২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রহস্যাবৃত’

২১ আগস্ট মামলার রায় বাতিল ও পুনঃতদন্ত করতে হবে : রিজভী

-

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সত্য ঘটনাকে মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করা আর মিথ্যাকে সত্য বলা আওয়ামী লীগের আদর্শিক চেতনা। জনগণকে তারা এতটাই অপাঙ্ক্তেয় মনে করে যে, তাদের ধোঁকাবাজি জনগণ টের পাবে না। সুতরাং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বাতিল করতে হবে এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী কাহহার আকন্দকে বাদ দিয়ে নিরপেক্ষভাবে পুনঃতদন্ত ও বিচারকার্যক্রম শুরু করার দাবি জানাচ্ছি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে শুরু থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আচরণ, বক্তব্য ও মন্তব্য সামঞ্জস্যহীন ও রহস্যাবৃত। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মো: মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি সরকারের সময় বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্র ছিল না। অবারিত ছিল গণতন্ত্র। ফলে রাজধানীতে জনসভার জন্য সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণের পর পুলিশের থেকে মাইক ব্যবহারের অনুমতি নেয়ার নিয়ম ছিল। একুশে আগস্ট গ্রেনেড মামলার মূল চার্জশিট দাখিলকারী কর্মকর্তা এএসপি ফজলুল কবিরের কাছে ২০০৭ সালের ২২ নভেম্বর জবানবন্দী প্রদানকালে সমাবেশে পুলিশের অনুমতি না দেয়ার কথা বলেন। অথচ সমাবেশে পুলিশের অনুমতি প্রদান না করার বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালের ২০ আগস্ট থেকে ২০০৭ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সোয়া তিন বছর সময়কালে কখনোই কোনো সভা-সমিতি-সাক্ষাৎকার-আলোচনা-বিজ্ঞপ্তি-প্রচারণা ইত্যাদি কোথাও তিনি উল্লেখ করেননি। ২০০৪ সালের ২০ আগস্ট সমাবেশের আগের দিন বিকেলে তিনি মহানগরের বেরাইদ স্কুল মাঠে এক জনসভায় দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। সেই বক্তৃতায়ও তিনি অনুমতি না প্রদানের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। পরদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আলোচ্য সেই সমাবেশে প্রায় ২০-২২ মিনিট ধরে দেয়া বক্তৃতায়ও তিনি একটিবারের জন্য বলেননি যে, পুলিশি অনুমতি না পাওয়ার কারণে তাকে মুক্তাঙ্গনে সভা না করে এখানে করতে হচ্ছে। এমনকি সে দিন ২১ আগস্ট এ মর্মান্তিক ঘটনার পরবর্তী সন্ধ্যায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকার দেন। সেই সাক্ষাৎকারেও তিনি এমন অনুমতি না প্রদানের বিষয়ে কোনো শব্দই উচ্চারণ করেননি।
রিজভী বলেন, ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট আওয়ামী লীগ মুক্তাঙ্গনে সমাবেশের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি গ্রহণের পর পুলিশের কাছে মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করে। পুলিশ মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের সমাবেশের লিখিত অনুমতি দেয় ১৯ আগস্ট। তবে রহস্যজনক ও গভীর সন্দেহের বিষয় হলোÑ মুক্তাঙ্গনে পুলিশের অনুমতি নিয়ে কেন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করল? মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ তিন দিন ধরে প্রচার-প্রচারণা চালাল, আর ২১ আগস্ট সমাবেশের দিন হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করে কেন দলীয় অফিসের সামনে গেল? এতে কারো বুঝতে বাকি থাকে না যে, এর মধ্যে কোনো দুরভিসন্ধি কাজ করেছে।
সারা দেশে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, দিনাজপুর জেলা বিএনপি নেতা বখতিয়ার আহমেদ কচি তিন দিন আগে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ফের তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমি দলের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রিমান্ড বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। বগুড়ার শাজাহানপুরে বিএনপি নেতা আবুল বাশার, যুবদলের সুলতান, শহীদ, রিপন, মঞ্জু, মজনু, কাশেম ও রুবেলসহ মোট আটজন ঢাকা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পর মতিঝিল থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। ঢাকা, মৌলভীবাজার, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, কুষ্টিয়া, নরসিংদী, সাতক্ষীরায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মামলা দায়ের এবং বাসাবাড়িতে পুলিশি তল্লাশির নামে আসবাবপত্র ভাঙচুরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী।

 


আরো সংবাদ



premium cement