২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন

শেষ মুহূর্তে বিএনপি ও আ’লীগের জোর প্রচারণা

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি মেয়ারপ্রার্থী (বাঁয়ে) ও আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থীর গণসংযোগ : নয়া দিগন্ত -

গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে আজ রোববার দিবাগত রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণাও শেষপর্যায়ে। নির্বাচনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অপর দলের প্রার্থীরাও নির্বাচনের মাঠে তাদের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে দেখতে চায়।
নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া বিশ^াসযোগ্য করতে এবং ভোটারদের আস্থায় আনতে নির্বাচন কমিশনকে কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে সংশ্লিষ্টদের মত। এ দিকে নির্বাচনের সব সরঞ্জাম জেলা নির্বাচন কমিশনে এসে পৌঁছেছে। সেখান থেকে আগামীকাল ২৫ জুন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে।
বিএনপি : বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো: হাসান উদ্দিন সরকার বলেছেন, আমাকে প্রশাসনিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। মামলা নেই তারপরও আমার লোকজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি এখনো আবেদন করব, আপনারা সেই শান্তির পরিবেশ রক্ষা করুন। আর তা যদি না হয় আমি আগে একটা ঘোষণা দিয়েছি, আমি এমন একটা কর্ম করব যে তাতে সমাজের ক্ষতি হবে না, কিন্তু চিরদিন যেন এ বিশ্ব স্মরণ করে নির্বাচনের জন্য হাসান উদ্দিন সরকার ওই কর্ম করেছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর পূবাইল এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় বক্তব্য দানকালে হাসান উদ্দিন সরকার এ কথা বলেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল, ড্যাব নেতা ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
হাসান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে অভিযানের নামে পুলিশ হয়রানি করছে। গত রাতে গাছা এলাকা থেকে কাউছার নামে এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা নগরীর পোড়াবাড়ি এলাকা থেকে আমার প্রচারণার দু’টি মাইক ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
তিনি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীর উদ্দেশে বলেন, আমরা যেন কলহ না করি, বিরোধ না করি, আমরা যেন কারো সর্বনাশ না করি। আমরা যেন শান্তির পথে চলি। রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। রাজনীতি যদি মানুষের মধ্যে সমাজের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে, মুরব্বিদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হয়, সেটি রাজনীতি নয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবং নির্বাচনে মিডিয়া সেলের প্রধান ডা: মাজহারুল আলম জানান, ধানের শীষের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার সকাল সাড়ে ৯টায় মহানগরের হায়দরাবাদ থেকে প্রচার কাজ
শুরু করেন পরে মাজুখান বাজার, নন্দীবাড়ি, বিন্দান, পূবাইল, ভাদুন, ইছালী ও কলেরবাজার এলাকায় প্রচারকাজ করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কাপাসিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ গাজীপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতারা।
এ দিকে নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারকাজ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। নগরীর ৪০ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারকাজ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পেশাজীবী নেতা ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
ধানের শীষের প্রচারণায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বস্তরের মানুষের কাছে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের ধানের শীষ প্রতীকের পে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতাদের নিয়ে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি আহমেদ সাইমুম নির্বাচনী প্রচারণা চালান। তিনি মিথ্যা মামলায় বন্দী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ল্েয এবং উন্নয়ন, সমৃদ্ধ ও দূষণমুক্ত শিাবান্ধব বাসোপযোগী মহানগর গড়তে ২০ দলীয় জোট মনোনীত বিএনপির প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা শিাবন্ধু হাসান উদ্দিন সরকারকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান। নির্বাচনী এলাকার ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট কামনায় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেনÑ শাহীনুর সাগর, গোলাম ফারুক, হাসান আল আরিফ, জেসমিন সুলতানা জুঁই, ওয়াসিম মুক্ত, নাহিয়ান মারুফসহ ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা। নেতারা শাসকদলীয় প্রার্থীর লোকজনের অব্যাহত হুমকি-ধমকি ও প্রশাসনের একচোখা আচরণের বিষয়ে সজাগ থেকে ভোটারদের সব বাধা বিপত্তি ডিঙিয়ে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানান।
এ দিকে হাসান সরকারের প্রচারণায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, আমাদের শেষ সাক্ষাতে যখন গিয়েছিলাম তখন নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, আপনাদের জন্য গাজীপুর হচ্ছে শেষ সুযোগ। গাজীপুরের নির্বাচনে আপনারা যদি খুলনার নির্বাচনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেন তাহলে আপনাদের অধীনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কোনো নির্বাচন তো দূরের কথা এমনকি মাদরাসা-স্কুল কমিটির নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবে না।
দুপুরে নগরীর কাশিমপুর এলাকায় বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে গণসংযোগে গিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, এখন একটা ট্রেডিশন হয়ে গেছে, নির্বাচনের কথা বলে আগের দিন রাতে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে ব্যালট কেটে বাক্সে ঢুকানো হয়। যে-টা খুলনায় হয়েছে। খুলনায় যে স্টাইলে তারা নির্বাচন করে তাদের মেয়র নির্বাচিত করেছে। আমার মনে হয় গাজীপুরের জনগণ এটা মেনে নেবে না। কারণ এ এলাকার মানুষের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ এলাকার মানুষ সবার আগে ১৯ মার্চ লাঠি নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। আমি মনে করি এ গাজীপুরে যদি খুলনার স্টাইলে ভোট লুটপাট ও ভোট ডাকাতির ষড়যন্ত্র করা হয়, গাজীপুরের মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে, ঠিক একইভাবে গাজীপুরের মানুষ এ নির্বাচনব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়বে।
পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ : বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রসঙ্গত, গতকাল বিকেলে নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে গাজীপুরের গোয়েন্দা পুলিশ বিএনপির কর্মী কোরবান আলী ও জাহিদকে গ্রেফতার করে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক মনির হোসেনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে এবং ছাত্রনেতা আতাউর ও মুকুলের বাড়িতেও তল্লাশি চালায়।
আওয়ামী লীগ : আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, গাজীপুরে টঙ্গী-চান্দনা চৌরাস্তা হাইওয়েতে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকেন। আমি সেই যানজট থেকে আপনাদের মুক্ত করে দেবো। আমি নির্বাচিত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ওই পথের ৫০ ভাগ যানজট কমিয়ে আনবো। সকালে তিনি নগরীর টঙ্গীর খৈরতুল এলাকার এক পথসভায় ওই কথা বলেন। এ সময় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: কাজী ইলিয়াস, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো: সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গণসংযোগে জাহাঙ্গীর আলম : আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সকালে নিজ বাসভবনে ওলামা লীগের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে বেলা ১১টায় খৈরতেলে গণসংযোগ ও পথসভার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। সাতাইশ স্কুলের সামনে, সাতাইশ চৌরাস্তা, ৫২ নম্বর মুদাফা, ৫৩ নম্বরে দেওড়া ফকির মার্কেট, ৫৫ নম্বর মিলগেট এলাকায় পথসভায় ভোট কামনা করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রপ্রার্থী মো: আতিকুল ইসলাম পথসভায় বক্তব্য রাখেন এবং গণসংযোগ করেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী মো: আতিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে ভোট চান ও পথসভায় বক্তব্য রাখেন।
অপর দিকে বেলা ৩টায় নগরীর টঙ্গী নওয়াগাঁও এলাকায় গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো: জাহিদ আহসান রাসেলের বাসভবনে ঈদ-পরবর্তী পারিবারিক দাওয়াতে যোগ দেন জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া সেখানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাওছার, সাবেক এমপি কাজী মোজাম্মেল হক, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়রপ্রার্থী মো: আতিকুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব মো: ইকবাল হোসেন সবুজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুরে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মালামাল বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। শনিবার সকাল থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে মালামাল গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামের দ্বিতীয়তলায় তারা নির্বাচনী সরঞ্জামগুলো পৃথক ব্যাগে করে প্রস্তুত করছেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানান, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জামগুলো এসে পৌঁছেছে। সিটি করপোরেশনের ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রে এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম সোমবার থেকে পাঠানো শুরু হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব সরঞ্জাম কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবেন।
টঙ্গীর ভোট অন্যতম ফ্যাক্টর : মোট ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত। ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। ভোটার হিসাবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে আটটি বিশেষ অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে আছে কাশিমপুর, কোনাবাড়ী, বাসন, কাউলতিয়া, গাজীপুর পৌর এলাকা, গাছা, পুবাইল ও টঙ্গী। তবে আটটি বিশেষ অঞ্চলের মধ্যে টঙ্গীতে ভোটার তিন লাখ ৬৫ হাজার ৯৫২। অর্থাৎ মোট ভোটারের ৩২ শতাংশ টঙ্গীর। অন্য সাত অঞ্চলের কোনোটিরই ভোটার দেড় লাখও পার হয় না। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটার গাছায় এক লাখ ৪৭ হাজার এবং তৃতীয় কাশিমপুরে এক লাখ ১৬ হাজার জন। সবচেয়ে কম ভোটার পূবাইলে ৬০ হাজার। তাই এ হিসাবে টঙ্গীর ভোটকে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখছে বড় দু’দলই।


আরো সংবাদ



premium cement