২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
টঙ্গীতে সাত বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার

আসামির পরিবর্তে বাদিপক্ষকে পুলিশের হয়রানি

-

থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দিয়ে উল্টো পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন ধর্ষিতা শিশুর বাবা। এমনকি যারা অসহায় শিশুটির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় শিশুটির পরিবার ও বস্তিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী আউচপাড়া ব্যাঙ্গলের মাঠ বস্তিতে গত ১৫ জানুয়ারি আলোচিত ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের শিকার শিশুর বয়স মাত্র সাত বছর।
বস্তিবাসী জানান, বস্তির রুবেল ও তার স্ত্রী পৃথক দু’টি কারখানায় চাকরি করেন। গত ১৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টায় তাদের সাত বছরের শিশুকন্যাকে খালি বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশী বখাটে যুবক ফরিদ। এরপর ফরিদ শিশুটিকে নিজের শয়নকক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুটির চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে বখাটে ফরিদ পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে শিশুটির বাবা-মা দ্রুত কর্মস্থল থেকে এসে প্রতিবেশীদের সহায়তায় মেয়েটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
ঘটনার দিন বস্তিতে সাদা পোশাকে ডিউটিরত গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পরিদর্শক (এসআই) আজাদ ঘটনা জানতে পেরে ধর্ষক ফরিদকে আটকের চেষ্টা করেন। অবশেষে ধর্ষক ফরিদকে না পেয়ে তার বাবা ইমান আলীকে আটক করে। পরে এ ব্যাপারে আর কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং ইমান আলীকে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে স্থানীয় কলেজগেট থেকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে বস্তিবাসীরা অভিযোগ করেন। পর দিন শিশুটির বাবা জিএমপির টঙ্গী পশ্চিম থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে মামলা রেকর্ড করা হবে এমন আশ্বাস দিয়ে ধর্ষিতার বাবাকে থানা থেকে ফেরত পাঠানো হয়। অবশেষে ঢামেকে চার দিন চিকিৎসা শেষে গত শনিবার সন্ধ্যায় শিশুটিকে তাদের বস্তির বাসায় আনা হয়। ওই দিন রাতে বাসায় বসে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশী শুভাকাক্সক্ষীরা আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ করছিলেন। পরামর্শানুযায়ী গতকাল সকালে ভিকটিম ও হাসপাতালের প্রমাণপত্রসহ টঙ্গী পশ্চিম থানায় গিয়ে তাদের মামলা করার কথা। কিন্তু তাদের এই পরামর্শ শেষ না হতেই বস্তিতে হানা দেয় পুলিশ। এ সময় শিশুটির বাবা রুবেল ও তার ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বড়ভাই সাইফুল ইসলামকে আটক করে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ। থানা থেকে অভিযোগ তুলে নিয়ে স্থানীয়ভাবে আপস-ফয়সালা করার শর্তে তাদেরকে পরে ছেড়ে দেয়া হয় বলে তারা অভিযোগ করেন। শিশুটির চিকিৎসাসহ তার বাবাকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করায় গত ১৬ জানুয়ারি রাতে প্রতিবেশী রজব আলীকেও আটক করে টঙ্গী পশ্চিম থানার এএসআই শহীদুল ইসলাম। পরে বস্তিবাসী থানায় গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। রজব আলী বলেন, ‘আমি একজন নিরীহ মানুষ, এ এলাকায় দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাস করি। দিন আনি; দিন খাই। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। শিশুটির বাবাও আমার মতো একজন নিরীহ মানুষ। তার বিপদে সহানুভূতি জানানোই ছিল আমার অপরাধ।’
ধর্ষক ফরিদের বাবা ইমান আলী বস্তির একজন মুদি দোকানদার। তাদের বাড়ি জামালপুর জেলার মেলান্দর উপজেলার চরসগুনা গ্রামে। ফরিদ স্থানীয় বেক্সিমকো রোডের একটি ওয়াশিং কারখানায় চাকরি করে। তার বাবা ইমান আলী পুলিশ দিয়ে ধর্ষিতার বাবা ও তাদের শুভাকাক্সক্ষী প্রতিবেশীদের হয়রানি করছেন বলে বস্তিবাসীর অভিযোগ।
এ ব্যাপারে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইমদাদুল বলেন, বাদি কিছুক্ষণ আগে আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা রেকর্ড হবে। আমি এর আগে এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। ঘটনাগুলো আমাকে এর আগে কেউ জানায়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement