১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেই ভাইরাল সুমিকে বাবার কাছে হস্তান্তর

-

গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তারকে তার বাবার রকাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার রুমে সুমির বাবা রফিকুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ হাসান সুমিকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ছাড়াও স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে আজ শুক্রবার সকাল সোয়া ৭টায় সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সুমি।ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাকে গ্রহণ করেন। এ সময় বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক তানভীর আহমেদসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সুমির দেশে ফেরার তথ্য নিশ্চিত করে তানভীর আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, তাকে আমরা তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ে পৌঁছে দিচ্ছি। সেখানে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আমাদের জেলা জনশক্তি কর্মকর্তার মাধ্যমে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে, সুমির দেখা পেতে তার স্বামী আশুলিয়ার নুরুল ইসলাম বিমানবন্দরে গেলেও স্ত্রীর দেখা পাননি। অনেকটা গোপনীয়তায় সাংবাদিকদের এড়িয়ে সুমিকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একজন কর্মকর্তার ব্যবস্থাপনায় মাইক্রোবাসে করে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে যাত্রা করে একটি টিম। এছাড়া বৃহষ্পতিবার রাতেও সৌদি আারব থেকে আরো ৮৬ জন বাংলাদেশী দেশে ফিরেছেন।

সম্প্রতি সৌদি আরবে পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ফেসবুক লাইভে এসে দেশে ফেরার আকুতি জানান সুমি আক্তার। সুমি ঢাকার আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী। তবে, তার বাবার বাড়ি পঞ্চগড়ে।

চলতি মাসের শুরুতে সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া সুমি আক্তার তার ফেসবুক লাইভে গিয়ে পাশবিক নির্যাতনের কথা জানিয়ে তাকে সেখান থেকে উদ্ধারের আকুতি জানান। ভিডিওতে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছু দিন থাকলে আমি মরে যাব।’

সুমির আকুতির ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তার স্বামী নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরই মধ্যে জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের শ্রম উইং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতায় সুমিকে তার গৃহকর্তার কাছ থেকে উদ্ধার করে। তাকে দেশে ফেরানোর জন্য বলা হলে ওই গৃহকর্তা ২২ হাজার রিয়াল দাবি করেন। না দিলে কোনোভাবেই সুমি আক্তারকে ফেরত দিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর এটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

গত রোববার জেদ্দার শ্রম আদালতে সুমির বিষয়ে শুনানি হয়। আদালত গৃহকর্তার অর্থের দাবি নাকচ করে দেয়। জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের প্রথম সচিব কে এম সালাহ উদ্দিনের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এ তথ্য জানান।

এতে বলা হয়, নাজরান শহরের শ্রম আদালতে জেদ্দা কনস্যুলেট-এর প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে সুমি আক্তারের বিষয়টি শুনানি হয়। আদালত শুনানিতে সুমির নিয়োগকর্তার দাবিকৃত ২২ হাজার সৌদি রিয়াল ফেরত পাওয়ার আবেদনটি নামঞ্জুর হয়। পাশাপাশি জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুমির কপিল তাকে দেশে ফেরার অনুমতিপত্র (ফাইনাল এক্সিট) প্রদান করেন।

জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রচেষ্টায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়নে নির্যাতিতা সুমি আক্তারকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার সকালে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশে ফেরেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement