১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আবেদনকারীদের হাহাকার, ৩ মাসেও মিলছে না পাসপোর্ট

- সংগৃহীত

বাংলাদেশে বুধবার (২২ জানুয়ারি) ই-পাসপোর্ট কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে চলমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের বই সংকটের কারণে আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট সময়ের পর তিন চার মাসেও পাসপোর্ট মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখন পাসপোর্টের জন্য তিন লাখের বেশি আবেদন ঝুলে রয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পাসপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে স্বীকার করেন। একইসাথে তারা বলেছেন, ইতোমধ্যে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের ৪০ লাখ বই আমদানি করা হয়েছে এবং এখন কোনো সংকট নেই।

বুধবার সকালে যখন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ই-পাসপোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলছিল, তখন এর কাছেই আগারগাঁ এলাকায় পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে চোখ পড়ে কয়েক শ মানুষের ভিড়। তাদের কেউ কেউ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দিতে এসেছেন, কেউ এসেছেন পাসপোর্ট নিতে।

তবে সেই ভিড়ের একটা বড় অংশ ছিল, যারা দুই তিন মাস বা তারও চেয়ে বেশি সময় ধরে ঘুরছেন পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য। সেখানে কথা হয় ঢাকার মিরপুর এলাকার মোছা: আফসানার সাথে। দুবাইয়ে প্রবাস জীবন থেকে দেশে ফিরে তিনি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তার অভিজ্ঞতা ভাল নয়। তিনি বলছিলেন, তিন মাসেও পাসপোর্ট নিয়ে সঠিক কোনো জবাব পাচ্ছেন না এবং এদিকে তার দুবাইয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।

‘আমাকে বলেছিল, পাসপোর্ট রেডি হলে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ যাবে। কিন্তু কোনো ম্যাসেজ আসেনি। এখন তিন মাস হয়ে গেলো। আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ম্যাসেজ না পেয়ে আমি কয়েকবার পাসপোর্ট অফিসে এসে পাসপোর্ট পাওয়ার ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ পাইনি।’

সৌদি প্রবাসী মো: নাসির উদ্দিনের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার সাত দিন আগেও তার পাসপোর্টের ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু জানতে পারছেন না। তার বাড়ি কুমিল্লায় হওয়ায় তিনি সেখানে পাসপোর্ট অফিসে নবায়নের আবেদন করেছিলেন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে কুমিল্লা এবং ঢাকার পাসপোর্ট অফিসে ধর্ণা দিচ্ছেন মো: নাসির উদ্দিন।

‘আমি সেই নভেম্বরে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিয়েছি। এখন দুই মাস ২০ দিন হচ্ছে। কিন্তু আমি পাসপোর্ট পাইনি। আমি কুমিল্লা আর ঢাকা পাসপোর্ট অফিসের মধ্যে ছোটাছুঁটি করছি। আমি সৌদি আরবে থাকি। আমার সেখানকার ভিসার মেয়াদ শেষ হলে আমি মহাবিপদে পড়বো।’

প্রবাস থেকে দেশে এসে অনেকেই পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করে বিপাকে পড়েছেন। চিকিৎসা বা লেখাপড়ার জন্য বিদেশে যাবেন, তাদেরও অনেকে পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ঢাকায় পাসপোর্ট অফিসে আসা এমনই কয়েকজন বলছিলেন, পরিস্থিতির কারণে তারা অসহায়বোধ করছেন।

পরিস্থিতি সামলাতে ইতোমধ্যেই ৪০ লাখ বই আমদানি করা হয়েছে এবং এই বইয়ের সংকট নেই বলে পাসপোর্ট অধিপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন। তবে এই অধিদপ্তরের বিভিন্ন সূত্র বলছে,পাসপোর্টের বইয়ের ভিতরে আবেদনকারীর সব তথ্য দেশে ছাপানোর ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে।

১০ বছর ধরে তিনটি মেশিনে পাসপোর্টে তথ্য ছাপানো হচ্ছে। সেই মেশিনগুলোর ক্ষমতা কমে গেছে। এখন দিনে ১৫ হাজার পর্যন্ত ছাপানো যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন ২২ হাজারের বেশি আবেদন পড়ছে বা পাসপোর্টের চাহিদা আসছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলছিলেন, ২০১৫ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু করা হয়েছিল এবং সেই পাসপোর্টগুলোর মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে এখন বেশি চাপ পড়েছে।

‘বাকি আর কোনো সমস্যা নাই। আমাদের ছাপার কাজ প্রতিদিনই হচ্ছে। যাদের বিশেষ প্রয়োজন, চিকিৎসা বা শিক্ষার জন্য বিদেশ যাবেন বা যারা প্রবাসী, তাদের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জরুরিভিত্তিতে পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে।’

জেনারেল আহমেদ বলেছেন, তারা এখন পাসপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের সময়টা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদেরই অনেকে বলছেন, ই-পাসপোর্ট দেয়ার পরিধি বাড়ানো এবং মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দেয়া অব্যাহত রাখা-এই দু'টি বিষয় একসাথে চালানো বেশ কঠিন। সূত্র : বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement