২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সব ধরনের ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের কৌশল আবিষ্কার

সব ধরনের ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের কৌশল আবিষ্কার - ছবি : সংগৃহীত

সব ধরনের ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে পারে এমন কৌশল বের করা হয়েছে। সম্প্রতি গবেষণাগারে ইঁদুরের দেহে পরীক্ষা চালিয়ে সফল হয়েছেন কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। গবেষণাটি বাস্তবে রূপ নিলে মানব দেহের ক্যান্সারে শুধু আক্রান্ত কোষগুলোকেই মেরে ফেলবে। সুস্থ কোনো কোষকে আক্রান্ত করবে না। প্রচলিত ক্যান্সার চিকিৎসায় ক্যান্সার কোষের আশপাশে থাকা সব ধরনের কোষকেই মেরে ফেলে। ফলে রোগী বেঁচে গেলেও অন্যান্য জটিলতায় ভোগে।

বলা হচ্ছে, এ ধরনের গবেষণা এটাই প্রথম। ক্যান্সার কোষ মেরে ফেলার কৌশলটি এখনো মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হয়নি। সম্প্রতি গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার ইমিউনোলজিতে। গবেষকরা বলছেন, আগামী দিনে মানুষের ওপর চালানো পরীক্ষায় সফলতা এলে তা হবে মানব ইতিহাসের যুগান্তকারী আবিষ্কার।

তবে বাংলাদেশের ক্যান্সার চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও সাথে সাথে বলেছেন, গবেষণাগারে ইঁদুরের দেহে এমন গবেষণা প্রায়ই হয়ে থাকে। পরে মানুষের দেহে এসব গবেষণা সফল হয় না বলে এগুলো গবেষণাগার থেকে বের হয়ে আলোর মুখ দেখে না।

এ ব্যাপারে সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট অধ্যাপক ডা: মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলছেন, ‘গবেষণাটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি আশার কথা। মানুষের ওপর পরীক্ষায় সফল হলে এটা হবে ক্যান্সার চিকিৎসায় যুগান্তকারী আবিষ্কার। তবে বাস্তবে এটা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে কি না এখনো বলা যাচ্ছে না। কেবল আশার সঞ্চার করেছে। মানুষের ওপর পরীক্ষায় এটা সফল হলে এটা কতটা ব্যয়সাপেক্ষ হয় এর ওপরও নির্ভর করবে এটা বাস্তবায়ন হবে কি না।’ ক্যান্সারের অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে এ গবেষণা মানুষের ওপর চালিয়ে সফল হলে এটা মানব ইতিহাসে সেরা আবিষ্কারের একটি হয়ে থাকবে।

কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নতুন আবিষ্কারটির সন্ধান পান। মানব দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষ নানা ধরনের জীবানু সংক্রমণ রোধ করে। এই রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষকেও (টিউমার) ধ্বংস করে দিতে পারে; কিন্তু সুস্থ কোষ অক্ষত থাকবে। এগুলোকে ‘টি সেল’ নামে অভিহিত করা হয়। কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, টি সেল শরীরে কোনো জীবাণু প্রবেশ করলে প্রথমে তা শনাক্ত করে এবং পরে সংক্রমণকারী কোষগুলোকে আক্রমণ করে সেগুলোকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করে। এটাকে এভাবে বলা যায়, ‘টি সেল’ মানব দেহে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সংক্রমণকারী জীবাণু স্ক্যান করে এবং জীবাণু শনাক্ত করে তা ধ্বংসের চেষ্টা করে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেহে টি সেলের সাথে আরো রয়েছে ‘বি সেল’ নামক আরেক ধরনের কোষ। বি সেল দেহে কোনো জীবাণু পেলে সেগুলোকে রক্তে ছুড়ে দেয় সেখানে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য; কিন্তু টি সেল জীবাণু পেয়ে সেগুলোকে রক্তে নিক্ষেপ না করে নিজেই সেগুলোকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করে। একেক ধরনের টি সেল একেক ধরনের জীবাণু ধ্বংস করে। টি সেল নির্দিষ্ট ধরনের জীবাণু ধ্বংস করে আবার অন্য ক্যান্সার আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করতে এগিয়ে যায়। আক্রান্ত কোষে টি সেল পৌঁছে যাওয়ার সাথে সাথেই একধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে শুরু করে। আবার একই সাথে আক্রান্ত কোষের মধ্যে ঢুকে যাওয়া টি সেলের নিজের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটে এবং তাতে টি সেলের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং সংক্রমণকারী কোষগুলোকে তখন আরো বিপুল শক্তি নিয়ে টি সেল আক্রমণ করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালের অনকোলজি সেন্টারের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন এ গবেষণা সম্পর্কে বলেন, ‘এ গবেষণাটি সফল হলে ক্যান্সার রোগীদের জন্য বেঁচে থাকার একটা উপায় হবে এবং এটা হবে চিকিৎসাক্ষেত্রে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সাফল্য।’ তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘পরীক্ষা ইঁদুরের ওপর করলেও তা মানুষের ক্যান্সার কোষ নিয়েই করা হয়েছে। এ গবেষণাটির সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে যে, এটা সব ধরনের ক্যান্সার কোষকেই ধ্বংস করতে পারবে।’

কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, প্রথমে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে রক্ত নেয়া হয়; পরে সেই রক্ত থেকে রোগ প্রতিরোধকারী ‘টি সেলগুলোকে’ পৃথক করা হয়। পৃথক শেষ হয়ে গেলে ‘টি সেলগুলোকে’ মানব দেহে ক্ষতি করে না এমন বিশেষ ধরনের ভাইরাসের মধ্যে রেখে দেয়া হয়। ভাইরাসগুলো ‘টি সেলগুলোকে’ স্বংক্রিয়ভাবে জিন সরবরাহ করে। ভাইরাসের জিন পেয়ে টি সেল আরো শক্তিশালী হয়। পরবর্তী ধাপে ‘টি সেলগুলো’ শক্তিশালী হয়ে উঠলে বিশেষভাবে এগুলোকে সংখ্যায় বাড়ানো হয়। পরে ওই শক্তিশালী হয়ে ওঠা অসংখ্য ‘টি সেল’ ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের দেহে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। যে রোগীর দেহ থেকে রক্ত নিয়ে বাইরে টি সেল শক্তিশালী করা হয় সে রোগীর দেহেই তা প্রবেশ করাতে হয়। অন্য রোগীর দেহে এটা কাজ করবে না।


আরো সংবাদ



premium cement