সাংবাদিকদের তো কণ্ঠরোধ হয়নি তারা কেন এত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন?
- সংসদ প্রতিবেদক
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:২৭
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ অনেক বড় সম্পাদক, সাংবাদিকরা বলছেন তাদের কণ্ঠরোধ হয়েছে। কণ্ঠটা রোধ হলো কোথায়? কেউ কেউ ব্যক্তিস্বার্থ বা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মতামত দিয়েছে। কিন্তু সমগ্র দেশের জন্য বিলটি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা তাদের মাথায় আসেনি। তারা শুধু তাদের কণ্ঠরোধ হলো কি না সেটাই দেখেন। তাদের তো কণ্ঠরোধ হয়নি। গত রাতে দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃখ লাগে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে কেউ কেউ শুধু ব্যক্তিস্বার্থ থেকে বা তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তারা মতামত দিয়েছেন। কই কণ্ঠ তো তাদের রোধ হয়নি, কণ্ঠ আছে বলেই তো তারা মতামত দিচ্ছেন। কণ্ঠরোধ করলে তো মতামত দেয়ার মতো মতা থাকত না। আর কণ্ঠরোধটা যে কি সেটা মার্শাল ‘ল’ যখন ছিল তখন বুঝেছে। এ দেশে অবৈধ মতা দখলকারীরা ছিল অবশ্য যারা তাদের পদলেহন করেছে, তোষামোদি করেছে, তাদের অসুবিধা হয়নি। কিন্তু যারা তাদের অন্যায় কথা বলতে গেছে তাদের অসুবিধা হয়েছে। তিনি বলেন, বেশি দূর যেতে হবে না ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত যারা মতায় ছিল তাদের আমলে কিভাবে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছেন সেটা তারা ভুলে গেছেন। এখন তারা ডিজিটাল আইন করার পরেই তারা তাদের কণ্ঠরোধের কথা বললেন। এই দেশে একটা টেলিভিশন ছিল। এই টেলিভিশনকে বেসরকারি হাতে তুলে দিতে কোনো সরকারই সাহস পায়নি। আমরা দিয়েছি। এখন মধ্য রাত পর্যন্ত টিভিতে টক ‘শো’ হয় সেখানে যা খুশি আলোচনা করতে পারছে। কেউ যেয়ে তো তাদের গলা চেপে ধরছে না? কেউ তো তাদের বাধা দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকতা হবে গঠনমূলক। সাংবাদিকতা থাকবে দায়িত্বশীল, সমাজের জন্য দেশের জন্য, মানুষের জন্য। নিশ্চয়ই সাংবাদিকতা সঙ্ঘাতের জন্য হবে না। সাংবাদিকতা দেশের অকল্যাণের জন্য হবে না। দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য হবে না। এমন সাংবাদিকতা থাকতে হবে যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষের ভেতরে আত্মবিশ্বাস আনবে, মানুষের ভেতরে সন্দেহের সৃষ্টি করবে না। মানুষকে বিভ্রান্ত করবে না। মানুষের মধ্য সঙ্ঘাত সৃষ্টি করবে না। একটা সঙ্ঘাতপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদকে উসকে দেবে না। সেটাই তো হওয়া উচিত। সমাজকে সঠিকভাবে পরিচালনার দিকেই নিয়ে যাবে। আমরা তো সে রকম সাংবাদিকতাই চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউটিউব, ফেসবুকের ভালো দিক আছে। আবার খারাপ দিকও আছে। খারাপ বিষয়গুলো সমাজের জন্য অশুভ বিষয় বয়ে আনে। অনেক ছেলেমেয়ে এর প্রতি এডিকটেড হয়ে যায়। অপব্যবহার হয়। অপপ্রচার হয়। এমনভাবে অপপ্রচার হয় যে পারিবারিক অসন্তোষ তৈরি হয়। আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটে। এসব বিষয়তো আমাদের দেখতে হবে। এ নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এ জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা একান্ত দরকার। অনেকে এর মধ্যে এত বেশি ডুবে যায় যে, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এটা অনেক সময় সমাজের জন্য সংসারের জন্য বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। চরিত্রহনন শুরু হয়। এই কুপ্রভাবের ফলটা আমাদের সমাজের জন্য মোটেই ভালো নয়। সমাজ ও সংসার ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে পারে। সবার জন্য নিরাপত্তা অত্যন্ত প্রয়োজন আছে। সে লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হয়েছে। এখানে শুধু গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের কথা চিন্তা করা হয়নি। তাহলে তারা কেন এত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন। এমন কিছু পত্রিকা আছে যেগুলো দেখলে মনে হয় এই সরকার খুবই খারাপ কাজ করছে। আমার আত্মবিশ^াস আছে। কারও লেখা পড়ে, পত্রিকা পড়ে আমাকে শিখতে হবে না। আমি জানি। তবে পত্রিকা দেখে আমি তথ্য সংগ্রহ করি। কেউ কষ্টে থাকলে তা লাঘবের চেষ্টা করি।
সংসদ অধিবেশন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেশন আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ১০ দিন সংসদ চলেছে। এর মধ্যে ১৮টি বিল পাস করেছি। প্রতিটি বিলে তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়েছেন। মতামত দিয়েছেন। এই যে আগ্রহ এটা ভালো। দশম জাতীয় সংসদে কোনো অশালীন কথা নেই। এটা গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী করেছে, মজবুত করেছে। সড়ক পরিবহন বিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি করা হয়েছে। সবার সাথে পরামর্শ করা হয়েছে। প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর ধরে এ নিয়ে কাজ করা হয়েছে। অনেকে প্রশংসা করেছেন। কোনো খুঁত তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত ছিল। তারা কিন্তু মেধাবী। অথচ তারা কখনো স্বীকৃতি পায়নি বা তারাও চায়নি। এটাই হলো বাস্তবতা। কর্মক্ষেত্রে যেন প্রবেশ করতে পারে, জীবনটাকে যেন উন্নতি করতে পারে সেটা চেয়েছি। প্রায় ৯ বছর তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে বিলটি পাস করা হয়েছে। সংসদ নেতা বলেন, পাঁচ বছরের পড়ন্ত বেলা। আবার নির্বাচন হবে। যারা জয়লাভ করবে তারা ক্ষমতায় আসবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী করেছি, মজবুত করেছি। যারা এটা দেখেন না তাদের আসলে নড়বড়ে অবস্থা। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার আস্থা আছে, বিশ^াস আছে। সাধারণ জনগণ কিন্তু এসব বোঝে। আবার যদি ক্ষমতায় আসি তাহলে প্রতিটি গ্রামকে আমি শহরে পরিণত করব। আমরা সমগ্র দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত দেশ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা