তিন খেলোয়াড়ের, ভস্মীভূত হয় সার্কাসের সব পশু।


আরো সংবাদ



premium cement