২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সংসদের প্রতিমন্ত্রীর তথ্য

বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ৬ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা : সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬৪৩ কোটি টাকা

-

বর্তমানে সরকারি, আধা সরকারি / বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন (প্রাইভেট) কোম্পানিগুলোর কাছে মোট ছয় হাজার ৮৮২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এসব বকেয়ার মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬৪২ কোটি ৯৮ লাখ, আধা সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৭৬৩ কোটি ৯০ লাখ এবং প্রাইভেট (ব্যক্তি মালিকানাধীন) প্রতিষ্ঠানগুলোতে বকেয়ার পরিমাণ পাঁচ হাজার ৪৭৬ কোটি ছয় হাজার টাকা।
সংসদে প্রশ্নোত্তরে গতকাল নজরুল ইসলাম বাবুর (নারায়গঞ্জ-২) এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। বিকেলে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তরপর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রীর দেয়া তথ্যমতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বকেয়ায় প্রথম স্থানে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যার কাছে ৩২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এরপর যথাক্রমে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৪২ কোটি ৪৮ লাখ, খাদ্য মন্ত্রণালয় ১২৮ কোটি ৩৯ লাখ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৭৮ কোটি ১৬ লাখ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬২ কোটি ৫০ লাখ, ধর্ম মন্ত্রণালয় ৪৩ কোটি ১২ লাখ টাকা।
তিনি জানান, এসব বকেয়া বিল আদায়ে টাক্সফোর্স গঠন করে ঝটিকা অভিযান চালান হচ্ছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে, সেই সাথে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
মামুনুর রশীদ কিরণের অপর এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ জানান, দেশে মোট চার লাখ ৯৫ হাজার কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন রয়েছে।
দিদারুল আলমের (চট্টগ্রাম-৪) অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন ৮৪ হাজার ৫৬৩টি গ্রামের মধ্যে ৭০ হাজার ১২০টি গ্রাম পূর্ণাঙ্গভাবে এবং ৯ হাজার ৮১৮টি গ্রিড আংশিকভাবে বিদ্যুতায়ন শেষ হয়েছে। অবিদ্যুতায়িত ও আংশিকভাবে বিদ্যুতায়িত গ্রামগুলোতে পূর্ণাঙ্গভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য ১৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৮ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইনের কাজ চলছে। তিনি জানান, নতুন দুই কোটি ১৭ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগের ফলে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহকের সংখ্যা তিন কোটি ২৫ লাখ এবং বিদ্যুতের সামগ্রিক সিস্টেম লসের পরিমাণ শতকরা ১৬.৮৫ থেকে কমে হয়েছে ১১.৮৭ ভাগে। তিনি জানান সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার কাজ চলছে।
সাহিদুজ্জামানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার গ্যাস লাইন সম্প্রসারণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাবনার ঈশ্বরী থেকে ভেড়ামারা হতে কুষ্ঠিয়া-যশোর হয়ে খুলনা জেলায় গ্যাস সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
ইসরাফিল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এক হাজার ১৬৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৪টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রয়েছে।
তিনি জানান বর্তমানে গ্যাস থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ২.৮০ টাকা, ডিজেল থেকে ১৯.৩০ টাকা, ফার্নেস ওয়েল থেকে ১১.৪৮ টাকা এবং কয়লা থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ৭.৩৮। উৎপাদন খরচ বেশি হলেও ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুতের বিক্রি মূল্য ৪.৮২ টাকা বলে জানান তিনি। এ কে এম রহমতউল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে এলপিজি উৎপাদনে ও বোতলজাতকরণের প্লান্টের সংখ্যা মোট ২২টি। যার মধ্যে সরকারি দুইটি এবং ২০টি বেসরকারি মালিকানাধীন।
এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ জানান, দেশে বর্তমানে দৈনিক দুই হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট লিক্যুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। ফলে বর্তমানে দেশে দৈনিক তিন হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতা রয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, এলএনজি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। দেশে মোট এলএনজির চাহিদা ৩ মিলিয়ন টন এবং আমদানি হচ্ছে মাত্র ৭ লাখ টন।
তিনি জানান, চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে স্থলভাগে ২ডি ও ৩ডি সাইসমিক সার্ভে সম্পাদনের মাধ্যমে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার ও নতুন গ্যাস কুপের অবস্থান চিহ্নিত করার কাজ চলছে। অপর দিকে সমুদ্র অঞ্চলে ৪টি প্রোডাকশন শেয়ারিং চুক্তির আওতায় পাঁচটি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি একক ও যৌথভাবে তেল গ্যাস অনুসন্ধান কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, ভোলায় সম্প্রতি আবিষ্কৃত ১.০০৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদসহ দেশে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ১১.৪৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement