১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অ্যান্টার্কটিকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড

- সংগৃহীত

অ্যান্টার্কটিকার ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। সেখানে নিয়োজিত আর্জেন্টিনার গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপারেঞ্জা জানিয়েছে, ওই দিন অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের সর্ব-উত্তরের প্রান্তে ১৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে, যা সেখানকার ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ২০১৫ সালে ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ওই অঞ্চলে। এসপেরাঞ্জে ১৯৬১ সাল থেকে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এই তাপমাত্রা অ্যান্টার্কটিকার জন্য ভয়ঙ্কর হিসেবে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে আর্জেন্টিনার গবেষণা কেন্দ্রের রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা যাচাই করেনি বিশ্বের ১৯৩টি সদস্য দেশের সংগঠন ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)। সংস্থাটি জানিয়েছে, সেখানকার তাপমাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ করার জন্য একটি দল পাঠানো হবে। তবে ডব্লিউএমও জানিয়েছে, আমরা যা দেখেছি সম্প্রতি রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা তার দিকেই ইঙ্গিত করে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে কুমেরু অঞ্চলে প্রকাণ্ড বরফখণ্ড গলে যাচ্ছে বলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তার মধ্যেই শুক্রবার এ রেকর্ড তাপমাত্রার খবর দিলো এসেছে। পৃথিবীর দুর্গমতম, উচ্চতম, শীতলতম, শুষ্কতম তথা নির্জনতম মহাদেশে এই রেকর্ড তাপমাত্রা ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থাসহ জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের।

ডব্লিউএমওর মুখপাত্র ক্লার নালিস জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, এটা এমন তাপমাত্রা নয় যে আপনি (ওই মহাদেশের) গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রার মানদণ্ডে ফেলে সহজভাবে নেবেন। এটা ২০১৫ সালে রেকর্ড করা তাপমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই মাপের তাপমাত্রা অ্যান্টার্কটিকার সাথে যায় না। এমনকি সেখানে গ্রীষ্মকালেও এতটা গরম পড়ে না। অ্যান্টার্কটিকার এই অঞ্চলটিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার এলাকা। আমরা আর্কটিকের (সুমেরু অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধির) কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু এখানকার উষ্ণতা খুব দ্রুতই বাড়ছে। আগে বছরে যে পরিমাণে বরফ গলত আন্টার্কটিকায়, ১৯৭৯ থেকে ২০১৭ এই ৩৯ বছরে তা ছয় গুণ বেড়েছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে কুমেরু অঞ্চলে উদ্বেগজনক হারে বরফ গলছে, এতে ভেঙে যাচ্ছে প্রকাণ্ড বরফের চাদর। এ কারণে সামনের শতকগুলোতে বৈশ্বিক সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে পারে অন্তত ১০ ফুট। পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বিশাল হিমবাহটি গলে গেলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রে স্তর দশ ফুট বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখার এই পূর্বাভাস নানা শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

১৯৮২ সালে গোটা অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলে ১৯ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল বলে শোনা যায়। ডব্লিউএমওর কমিটি এখন ওই তাপমাত্রা যাচাই করবে। সেটি নিশ্চিত না হলে বৃহস্পতিবারের তাপমাত্রাই হবে গোটা মহাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।

২০১৫-এর প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বলা হয়েছিল, বাতাসে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে না পারলে ২১০০ সালে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা অন্তত দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তাতে দুই মেরুর বরফ খুব দ্রুত গলতে শুরু করবে। যার জেরে উদ্বেগজনকভাবে উঠবে সমুদ্রের জল-স্তর। যা সমুদ্রোপকূলবর্তী বহু দেশের বহু শহরকে গ্রাস করবে। শহরগুলো চলে যাবে অতলান্ত জলের তলায়।

গত ৫০ বছরে অ্যান্টার্কটিকায় গড়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে গেছে বলে জানায় গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপারেঞ্জা। ফলে এমন দ্রুততর উষ্ণায়ন জলবায়ু বিশেষজ্ঞসহ বিশ্ব নেতাদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশ বিজ্ঞানী জেমস রেনউইক বলেছেন, মাত্র পাঁচ বছরে আগের রেকর্ড ভেঙে দেয়া এবং নতুন রেকর্ডে আগের চেয়ে প্রায় এক ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ইঙ্গিত করছে কত দ্রুত এখানের তাপমাত্রা বাড়ছে। আর আমরা বিপদের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন ও বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement