২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আশুলিয়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে রক্তাক্ত ও লুটপাটের দৃশ্য দেখে এক নারীর মৃত্যু

-

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় আশুলিয়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী জ্যোতি লাল ঘোষ ও তার ছেলে বিজয় চন্দ্র ঘোষকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত এবং দোকানের স্বর্ণসহ ১০ লাখ টাকা লুটের দৃশ্য দেখে প্রতিবেশী সামসুন্নাহার মুক্তি (৪০) নামে এক নারী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তার স্বজনেরা রাজধানীর শ্যামলী এলাকার ন্যাশনাল নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। গতকাল সকাল ৫টায় ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।
নিহত সামসুন্নাহার মুক্তি মানিকগঞ্জ জেলার কাটিগ্রাম নতুনপাড়া এলাকার জাহিদ হোসেনের স্ত্রী। তারা আশুলিয়ার পানধোয়া বাজার এলাকায় বসবাস করতেন।
এ ব্যাপারে নিহতের ছেলে রিফাত বলেন, পাথালিয়া ইউপির পানধোয়া বাজার এলাকায় বুধবার বিকেলে প্রতিবেশী জ্যোতি লাল ঘোষের স্বর্ণের দোকানে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কামরুল হাসান নয়নের নেতৃত্বে কিছু সন্ত্রাসী চাঁদার দাবিতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও তার ছেলেকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে দোকানের মালামাল ও টাকা লুটপাট করে। এ সময় তার মা সামসুন্নাহার মুক্তি ওই দোকানে এগিয়ে গিয়েছিলেন দেখতে। তিনি স্বর্ণ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত অবস্থা দেখে ঘটনাস্থলেই অচেতন হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে রাজধানীর শ্যামলী এলাকার ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। গতকাল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মায়ের মৃত্যু ঘটে। পরে নিহতের লাশ উদ্ধার করে তাদের স্থায়ী বাসস্থান মানিকগঞ্জ জেলার কাটিগ্রাম নতুনপাড়া পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় তার স্বজনেরা। তবে থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি।
উল্লেখ্য, আশুলিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কামরুল হাসান নয়ন গংয়ের নেতৃত্বে ১০-১২ জন জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী জ্যোতি লাল ঘোষের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ব্যবসায়ী ও তার ছেলেকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে চিহ্নিত চাঁদাবাজেরা। এরপর সন্ত্রাসীরা দোকানে থাকা স্বর্ণালঙ্কার, রৌপ্য ও টাকাসহ ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দোকান মালিক কার্তিক ঘোষ বাদি হয়ে বুধবার রাতেই আশুলিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে থানা পুলিশ ওই ঘটনায় কাউকে আটক করতে সক্ষম হয়নি।
কার্তিক চন্দ্র ঘোষ অভিযোগ করেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা পরিচয়ে এলাকার বখাটে কামরুল হাসান নয়ন (২৮), ইউসুফ আলী (৪২), ফেরদৌস আলমসহ (২৭) কয়েকজন ছেলে শোক দিবস পালনের জন্য আমার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তা না হলে ব্যবসায় করতে দে বে না বলে হুমকি দেয়। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় বুধবার বিকেলে কামরুল হাসানসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী লোহার রড, হাতুুর, রাম দা, চাপাতিসহ তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি মাইক্রোবাসে করে আমার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে আসে। তারা আমাকে না পেয়ে আমার ভাই জ্যোতি লাল ঘোষ ও ভাতিজা বিজয় চন্দ্র ঘোষকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে সিন্দুকের তালা ভেঙে ২৩ ভরি স্বর্ণের ২৯২ ভরি রূপার অলঙ্কার ও ক্যাশে রক্ষিত টাকাসহ ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
কার্তিক চন্দ্র ঘোষের ব্যবসায়িক অংশীদার লুৎফর রহমান বলেন, কামরুল হাসান নয়ন নিজেকে আশুলিয়া থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পরিচয় দিয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাথালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ানের ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কিছুই বলার সাহস পায় না। হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়েরের পর পাথালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান বিষয়টি ধামাচাপা দিতে রাতেই থানায় ছুটে যায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement