২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ধর্মঘটে উবার চালকদের একাংশ

- ছবি : সংগৃহীত

ভাড়ার হিসেব ও কমিশন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশে উবার চালকদের একটি অংশ রোববার রাত থেকে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছেন। উবার কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশের মাধ্যমে তাদের পাওনা পরিশোধে চালকদেরকে নির্দেশ দিয়েছে এবং এই বিষয়টিই দু'পক্ষের মধ্যে মতবিরোধের একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে সেবা চালু করার পর গত দুই-আড়াই বছরে উবার চালকদের কাছ থেকে সেবা প্রদান বাবদ পাওনা অর্থ সংগ্রহ করেনি বলে চালকরা নিজেরাই জানাচ্ছেন। গত তিন মাস যাবত ওই পাওনা পরিশোধ করতে তাদের তাগাদা দেয়া হয়েছে উবারের পক্ষ থেকে।

উবার অ্যাপ বন্ধ রেখে ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন এরকম একজন চালক বলেন, সম্প্রতি চালকদের একটি বিকাশ নম্বর দিয়ে উবারের পক্ষ থেকে পাওনা অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

"অনেকের কাছে উবার ৭০-৮০,০০০ টাকাও পায়। কিন্তু আমাদের কথা হল উবার একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান - তারা তাদের বাকি চাইতেই পারে। তবে আমরা দাবি করছি কিলোমিটার আর ট্রাফিক জ্যাম হিসেব করে ভাড়া। ঢাকার ট্রাফিক জ্যামের কথা তো আপনারা সবাই জানেন।"

চালকদের দাবি, কোন রাইডে চালকের লাভ কম হলে উবার তাদের বাড়তি অর্থ দিয়ে ভাড়া সমন্বয় করে দিতো, কিন্তু সেটি তারা এখন আর দিচ্ছে না।

"আমাদের ঘণ্টা আর মিনিটের একটি হিসেব আছে," বলছিলেন আরেকজন চালক।

বিষয়টি ব্যাখা করে তিনি বলেন, "ধরেন এত ঘণ্টা বা এত কিলোমিটার চালালে একটা পরিমাণ টাকা পাবো। কিন্তু যাত্রী নিয়ে জ্যামে বসে থাকলাম, তারপর সব মিলিয়ে ভাড়ায় আমার লোকসান হলো। এই টাকাটা আগে উবার দিয়ে দিতো। তিন মাস হলো তা আর তারা দিচ্ছে না। এতে আমাদের ভাড়া কম আসছে।"

উবার চালকদের একটি অংশ সোমবার ঢাকায় মানববন্ধন করে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দাবিগুলো জানিয়েছেন। উবার তাদের কাছ থেকে আয়ের ওপর যে ২৫ শতাংশ কমিশন নেয়, সেটি কমিয়ে ১২ শতাংশ করার দাবিও করছেন তারা।

কিলোমিটার হিসেব করে ভাড়ার ব্যবস্থা এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর পর্যন্ত ট্রাফিক জ্যামও হিসেব করতে বলছেন চালকরা।

অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়া বাড়ানো এবং চালকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে চালকেরা যাত্রীর ছবি অ্যাপের অ্যাকাউন্টে দেয়া বাধ্যতামূলক করতে বলেছেন। চালকদের ছবি অ্যাপে ব্যবহার করা হলেও অ্যাপ ব্যবহারকারী যাত্রীদের এটি না করলেও চলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন চালক বলেন, যাত্রীর মতো তাদেরও নিরাপত্তা দরকার।

"যাত্রী তো আমার ছবি ও লাইসেন্স নম্বর দেখতে পায়। কিন্তু আমার গাড়িতে অন্য কেউ উঠে যাচ্ছে কিনা, সেটা আমরা কিভাবে বুঝবো? চালক খুন ও গাড়ি ছিনতাইয়ের কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে, আপনারাও নিশ্চয়ই শুনেছেন।"

যাত্রীকে পথঘাট চেনার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া এবং যাত্রীর দ্বারা গাড়ির ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণের দাবিও তোলা হয়েছে। চালকরা আরও বলছেন, যাত্রীদের করা অভিযোগ যাচাইয়ের নাম করে চালকদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া যাবে না এবং তাদের 'সঠিক জবাব' দেয়ার সুযোগ দিতে হবে।

ধর্মঘটের কারণে কী পরিমাণে যাত্রা ব্যাহত হয়েছে, তার কোন পরিসংখ্যান এখনো দেয়নি উবার। তবে এক বিবৃতিতে উবার তাদের সেবায় ব্যাঘাত ঘটার কথা জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে।

সংক্ষিপ্ত ওই বিবৃতিতে উবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, "চালক ও যাত্রীদের কল্যাণের বিষয়টি আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। কোন উদ্বেগ এবং সমস্যার বিষয় থাকলে সেটি সমাধান করার জন্য পার্টনার সেবা কেন্দ্র রয়েছে। অ্যাপে প্রতিক্রিয়া জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে।"

চালকদের বিভিন্ন দাবীর বিষয়ে কথা বলতে উবারের ঢাকা কার্যালয়ে যোগাযোগ করলেও এর বাইরে বহুজাতিক এই কোম্পানীর পক্ষ থেকে আর কোন মন্তব্য করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে , যারা নিয়মিত রাস্তায় চলাচল করেন, তাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ - উবার যার একটি।

এই সেবার ওপর মধ্যবিত্তের এক ধরণের নির্ভরতা এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে, যদিও এগুলোর সেবার মান নিয়ে বেশ অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের।

শশী বনিক ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলছেন, "ফোন করার পরে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবেন। সেটা কেন তারা জানতে চাইবেন? এছাড়া, ম্যাপে লোকেশন যেভাবে দেখায়, সেটা ফলো না করে উল্টোপাল্টা দিক দিয়ে ঘুরে যায় তাতে বেশি ভাড়া চলে আসে।"

উবার চালকেরা যাতে গন্তব্যে যাওয়ার ব্যাপারে অপারগতা জানাতে না পারেন, সেজন্যে রাইড চালু না করা পর্যন্ত তারা গন্তব্যটি দেখতে পান না।

নিয়মিত উত্তরা-বনানী যাতায়াত করা একজন যাত্রী তাসনীম নূর নামের একজন গৃহিনী অভিযোগ করলেন যে চালকদের অনেকেই ম্যাপ ঠিকঠাক মতো ফলো করতে পারেন না, ফলে প্রায়ই তাদের পথঘাট ভুল হয়।

"কিন্তু এটা ওনাদের জানা উচিত, কারণ ওনারা তো চালক।"

খুব ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানোর অভিযোগ করেন রাজেকুল ইসলাম রাজ নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, "অনেকে রাফ ড্রাইভ করেন। তখন বলতে হয় আস্তে চালান।"

উবারের যত দেশে মোটরসাইকেল সেবা রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশেই সবচাইতে বেশি "উবার মটো" রয়েছে বলে এর আগে জানিয়েছিল কোম্পানীটি।

রাইড শেয়ারিং অ্যাপ নিয়ে নানা রকম জটিলতা কাটাতে সরকারের পক্ষ থেকে গত বছরের শুরুর দিকে একটি নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জানিয়েছেন, এখনো কয়েকটি কোম্পানী অনুমোদন নেয়নি, ফলে সব গাড়ি ও কোম্পানী বিআরটিএ-র রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসেনি।

"এই কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনলে, এবং নীতিমালা বাস্তবায়ন যখন শুরু হবে, তখন আশা করি সমস্যাগুলি থাকবে না।"

ট্যাক্সিক্যাবের চেয়ে বেশি ভাড়া নিতে পারবে না রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো, তা নীতিমালায় বলা রয়েছে। তবে এর বাইরে নির্দিষ্ট করে কিলোমিটার ও সময় অনুযায়ী ভাড়ার কোন হার ঠিক করে দেয়া হয়নি।

বিআরটিএ-র এই কর্মকর্তা বলছেন, "এটি চালকদের নিজেদের ব্যাপার। কোন চালকের আগ্রহ হলে অ্যাপ ব্যবহার করবে, আগ্রহ না থাকলে যাবে না। তাদের লাভ কত, সেটি তাদেরই বিষয়।" বিবিসি বাংলা।


আরো সংবাদ



premium cement